উনত্রিশ জুলাই ছেংতু সামার ইউনিভার্সিয়েডের উশু বা মার্শাল আর্ট-সংক্রান্ত পুরুষদের সাউদার্ন ফিস্ট প্রতিযোগিতায় চীনা দলের খেলোয়াড় ছাও মাও ইউয়ান ৯ দশমিক ৭৭০ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ান হন। এর মধ্য দিয়ে তিনি এবারের সামার ইউনিভার্সিয়েডের প্রথম স্বর্ণপদক জয়ী হিসাবে আবির্ভূত হন।
প্রতিযোগিতার পর ছাও মাও ইউয়ান তার ক্রীড়াজীবনের প্রথম কোচ হুয়েন চিন উই’র সঙ্গে ভিডিও মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। কোচ তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এটি তার ২০ বছরেরও বেশি সময়ের পরিশ্রমের ফল। আনন্দাশ্রুতে ভাসা ছাও মাও ইউয়ান কোচকে স্যালুট দেন।
উশু ইতোমধ্যেই ছাও মাও ইউয়ানের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ২৫ বছর বয়সী ছাও মাও ইউয়ান সি ছুয়ান প্রদেশের নেয় চিয়াং শহরের উই ইউয়ান জেলার একটি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ৫ বছর বয়সে তিনি উশু শিখতে শুরু করেন। চলচ্চিত্র ও টিভি নাটক দেখার সময় অন্য ছোট বাচ্চাদের মতো তিনিও উশুর প্রতি ভালবাসা ও কৌতূকপূর্ণ থাকতেন।
ছাও মাও ইউয়ান স্মৃতিচরণ করে বলেন, “ছেলেবেলায় যখন আমি চ্যাকি চান ও ব্রুস লি’র মুভি দেখতাম, তখন একজন বীর বা মার্শাল আর্ট মাস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম।”
তিনি জানান, তার বাবা একজন ট্রাকচালক। ছোটবেলায় তিনি একবার বাবার সঙ্গে ট্রাক মেরামত করাতে যান এবং দেখেন যে, মেরামত দোকানের মালিকের ছেলে অপেশাদার ক্রীড়া স্কুলে উশু চর্চা করছে। ছাও মাও ইউয়ানও উশুতে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। বাবা কন্যার ভাবনা সম্পর্কে জানার পর উশু শিখার জন্য তাকে শিশুদের ক্রীড়া বিদ্যালয়ে ভর্তি করান।
শক্ত শারীরিক গঠন এবং স্পষ্ট পেশীর রেখার কারণে ছাও মাও ইউয়ানকে ওজন কমানোর সঙ্গে যুক্ত করা কঠিন বলে মনে হয়। এই ক্রীড়াবিদ বলেন, “ওজন কমানোর জন্য আমি প্রথমে মার্শাল আর্ট শিখতে চেয়েছিলাম। ছোটবেলা থেকেই আমি ভোজনপ্রিয়। কিন্ডারগার্টেনে থাকার সময় আমি সাত-আট বাটি পোরিজ খেতে পারতাম। আমি যদি মার্শাল আর্ট অনুশীলন না করতাম, তাহলে আমার ওজন এখন হয়তো একশ’ কেজিরও বেশি থাকতো।”
ক্রমাগত শেখার প্রক্রিয়ায় ছাও মাও ইউয়ান নিজেকে মার্শাল আর্টের প্রতি ভালবাসায় পূর্ণ দেখতে পান। কোচও বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি অত্যন্ত প্রতিভাবান। তিনি প্রতিদিন বাসে করে মার্শাল আর্ট শিখতে নিজ এলাকা থেকে জেলায় যেতেন এবং তারপর অনুশীলন শেষ করার পর জেলা থেকে বাসে করে আবার বাড়িতে ফিরতেন। পরের দিন আবার তাকে স্কুলে যেতে হতো। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্শাল আর্ট শেখার পর তিনি যাতে আগামী দিনগুলোতেও ভালোভাবে অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য তার পরিবার জেলা সদরে বাস করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় পরিবারের তিন সদস্য খুব ছোট একটি বাড়িতে থাকতেন। তাছাড়া, বহুবার বাসস্থান পরিবর্তনও করেছিলেন তারা।
ছাও মাও ইউয়ান বলেন, “মার্শাল আর্ট আমার কাছে কী অর্থ বহন করে, তা বর্ণনা করার জন্য সঠিক শব্দটি ব্যবহার করা খুবই কঠিন। এটি আমার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মার্শাল আর্ট আমাদের পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে।”
প্রতিভাবান ছাও মাও ইউয়ান স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছয় বা সাত বছর বয়সে প্রথমবার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় তিনি তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর নানা প্রতিযোগিতায় তিনি অনেকবার চ্যাম্পিয়ন হন এবং সিছুয়ান প্রদেশের মার্শাল আর্ট সার্কেলে দ্রুত বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।
২০০৭ সালে নান ছোং শহরে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন তিনি। প্রতিযোগিতার দু’দিন আগে হোটেলে যাওয়ার পথে দুর্ভাগ্যক্রমে তার মাথায় একটি তক্তার আঘাত লাগে, যেখানে ১০টির বেশি সেলাই লাগে। চিকিত্সক ও কোচ তাকে প্রতিযোগিতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বললেও তিনি মাথায় ব্যান্ডেজ মুড়িয়ে রেখে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং জীবনের প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। একটানা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্শাল আর্ট অনুশীলন করছেন তিনি। তিনি যখন সেই প্রতিযোগিতার কথা ভাবেন, একেবারে স্পষ্টভাবে সেটা স্মরণ করতে পারেন।
তিনি বলেন, “এই প্রতিযোগিতা এমন একটি খেলা, যা আমাকে আমার ক্যারিয়ারজুড়ে অনুপ্রাণিত করেছে এবং আমি যত বেশি এগিয়ে যেতে থাকি, ততই এটিকে অবিস্মরণীয় বোধ করি। এখন আমি নিজের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ যে,তখন হাল ছেড়ে দেইনি। তারপর থেকে আমার কাজ করার ধরন পরিবর্তিত হয়েছে। আমি ফলাফল নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না, কেবল প্রতিযোগিতায় আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কঠোর পরিশ্রমের পর ফল আসবেই। এমন নয় যে, ফলাফল দেখতে পাচ্ছেন না, তাই বন্ধ করে দিবেন। ফলাফল নিজের পরিশ্রমের বিনিময়ে পাওয়া যাবে।”
কোচ ইউ বো’র চোখে ছাও মাও ইউয়ান একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান, শৃঙ্খল ও কঠোর পরিশ্রমী ক্রীড়াবিদ। একই প্রশিক্ষণের বিষয় তিনি অন্যদের তুলনায় দ্রুত শিখতে পারেন এবং একই রকম কঠিন বিষয় তিনি একই বয়সের শিশুদের চেয়ে দ্রুত সম্পন্ন করতে পারেন।
অসাধারণ প্রতিভার কল্যাণে ছাও মাও ইউয়ান তার যৌবনে অনেক চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের গ্রুপে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর থেকে তার নৈপুণ্য খুব সুষ্ঠু ছিলো না। তখনও তার মানসিকতার যথেষ্ট পরিবর্তন হয়নি এবং তার নৈপুণ্য স্থিতিশীল ও যথেষ্ট পরিপক্ক ছিল না। শক্তি থাকলেও প্রথম দু-তিন বছরে একবারও চ্যাম্পিয়ান হননি। অনেক সময় ধরে এই অবস্থা চলছিল, যা একজন ক্রীড়াবিদের জন্য খুব কষ্টকর। সৌভাগ্যের বিষয় হলো তিনি সফলতার সঙ্গে সেই কঠিন সময় অতিবাহিত করেছেন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মার্শাল আর্টের প্রতি তার অবিরাম ও বিশুদ্ধ ভালবাসা নিয়ে ছাও মাও ইউয়ান ধীরে ধীরে আরও কৌশল রপ্ত করেন। নিজেকে আবার শুদ্ধ করতে শুরু করেন এবং ঠান্ডা মাথায় মার্শাল আর্টের উপর আরও মনোযোগ দিতে শুরু করেন।