দেহঘড়ি পর্ব-০৩১
2023-08-13 10:10:07

‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’, চীনের হাসপাতাল-পরিচিতি ‘চিকিৎসার খোঁজ’ এবং টিসিএম ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা।

 

#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা

টেনিস এলবো হলে ট্রাই করুন টিসিএম

আপনি কি কনুইয়ের বাইরের দিকে বা কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত বাহুতে ব্যথা বা প্রদাহ বোধ করছেন? এমন হলে আপনি হয়তো টেনিস এলবোতে ভুগছেন? কব্জির অতিরিক্ত ব্যবহার বা মাত্রারিক্ত নড়াচড়ার কারণে সাধারণত টেনিস এলবো হয়। টেনিস এলবো এক ধরনের টেন্ডোনাইটিস বা হাতের নরম টিস্যুতে প্রদাহ। টেন্ডোনাইটিস ঘটে যখন হাড়ের সঙ্গে পেশীকে যুক্তকারী নরম টিস্যুগুলো ছিড়ে যায় এবং ফলে প্রদাহ হয়। টেনিস খেলোয়াড়রা প্রায়ই এ সমস্যায় আক্রান্ত হন, বলে এর নামকরণ করা হয়েছে টেনিস এলবো, তবে গলফ ও ক্রিকেট খেলোয়াড়রাও এতে আক্রান্ত হন।

টেনিস এলবোর ব্যথা সাধারণত কনুইয়ের বাইরের দিকে এবং জয়েন্টের ঠিক নীচে কেন্দ্রীভূত হয়, তবে এটি হাতের নীচে ও কব্জিতেও হতে পারে। কনুই ও কব্জিতে ব্যথা ও দুর্বলতা চায়ের কাপ ধরে রাখা কিংবা কম্পিউটার মাউস ব্যবহার করার মতো দৈনন্দিন কাজ কঠিন করে তুলতে পারে।

বাইরের কনুইতে ব্যথা বা বাহুতে ব্যথা টেনিস এলবোর প্রধান লক্ষণ। এর উপসর্গগুলো সাধারণত সময়ের সাথে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে। টেনিস এলবো হলে কনুই শক্ত হয়ে যায়, বিশেষ করে সকালে এটা বেশি অনুভব করা যায়। এর ফলে কোনও কিছু ধরার শক্তি কমে যায়, বিশেষ করে চায়ের কাপ বা র‌্যাকেটের মতো বস্তু ধরার সময় ব্যথা বাড়ে।

পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতিতে টেনিস এলবোর চিকিৎসা শুরু হয় বিশ্রাম, আইসিং এবং আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেনের মতো নন-স্টেরয়েডাল প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ দিয়ে। ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকরা ব্রেস পরার পরামর্শ দেন এবং স্টেরয়েড ইনজেকশনও দিতে পারেন। টেনিস এলবোর চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার তুলনামূলকভাবে বিরল। কেবলমাত্র যখন বিশ্রাম ও ব্যথা নিরাময়ের ওষুধগুলো কাজ করে না, তখন অস্ত্রোপচারের কথা চিন্তা করা হয়।

টিসিএম অত্যন্ত কার্যকরভাবে টেনিস এলবোর ব্যথা উপশম করতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ও প্রদাহের চিকিৎসায় টিসিএম বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কাঁধ, হাঁটু, নিতম্ব, ঘাড় ও পায়ের ব্যথা উপশমে টিসিএম যেমন কার্যকর টেনিস এলবোর ক্ষেত্রেও একই রকম কার্যকর। টিসিএমে ব্যথা উপশমে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যেগুলোর মধ্যে থাকে টিসিএম ম্যাসাজ, আকুপাংচার, ইলেক্ট্রো-আকুপাংচার, মক্সিবাস্টন, কাপিং, থুই না ম্যাসেজ, ব্যায়াম এবং চীনা ভেষজ ফর্মুলেশন। এমন বহুমুখী পদ্ধতি স্বল্পমেয়াদে ব্যথা কমানোর জন্য যেমন খুব কার্যকর হয়, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুগুলোকে ঠিক করতে সাহায্য করে।

আপনি যদি টেনিস এলবোতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে ফ্লেক্স বার ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার দৈনন্দিক কাজ করা সহজ হবে। এছাড়া আপনার হাতের পেশী ও রগগুলোকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য খেলাধুলা থেকে কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিন। প্রদাহ কমতে দেওয়ার জন্য হাতকে বিশ্রাম দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন আবার খেলাধুলায় ফিরে যাবেন, তখন খেলার আগে ভালভাবে ওয়ার্ম আপ করতে ভুলবেন না।

 

#চিকিৎসার_খোঁজ

চীনের সেরা টিসিএম হাসপাতাল তুংচিমেন

তুংচিমেন হাসপাতাল চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশেষায়িত ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা-পদ্ধতি বা টিসিএম হাসপাতাল। বেইজিং ইউনিভার্সিটি অব চাইনিজ মেডিসিনে (বিইউসিএম) অধিভুক্ত এ হাসপাতাল দেশে-বিদেশে সুপরিচিত তার দীর্ঘ ইতিহাস, মর্যাদাপূর্ণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং অসধারণ চিকিৎসা দক্ষতার জন্য। কয়েক প্রজন্মের চিকিৎসকদের নিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম সেরা ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা কেন্দ্র, যেটি ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে পাশাপাশি চিকিৎসা পেশাজীবীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।

দ্য ফার্স্ট স্কুল অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন নামে পরিচিত তুংচিমেন হাসপাতাল চীনের শীর্ষ-ধাপের একটি প্রথম-শ্রেণীর টিসিএম জেনারেল হাসপাতাল। এক ছাদের নিচে এখানে গড়ে উঠেছে চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

এ হাসপাতালে কর্মরত উন্নত চিকিৎসা দক্ষতার কারণে দেশে-বিদেশে সমাদৃত জ্যেষ্ঠ টিসিএম চিকিৎসকদের একটি দল, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা-সমৃদ্ধ মাঝবয়সী চিকিৎসকদের একটি দল এবং শক্তিশালী চিকিৎসা পটভূমি ও ভবিষ্যতদর্শী অসামান্য তরুণ চিকিৎসদের একটি দল। টিসিএম’র সাহায্যে চিকিৎসাযোগ্য সব রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় এই হাসপাতালে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ হাসপাতালটি বিইউসিএম’র স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্লিনিকাল প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিশ্বের অনেক দেশ ও অঞ্চলের জন্য হাজার হাজার চমৎকার টিসিএম চিকিৎসক এবং বহু সংখ্যক অসামান্য টিসিএম পেশাদারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।

 

ডেঙ্গু মোকাবিলায় কী করবেন?

বাংলাদেশে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায়, ডেঙ্গুজ্বর মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি হিসাব বলছে, চলতি বছরেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে মারা গেছে কমপক্ষে ৩৭৩জন। এত মানুষ আক্রান্ত হওয়া এবং এত প্রাণহানির কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম এ রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন পর্যায়ে সচেতনতার অভাব। আজকে আমরা জানিয়ে দেবো ডেঙ্গুজ্বর কেন হয়, এর লক্ষণ কী, এ রোগ হলে কী চিকিৎসা নিতে হবে, এবং এটা প্রতিরোধে কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে:

ডেঙ্গুজ্বর কেন হয়:

ডেঙ্গুজ্বর এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত একটি রোগ, যার প্রকোপ দেখা যায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। ডেঙ্গুজ্বর থেকে আরোগ্য লাভের জন্য দুই থেকে সাত দিন লাগে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নেয়, যাকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর বলা হয়। এমন রূপ নিলে রক্তক্ষরণ হয়, রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়। এসব ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে।

লক্ষণ:

ডেঙ্গুজ্বরের প্রধান লক্ষণগুলো হলো তীব্র জ্বর, অতিরিক্ত মাথা ব্যথা, চোখের চারপাশে ব্যথা, পেশিতে ও হাড়ের গিঁটে ব্যথা, বমি ও বমি বমি ভাব, ত্বকে লাল ছোপ ছোপ দাগ, এবং নাক দিয়ে রক্তপাত। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম ১০ দিনের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়, যদিও শারীরিক অবস্থাভেদে কিছু ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগে।

চিকিৎসা:

ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করাতে হবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে আর সে মোতাবেক ওষুধ ও পথ্য নিতে হবে। ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে কখনো নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া উচিত না। তাছাড়া অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ থেকে একদম দূরে থাকতে হবে। কারণ এ ধরনের ওষুধ রক্ত পাতলা করে দেয়, যার ফলে ডেঙ্গুজ্বর আরও জটিল রূপ ধারণ করে।

পথ্য:

ডেঙ্গুজ্বর হলে বেশি করে তরল খাবার খাওয়া উচিত, যেমন পানি, আখের রস, খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, গ্রিন টি, কমলালেবুর জুস ইত্যাদি। এসময় বেশি পরিমাণে শাকসবজি ও ফল খেতে হবে এবং তেল ও মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। শরীর প্রয়োজনীয় প্রোটিন পাচ্ছে এটা নিশ্চিত করতে মাছ, মাংস, ডিম ও পনিরজাতীয় খাবার খেতে হবে।

অন্য সতর্কতা:

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও একথা ভীষণভাবে সত্যি। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। জানিয়ে দিচ্ছি ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী কী করবেন সে সম্পর্কে:

•     ঘিঞ্জি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় না থাকার চেষ্টা করুন

•     বাড়িতে মশারি, মশা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করুন

•     বাইরে যাওয়ার সময় ফুলহাতা জামা ব্যবহার করুন

•     মোজা পরুন

•     জানালায় নেট লাগান

•      যথাসম্ভব বেশি দরজা জানালা বন্ধ করে রাখুন

‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।