অগাষ্ট ১১: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের সেমিকন্ডাক্টর ও মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স এবং কোয়ান্টাম তথ্যপ্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ সীমিত রাখতে সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এটি প্রায় এক বছর পর কার্যকর হবে; বাইডেন প্রশাসন জনগণের প্রতিক্রিয়া নেবে এবং এই সময়ের মধ্যে সমন্বয় করবে। আসলে এটি একটি খারাপ খবর। এটি ঝুঁকিমুক্তির অজুহাতে ‘ডিকপলিং ও ব্রেকিং চেইন’-এ জড়িত হওয়া, যা বিশ্বে অস্বস্তি বয়ে আনবে।
মার্কিন অর্থনৈতিক মহল সময়মতো উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। আমেরিকান সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি সমিতি মতামত দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। সমিতিটি আশা করে, চূড়ান্ত নিয়ম ইউএস চিপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীনসহ মূল বিশ্ব বাজারে অ্যাক্সেসের অনুমতি দেবে। জাতীয় ঝুঁকি বিনিয়োগ সমিতিও গভীর মনোযোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, এই নির্বাহী আদেশ অনেকটা ‘রাজনৈতিক কৌশলের’ মতো। ‘চীনকে দমন করার’ চিন্তার আওতায়, চীনের প্রতি কঠোর হওয়াকে ওয়াশিংটন "রাজনৈতিক সঠিকতা" বলে অভিহিত করেছে। এদিকে, আগামী বছরে মার্কিন নির্বাচন হবে। বাইডেন প্রশাসন প্রচারের একটি মাধ্যম হিসেবে চীনকে দমন করার কাজ করছে বলে অনেকে মনে করেন।
কিছুদিন আগেই আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি ফিচ যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্রেডিট রেটিং কমিয়েছে। এবার যদি যুক্তরাষ্ট্র চীনে বিনিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে, তাহলে নিজের অর্থনীতির ক্ষতি হবে।
আমেরিকান পুঁজির দৃষ্টিকোণ থেকে, এই নির্বাহী আদেশ তাদেরকে ‘উদ্ভাবনের উৎস’ চীন থেকে বিচ্ছিন্ন করবে। পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনের সকল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানির এক-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করে। বিশ্লেষকরা বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধন প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে শীঘ্রই অন্যান্য দেশের মূলধন পূরণ করা যাবে। ‘দা নিউইয়র্ক টাইমস’-এর খবরে বলা হয়, চীনের পূঁজির অভাব নেই। অথচ চীনের বাইরে মার্কিন পুঁজির জন্য একই ধরনের উচ্চ-রিটার্ন বাজার খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। ইন্টেল কর্পোরেশনের সিইও প্যাট্রিক গেলসিঞ্জার (Patrick Gelsinger) বলেন, যে-কোনো নীতি বা নিষেধাজ্ঞা, যুক্তরাষ্ট্রের উত্পাদন এবং গবেষণা ও উন্নয়নে আমাদের বিনিয়োগ করার ক্ষমতা হ্রাস করবে।
এ ছাড়া, যদি এ নিষধাজ্ঞা কার্যকর হয়, তাহলে অবশ্যই বিশ্বের শিল্প ও সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিছু উন্নত চিপ উৎপাদনে হাজারটিরও বেশি প্রক্রিয়া জড়িত ও সম্পূর্ণ করতে ৭০টিরও বেশি আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র বাজারের নিয়ম লঙ্ঘন করে এ পথে অগ্রসর হলে নিজেরও ক্ষতি করবে। বিশেষ করে, চীন হলো বিশ্বের বৃহত্তম চিপ বাজার। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো চীন ত্যাগ করলে, তাদের স্বার্থের ক্ষতি হবে। সেজন্য গত জুলাই মাসে ইন্টেল, কোয়ালকম, এনভিডিয়াসহ বিভিন্ন মার্কিন চিপ কোম্পানির নির্বাহীরা যৌথভাবে মার্কিন সরকারের চীনে চিপ রপ্তানি সীমিত করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
পাশাপাশি, মার্কিন সরকার চীনে বিনিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যা আবারও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বাইডেন বারবার চীনের কাছ যুক্তরাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন না-করার কথা বলে আসছে এবং চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা দেওয়ার কোনো অভিপ্রায় না-থাকার কথাও বলেছে। কিন্তু বাস্তবে মার্কিন সরকার চীনে বিনিয়োগ সীমিত করা ও চীনের উচ্চ-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নকে দমন করার চেষ্টা করছে। আর এর মাধ্যমে এই প্রশাসন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।
অর্থনৈতিক অপারেশনের নিজস্ব নিয়ম আছে। রাজনৈতিক পদ্ধতিতে একে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলন গত মাসে প্রকাশিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০২৩’-এ বলেছে, ২০২২ সালে আগের বছরের তুলনায় বিশ্বব্যাপী বিদেশী বিনিয়োগের মোট পরিমাণ ১২ শতাংশ হ্রাসের প্রেক্ষাপটে চীনে বিদেশী বিনিয়োগ ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি চীনা বাজারের আকর্ষণক্ষমতা প্রমাণ করে এবং অর্থনীতিতে মার্কিন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অনিবার্য পরিণতিও ঘোষণা করে। (ছাই/আলিম)