চলতি বাণিজ্যের ৩০তম পর্ব
2023-08-11 17:01:25

চলতি বাণিজ্যের ৩০তম পর্বে থাকছে:

১. পরিবেশ বান্ধব জ্বালানী: ‘গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট’ ইস্যু করবে চীন

২. আন্তর্জাতিক মানের পণ্য তৈরি করবে ব্রাজিল ও চীনের দুই হোম অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানি

৩. চীনে কার্বন নিরপেক্ষতা প্রকল্প চালু করলো এবিবি

 

পরিবেশ বান্ধব জ্বালানী: ‘গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট’ ইস্যু করবে চীন

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: পরিবেশ বান্ধব জ্বালানী উৎসাহিত করতে এবার ‘গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট’ ইস্যু করবে চীন। কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার ও উৎপাদন করছে কী না তার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে এই ‘গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট’।  চীনের ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন –এনইএ বলছে, এর মাধ্যমে শিল্পে কম কার্বন নিঃসরণ নিশ্চিত করার স্থানান্তর প্রক্রিয়া সহজ হবে।

দীর্ঘদিন ধরেই কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ নিয়ে আসছে চীন। ফলে বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রতিষ্ঠানেও পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার উৎসাহিত করে আসছিলো চীন সরকার। এর প্রভাবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হরহামেশাই চোখে পড়বো নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের নানা কার্যক্রম।

বিশেষ করে বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়বে উইন্ড, সোলার, বায়োমাস, জিওথার্মাল ও ওশান এনার্জির ব্যবহার। আবার পিছিয়ে নেই পানির স্রোত ব্যবহার করে হাইড্রোপাওয়ার, বাতাসের শক্তিকে ব্যবহার করে উইন্ড পাওয়ার কিংবা কেন্দ্রীয় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের নানা প্রচেষ্টা। এবার এই উৎসাহকে রীতিমত স্বীকৃতির পর্যায়ে নিয়ে গেছে চীন সরকার। প্রবর্তন করা হচ্ছে ‘গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট’। চীনের ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন –এনইএ বলছে, প্রতিটি গ্রিন সার্টিফিকেটের বিপরীতে অন্তত ১ হাজার কিলোওয়াট-ঘণ্টা পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সংস্থাটির নবায়নযোগ্য জ্বালানী বিভাগের উপপরিচালক ওয়াং তাপেং জানান, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকেই এই সনদের সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

 

ওয়াং তাপেং, উপ-পরিচালক, নবায়নযোগ্য জ্বালানী বিভাগ, এনইএ

“কোন প্রকল্পে যখন গ্রিন এনার্জি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে তখনই গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ এই সার্টিফিকেট দেবে। এটা নির্ভর করবে গ্রিডে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ যুক্ত হচ্ছে তার উপর। গ্রিনপাওয়ার সার্টিফিকেট ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করা যাবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই গ্রিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে চায় তারা এখান থেকে কিনতে পারবে। এটার মাধ্যমে প্রমাণ করাও যাবে যে তারা পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।“

 

ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, চায়না গ্রিন ইলেক্ট্রিসিটি সার্টিফিকেট ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম, বেইজিং পাওয়ার ট্রেডিং সেন্টার এবং কুয়াংচৌ পাওয়ার ট্রেডিং সেন্টার, এই ৩টি প্ল্যাটফর্মে গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট ট্রেডিং করতে পারবেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ক্রেতা-বিক্রেতারা। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা, তালিকাভুক্তিকরণ ও কেন্দ্রীয়ভাবে নিলামে অংশহগ্রহণ করে এই পরিবেশবান্ধব জ্বালানীর উৎপাদনকারী কিংবা ব্যবহারকারীরর সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও ইন্সটিটিউট, বহুজাতিক কোম্পানি এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রফতানিমুখী শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং উদ্যোক্তাদের এই নবায়নযোগ্য জ্বালানী কিনতে এবং তার বিনিময়ে সনদ সংগ্রহের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে চীন সরকার।

এদিকে চীন সরকারের নীতি অনুযায়ী বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠান জ্বালানী-ভর্তুকি সুবিধা নিয়েছে তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। গেল মাসে এনইএ প্রকাশিত সবশেষ তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের পরিমাণ ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন কিলোওয়াট ছাড়িয়ে গেছে যা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের চেয়েও বেশি।

 

ভিনদেশে চীন:

আন্তর্জাতিক মানের পণ্য তৈরি করবে ব্রাজিল ও চীনের দুই হোম অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানি

চীন আন্তর্জাতিক বেতার: আন্তর্জাতিক মানসম্মত পণ্য তৈরির লক্ষ্যে ব্রাজিলিয়ান হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসইএমপি’র সঙ্গে চুক্তি করেছে চীনের জায়ান্ট ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান টিসিএল। ব্রাজিলের এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে নজর দিয়েছে চীনের প্রযুক্তি কোম্পানী।

সম্প্রতি দক্ষিণ চীনের শেনচেনে সাক্ষাৎ করেন ব্রাজিলিয়ান হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসইএমপি এবং চীনের জায়ান্ট ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান টিসিএল। দুই কোম্পানির প্রধানরা ভবিষ্যত কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন।

ব্রাজিলের জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান এসইএমপি গ্রুপের চেয়ারম্যান, ৯৪ বছর বয়সী আফনসো ব্র্যান্ডাও হেনেল। আন্তর্জাতিক মানের রেডিও ও টেলিভিশন তৈরিতে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। সম্প্রতি চীনের টেক জায়ান্ট ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান টিসিএলের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে এসইএমপি। যৌথভাবে আরো মানসম্মত পণ্য তৈরি করবে তারা।সম্প্রতি দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা আকাশে উড়ে ব্রাজিল থেকে চীনের প্রযুক্তি কেন্দ্রে পৌঁছেছেন হেনেল। সাক্ষাৎ করেন টিসিএলের প্রধান লি তংশেংয়ের সঙ্গে। বৈঠকের উদ্দেশ্য সহযোগিতার সম্পর্ক বাড়ানো এবং ফটোভোলটাইক বা পিভি সেক্টরে ব্যবসা বিকশিত করা।

১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রাজিলের এই প্রতিষ্ঠান দেশীয়ভাবে তৈরি রেডিও এবং টেলিভিশন তৈরি করে। টিসিএল এবং এসইএমপির এর মধ্যে সহযোগিতা শুরু হয় ২০১৬ সালে। এরপর যৌথ ব্র্যান্ডের টিভি সেটগুলো বাজারে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।

হেনেল বলেন, চীন এবং ব্রাজিলের মধ্যে ব্যবসার সুযোগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্রাজিলের মার্কেটে যৌথ ব্রান্ডের পণ্যগুলো এখন দারুণ জনপ্রিয়। তিনি আশা করেন, সামনের দিনগুলোতে চীনের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক আরো মজবুত হবে। মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করতে ভালো কিছু পণ্য তৈরী করতে এই দুই প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে।

প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনে কার্বন নিরপেক্ষতা প্রকল্প চালু করলো এবিবি

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: ফুচিয়ানে কার্বন নিরপেক্ষতা প্রকল্প চালু করলো সুইস টেকজায়ান্ট এবিবি। এই প্রকল্পের লক্ষ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কার্বন উৎপাদনকে শূন্যে নামিয়ে আনা। কোম্পানিটি বলছে, তাদের ১ লাখ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে স্থাপন করা সৌরপ্যানেল থেকেই কার্বন নিঃসরণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম। এর মাধ্যমে বছরে প্রায় ১৩ হাজার ৪শ’ টন কার্বন নিঃসরণ কমবে বলেও জানায় তারা।

মিশন জিরো। দৃষ্টিকাড়া এমন শিরোনামের প্রকল্প চালু করেছে চীনের বাজারে কার্যক্রম চালানো সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবিবি।

এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনার স্মার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, স্মার্ট সমন্বিত জ্বালানী সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি অটোমেশন ব্যবস্থা, আই-বাস লাইটিং কন্ট্রোল সিস্টেম এবং বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চার্জার নিয়েও কাজ করবে তারা।

সম্প্রতি চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের সিয়ামেন শহরে স্থাপন করা কার্বন নিরপেক্ষতা বিষয়ক এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। সুইজারল্যান্ডের এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের লক্ষ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কার্বন উৎপাদনকে শূন্যে নামিয়ে আনা।

এবিবি জানায়, সোর্স-গ্রিড-স্টোরেজ-লোডের নিয়ন্ত্রণকে সুনিপুন করার মাধ্যমে স্মার্ট মাইক্রোগ্রিড কার্যক্রম চালু করেছে তারা। বিশেষ করে ভবনের ছাদে ১ লাখ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে সৌরপ্যানেল। এটির মাধ্যমে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে সক্ষম হচ্ছে বলেও জানানো হয়। এবিবি আরও জানায়, এই সৌর প্যানেলের কার্যক্রমের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১৩ হাজার ৪শ’ টন কার্বন নিঃসরণ কমাতে সক্ষম হচ্ছে।

সুইজারল্যান্ডের এই বিদ্যুৎ ও অটোমেশন গ্রুপ জানায়, এরইমধ্যে তারা চীনে পুরো মাত্রায় ব্যবসায়ীক কার্যক্রম শুরু করেছে। এর পাশাপাশি ব্যবসার গতি-প্রকৃতি বুঝতে ও উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গঠন করেছে গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ। আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন বিভাগ, বিপণন বিভাগ ও সেবা বিভাগ। সব মিলিয়ে কোম্পানিটি চীনের প্রায় ১৩০টি শহরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং এতে কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার মানুষের।