"৪৫ কিলোমিটার সরিয়ে নেওয়ার" গল্প
2023-08-11 19:59:26

আগের অনুষ্ঠানে আমরা "লুই শি ছুন ছিউ" গ্রন্থে লিপিবদ্ধ চিন ওয়েন কংয়ের যুদ্ধ না-করেই ইউয়ান অঞ্চল জয়ের গল্প বলেছিলাম। আজ আমরা চীনের "বিশ্বস্ততা ও ন্যায়পরায়ণতার ধারণা" আরও ভালোভাবে বোঝানোর জন্য, চিন ওয়েন কংয়ের "৪৫ কিলোমিটার সরিয়ে নেওয়া" শীর্ষক আরেকটি গল্প বলব।

নির্বাসনে থাকাকালীন ছু-এর রাজা তাঁর প্রতি যে উদার আচরণ করেছিলেন তা শোধ করার জন্য, চিন ওয়েন কং ছু-এর রাজাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে যদি দুটি দেশের যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা হয়, তবে তিনি নিজের বাহিনীকে ‘সান শে’ তথা ৪৫ কিলোমিটার পিছনে সরিয়ে নেবেন। পরে, চিন সত্যিই ছু’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং চিন রাজাকে দেওয়া তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করে ৪৫ কিলোমিটার দূরে নিজের সৈন্যদে সরিয়ে নেন। তবে, তিনি কম সৈন্য নিয়ে বেশি সৈন্যের ছু’কে পরাজিত করেছিলেন। এর মাধ্যমে ছু-এর উত্তরে যাওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তারপর থেকে, চিন রাজ্যের উত্থান, সম্রাট চৌ শিয়াং ওয়াংয়ের সমর্থনের ফলে সকল রাজারা চিন রাজ্যের অধীনে থাকা শুরু করে।

চিন ওয়েন কং’য়ের "৪৫ কিলোমিটার সরিয়ে নেওয়ার" গল্পটি চীনের ইতিহাসে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। সবাই জানে যে, যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ের সুযোগ ক্ষণে ক্ষণে হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু চিন ওয়েন কং সত্যিই যুদ্ধক্ষেত্রে তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছিলেন শুধুমাত্র রাজা ছু’কে দেওয়া ভদ্রলোকের প্রতিশ্রুতির কারণে। চিন ওয়েন কং তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, একদিকে যুদ্ধ জয়ের জন্য নৈতিক সমর্থন অর্জন করেছিলেন, অন্যদিকে দেশ-বিদেশের মানুষের মন জয় করেছিলেন। চীনারা বিশ্বাস করে যে, যুদ্ধে বিজয় প্রধানত তিনটি দিক থেকে বিচার করা হয়: আবহাওয়া বা সময়কাল, ভৌগোলিক অবস্থান এবং জনগণের সমন্বয়। তিনটির মধ্যে, মেনসিয়াস বিশ্বাস করতেন যে, "সঠিক সময় সঠিক অবস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং সঠিক অবস্থান জনগণকে সমন্বয় করার মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়।" চিন ওয়েন কং জনগণকে "ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও শিষ্টাচার" শিখিয়েছিলেন। তিনি উচ্চ নৈতিকতার চর্চা, অসামান্য সামরিক মান, এবং কৌশলগত জ্ঞানের মাধ্যমে রাজ্য পরিচালনা করতেন। অতএব, ছু-এর সাথে যুদ্ধের সময়, চিনের রাজা, মন্ত্রী, সেনাপতি, সৈন্য এবং বেসামরিক ব্যক্তিরা মিলেমিশে একত্রে কাজ করেছিলেন, একত্রে পরিকল্পনা করেছিলেন ও বাস্তবায়ন করেছিলেন। তাই ছু, ছেন ও ছাইয়ের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হন এবং চিন শক্তিশালী দেশ হয়ে ওঠে।

প্রাচীন চীনারা বিশ্বাস করতেন: "মানুষ বিশ্বস্ততা ছাড়া দাঁড়াতে পারে না, এবং বিশ্বস্ততার অভাবে একটি দেশের পতন ঘটবে।" অতীতে আন্তর্জাতিক বিনিময়ে, পারস্পরিক আস্থা ছিল দেশগুলোর মধ্যে বিনিময় ও সহযোগিতার ভিত্তি ও পূর্বশর্ত এবং একটি আন্তর্জাতিক নিয়মও বটে। পারস্পরিক বিশ্বাস দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার বিকাশকে উত্সাহিত করে এবং সহযোগিতা দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ককে সুসংহত করে। বিশেষ করে, প্রধান দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় নেতৃত্ব দেওয়া উচিত এবং ব্যতিক্রমীতায় জড়িত না হওয়া উচিত; বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আস্থা-ভিত্তিক কূটনীতি হল চীনের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি এবং এটি অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। চীন হল বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ। এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বজায় রাখা এবং বিকশিত করা কেবল চীনের কূটনীতির ঐতিহ্যই নয়, এটি চীনের কূটনৈতিক নৈতিকতা ও জাতীয় স্বার্থের একটি সংযোগ। চীন সবসময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও  আন্তরিক অংশীদার, যা চীনের পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। চীন প্রতিশ্রুতি দেয় যে, জাতিসংঘে তাঁর ভোট সবসময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে থাকবে এবং এটি তার নিজস্ব উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক অবস্থার উন্নতির কারণে পরিবর্তন হবে না। উদাহরণস্বরূপ, নতুন যুগে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার জন্য, চীনের আফ্রিকানীতিতে "আন্তরিকতা, বাস্তবতা, ঘনিষ্ঠতা ও সততা"-র ধারণা সামনে আছে। আফ্রিকান বন্ধুদের সাথে "আন্তরিকতার সাথে আচরণ করা", "বাস্তবতার" ভিত্তিতে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়া, ‘ঘনিষ্ঠতা’র সাথে চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করা, এবং "সততা"-র ভিত্তিতে সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা চীনের নীতি। এই সঠিক ধারণার আলোকে, চীন ও আফ্রিকার সম্পর্ককে একটি বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে দু’পক্ষ। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে রাজনৈতিক সমতা ও পারস্পরিক আস্থা, অর্থনৈতিক জয়-জয় সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষা, নিরাপত্তায় একে অপরকে সাহায্য করা এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে সংহতি ও সহযোগিতা "পাঁচটি স্তম্ভ"। চীন আফ্রিকার দেশগুলোর স্ব-উন্নয়ন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, এবং একসাথে উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে।

বিশ্বস্ততা ও ন্যায়পরায়ণতা হল মানুষ এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের সুরেলা ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি। তাই, প্রাচীন চীনারা বিশ্বাস করতেন, বিশ্বের সবকিছুর গতিবিধি "বিশ্বস্ততা" অনুসারে পরিচালিত হতে হবে, মানুষও এর ব্যতিক্রম নয়। যারা বিশ্বস্ততা ও ন্যায়পরায়ণতাকে মূল্য দেয়, তারা সফল হয় এবং যারা বিশ্বস্ততা ও ন্যায়পরায়ণতাকে মূল্য দেয় না, তারা ধ্বংস হয়। (ইয়াং/আলিম/ছাই)