সম্প্রতি বাংলাদেশে চীনা দূতাবাস একটি অভ্যর্থনা-সভার আয়োজন করে। এতে ২০২৩ সালে চীনের সরকারি বৃত্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভর্তির চিঠি বিতরণ করা হয়।
সভায় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের দুই দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার ‘উজ্জ্বল সেতু’ বলে আখ্যায়িত করেন। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে চীনের সরকারি বৃত্তি পেয়েছেন মোট ৫৫ জন শিক্ষার্থী; তাঁরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে চীনে পড়াশোনা করবেন।
“সভ্যতা বিনিময়ের মাধ্যমে রঙিন হয়; সভ্যতা পারস্পরিক শিক্ষার মাধ্যমে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হয়।” ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ইউনেস্কোয় বক্তৃতা দেওয়ার সময় এ কথা বলেছিলেন। ভালোভাবে চীনের গল্প বলা, ভিন্ন সভ্যতার সুষম সহাবস্থান নিশ্চিত করা, সভ্যতার বিনিময়ের মাধ্যমে চীন ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণের মৈত্রী জোরদার করা, এবং বিশ্বের শান্তি রক্ষা করা হচ্ছে চীন সরকারের কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বস্তুত, মানুষ হচ্ছে বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম। আর, শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। চীন একটি উন্মুক্ত দেশ; বরাবরই বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের দেশ। আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময় ত্বরান্বিত করার জন্য চীন সরকার ও কিছু শিক্ষাসংস্থা বিদেশী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে আসছে নিয়মিত। তাদের সমর্থনে বিদেশী শিক্ষার্থীরা চীনে লেখাপড়া ও গবেষণার সুযোগ পাচ্ছেন।
চীন সবসময় উন্মুক্ত মনোভাব নিয়ে বিশ্বের সঙ্গে সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিনিময় করে আসছে। অন্যদিকে, মার্কিন তথ্যমাধ্যমের খবর অনুসারে, বর্তমানে চীনে অধ্যায়নরত মার্কিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩৫০ জন। আর যুক্তরাষ্ট্রে চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখেরও বেশি। বিদেশী শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ দূত। তাঁরা শুধু জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেন না, বরং দু’দেশের মধ্যে মৈত্রীও জোরদার করেন। বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের ভারসাম্যহীনতা লক্ষণীয় একটি সমস্যা। এমন ভারসাম্যহীনতা শুধু সংখ্যার নয়, বরং দু’দেশের উপলব্ধির মধ্যেও প্রতিফলিত হয়।
চীনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নস এর জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, দু’দেশের তরুণ-তরুণীদের পারস্পরিক বোঝাপড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন শিক্ষার্থীদের চীনা ভাষা শেখা ও চীনের জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো তাদেরকে চীনের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সাহায্য করতে পারে। ভবিষ্যতে তাঁরা বেসরকারি সংস্থা বা সরকারি সংস্থায় কাজও করতে পারেন ও দু’দেশের সহযোগিতায় সক্রিয় অবদান রাখতে পারেন।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শিক্ষার্থী বিনিময়ে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এমন অবস্থা শুধু দু’দেশের তরুণ-তরুণীদের বিনিময়কে বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার পথেও বাধা সৃষ্টি করছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দশ বছর আগে চীনে মার্কিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার। বর্তমানে তা অনেক কম। এদিকে, চীনের বিশ্ববিদ্যালয় ও বৃত্তি আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, চীনের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা ও লেখাপড়ার পরিবেশ বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছে।
যদিও বর্তমানের পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং, তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শিক্ষার্থী বিনিময় বাড়ানো দরকার। বিষয়টা শুধু ব্যক্তিগত অর্জন ও উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত নয়, বরং তা দু’দেশের জনগণের উপলব্ধি ও মৈত্রী জোরদার করতে পারে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন ও ভবিষ্যতের সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করতেও এটি জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, আমাদের উচিত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের শক্তিতে আস্থা রাখা।
চীনের দরজা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা আছে। উন্মুক্তকরণের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে, চীন সক্রিয়ভাবে বিশ্বের সঙ্গে বিনিময় বাড়াচ্ছে এবং বিদেশীদের ক্রমবর্ধমান হারে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময় ত্বরান্বিত হচ্ছে, আরও বেশি মানুষ ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছে, যা বিশ্বের বহুমুখী উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে পারে।
চীনের কাছে, বিদেশে যাওয়া চীনা শিক্ষার্থীরা দেশের সংস্কৃতিকে সাথে করে নিয়ে যায় এবং অন্য দেশের সভ্যতাকে ফেরার পথে সাথে করে চীনে নিয়ে আসে। আর চীনে অধ্যায়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীরা চীনের সভ্যতা সম্পর্কে জানতে পারে, নিজ দেশের সংস্কৃতিকে চীনে ছড়িয়ে দিতে পারে, নিজ দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। বস্তুত, উন্মুক্ত মনোভাব নিয়ে, বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে দেয়া-নেয়া বাড়াতে চীন সবসময় সচেষ্ট আছে। (শুয়েই/আলিম)