১. নারীর নতুন পেশা: হাউস কিপিং
২. পরিবেশবান্ধব কলম তৈরি করেছেন বাংলাদেশের নারী
৩. গ্রাম উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিব্বতি তরুণী
নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।
নারীর নতুন পেশা: হাউস কিপিং
হাউসকিপিং বা গৃহপরিচর্যা অনেক বছর ধরেই নারীদের পেশা। কিন্তু পেশাটিকে এক ধরনের অবহেলা করার মানসিকতা রয়েছে। তবে এখন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাটিকে নতুনভাবে উন্নীত করা হচ্ছে। চলুন শোনা যাক বিস্তারিত
হাউজ কিপিং বা গৃহপরিচর্যা অনেক বছর ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূলত নারীর পেশা হিসেবে বিবেচিত। রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা, কাপড় ধোয়া এসব গতানুগতিক গৃহস্থালী কাজের জন্য অনেক পরিবারই হাউজ কিপার খোঁজেন। কিন্তু এই পেশাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে অনেকেরই অনীহা আছে। কারণ অনেকক্ষেত্রে এই পেশাটিকে তেমন সম্মান করা হয় না এবং এই পেশায় বেতনও খুব বেশি নয়। কিন্তু এখন দৃষ্টিভঙ্গী পালটাচ্ছে।
চু চুননান একজন হাউজ কিপার। তার বয়স ৪৯ বছর। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি এ পেশায় আছেন। সম্প্রতি তিনি শাংহাই ওপেন ইউনিভারসিটি থেকে ডোমেসটিক সার্ভিসে মেজর নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেছেন। তিনি এই বিষয়ে সাংহাই ওপেন ইউনিভারসিটির প্রথম ব্যাচের ৯৫ জনের অন্যতম।
সাংহাই ওপেন বিশ্ববিদ্যালয় গৃহকর্মে হাউজ কিপারদের দক্ষতা বাড়াতে এবং একে একটি মর্যাদাপূর্ণ পেশায় উন্নীত করার জন্য এই বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স চালু করেছে।
চু জানান এখন আর আগের মতো শুধু রান্না বা ঘর পরি ষ্কার করার মধ্যেই এই সার্ভিস সীমাবদ্ধ নয়। এখন হাউজ কিপারের দায়িত্ব অনেক বেশি। পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর যত্ন, ছোট শিশু বা প্রবীণ সদস্যের যত্ন, ঘর সাজানো, খাদ্যে পুষ্টি বজায় রাখা, পরিবারের সকলের স্বাস্থ্য ঠিক আছে কিনা সেদিকে নজর রাখাও হাউজ কিপারের দায়িত্ব।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সাংহাই মহানগরীর ৮ মিলিয়ন পরিবারের এক তৃতীয়াংশের জন্য হাউজ কিপার আছেন। এখনও ৩০, ০০০ কর্মীর সংকট রয়েছে।
চু বলেছেন তিনি পুষ্টিবিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং সংশ্লিষ্ট কোর্স করেছেন। তার প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতাও আছে। নিয়োগকর্তার শিশুর দেখভাল করার জন্য প্যারেনটিংও শিখেছেন।
চু বলেন, কলেজের শিক্ষা তাকে আরও আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।
ডোমেস্টিক সার্ভিস কোম্পানি জানাচ্ছে এখন অনেক পরিবার এমন হাউজ কিপার চায় যারা শুধু রান্না ও ঘর পরিস্কারের কাজই করবে না বরং যার আরও অনেক দিকে দক্ষতা আছে।
এমন অনেক নারী আছেন যিনি গৃহকর্ম ও ব্যবস্থাপনায় দক্ষ এবং সংসারের গৃহস্থালী কাজ করতে ভালোবাসেন। তারা হয়তো অফিসে কাজ না করে শান্তি ও নিরিবিলিতে কাজ করতে চান, শিশুর দেখাশোনা ও ঘরের খুঁটিনাটি কাজে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এমন নারীদের জন্য এখন সম্মানজনক পেশা হয়ে দাঁড়াচ্ছে হাউজ কিপিং।
চু চুননানের মতো অনেক আধুনিক নারীই এগিয়ে এসছেন এই পেশায়। মর্যাদা ও বেতন দুটোই বাড়ছে পেশাটিতে।
প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা: রহমান
পরিবেশবান্ধব কলম তৈরি করেছেন বাংলাদেশের নারী
‘বীজযুক্ত কলম’ উদ্ভাবন করে বাংলাদেশে আলোচিত হয়েছেন নাছিমা আক্তার। নতুন ধরনের এই কলম বিক্রি করে এরইমধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছেন যশোরের এই নারী। এই কলমের ভেতর দেয়া হয় একটি বীজ। কালি শেষ হওয়ার পর কলমটি মাটিতে ফেলে দিলেই তা থেকে তৈরী হবে চারা গাছ। এ নিয়ে আমাদের একটি প্রতিবেদন আছে।
প্লাস্টিকমুক্ত সবুজ পৃথিবী গড়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ‘পরিবেশবান্ধব কাগজের কলম’ উদ্ভাবন করেন যশোরের নাছিমা আক্তার। দেশজুড়ে আলোচনার পর, আন্তর্জাতিক মহলেও ছড়িয়ে যায় বিশেষ এই কলমের খ্যাতি। এরই মধ্যে পাঁচ হাজার পিস বীজযুক্ত কলম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানী করেছেন তিনি।
এই কলমের পেছন দিকে সংযুক্ত করা হয় ফুল, ফল ও সবজির বীজ। কালি শেষ হওয়ার পর কলমটি মাটিতে পুঁতে দিলে তা থেকে তৈরি হবে গাছ।
শুধু কাগজের কলম ১০ টাকায় এবং খুচরায় বীজযুক্ত কলম ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন নাছিমা। এখন গড়ে প্রতিদিন এক হাজারটি কলম তৈরি করছেন তিনি। সব মিলিয়ে মাসে তার বিক্রির পরিমাণ এখন ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। দুই হাজারের বেশি নিয়মিত ক্রেতা রয়েছে এই কলমের। বিশেষ করে বিভিন্ন এনজিও তার কাছ থেকে কলম কিনে নেয়।
নাছিমার বড় মেয়ে রেবেকা সুলতানা ঢাকার একটি কলেজ অনার্স করে এখন মাকে সহযোগিতা করছেন। একমাত্র ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি তৈরি করছেন কলম। এছাড়া গ্রামের আরো ১০ জন নারীকে সঙ্গে নিয়ে কলম তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন নাছিমা আক্তার। ভবিষ্যতে ১০০ নারীকে সম্পৃক্ত করার ইচ্ছে রয়েছে তার।
দেশের সব জেলায় এবং বিদেশে এই কলমের চাহিদা আছে উল্লেখ করে এই নারী উদ্যোক্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বীজযুক্ত কলম দেশে কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি দফতর কিনে নিয়ে যায়। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে পাঁচ হাজার পিস বীজযুক্ত কলম যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানী করা হয়েছে। সামনে আরও যাবে। এসব কলমে সংযুক্ত করা হয়েছে ডালিয়া ফুলের বীজ। কেউ চাইলে তার পছন্দের বীজ দিয়ে কলম তৈরি করে দেওয়া যাবে।’
প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
গ্রাম উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিব্বতি তরুণী
গ্রাম উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিব্বতি তরুণী ড্রোলমা। দীর্ঘদিন নিজ প্রদেশের বাইরে কাজ পর নিজের গ্রামে ফিরে মুদির দোকান দিয়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন এই তরুণী। মাসে আয় করছেন ৩০ হাজার ইউয়ান। ড্রোলমা এখন তার গ্রামের অনেক তরুণ-তরণীর অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন । বিস্তারিত শুনবো প্রতিবেদনে।
একদিকে পাহাড়, অন্যদিকে তৃণভূমি। মাঝখানে দিয়ে চলছে যানবাহন। আর রাস্তার মোড়ের একটি দোকানে বাহারি ধরনের খাবার বিক্রি করছেন তিব্বতি তরুণী ড্রোলমা। এই কনফেকশনারি দোকানের মালিক তিনি নিজেই। অনুন্নত গ্রাম, ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় নিজ শহরের বাইরে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। তবে গ্রামের চিত্র যখন পাল্টাতে থাকে তখন ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। শুরু করেন নিজের ব্যবসা।
ড্রোলমার এই দোকান অবস্থিত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের তিব্বতি স্বায়ত্তশাসিত গাঞ্জি প্রিফেকচারের এডামেনবা গ্রামে। একসময় চারণভূমির জন্য বিখ্যাত ছিল এই গ্রাম। যার ফলে বেশিরভাগ মানুষের পেশা ছিল পশুপালন। কিন্তু এসব পশুর দুধ, তৈরিকৃত দুগ্ধজাত পণ্য বাইরে বাজারজাতকরণের ছিল না সুব্যবস্থা। কিন্তু এখন পাল্টেছে চিত্র। গ্রামের রাস্তাঘাট, বিভিন্ন শিল্প কারখানা পালটে দিয়েছে গ্রামবাসীর ভাগ্য।
ড্রোলমার ছোট্ট দোকান এখন অনেক পথচারী ও গ্রামের বাসিন্দাদের পছন্দের শপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রতিদিনই অনেক পর্যটক ভিড় করে এখানে। এদিকে ড্রোলমার আয়ও বেড়েছে অনেকগুণ। ড্রোলমা বলেন,- "ব্যবসা ভালো হলে আমি দিনে ১০০ ইউয়ান পর্যন্ত আয় করতে পারি। আমি গ্রামের বাইরে যে কাজ করতাম তার চেয়ে এই কাজ অনেক ভালো ।
ড্রোলমা এখন এই গ্রামের উজ্জ্বল উদাহরণ । তাকে দেখে এখন অনেক তরুণ-তরুণী ফিরে আসছেন গ্রামে। শুরু করেছেন ব্যবসা। এদিকে এই গ্রামের ট্রেন্ডি স্টাইলের ঘর, দর্শনীয় স্থান আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের। ফলে গ্রামীণ পর্যটনও হচ্ছে চাঙ্গা।
ড্রোলমা বলেন, ‘আমাদের গ্রামে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। আমাদের চারণ ভূমিকে নৈসর্গিক স্থানে পরিণত করা হয়েছে। আর স্থানীয়রা তৈরি করছেন তিব্বতীয় স্টাইলে বিভিন্ন গেস্ট হাউজ। ফলে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসছেন এখানে " ।
এই গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে একটি দুধ সংগ্রহ কেন্দ্র। যার ফলে এখন গ্রামবাসীরা খুব সহজেই চমরী গরুর দুধ, তৈরি মাখন বিক্রি করতে পারছেন । ফলে এই মিল্ক স্টেশন তাদের জীবনকে অনেক সহজ ও উন্নত করেছে বলছেন এই গ্রামের বাসিন্দা তাশি।
তিনি বলেন,"অতীতে, আমরা গ্রীষ্মের সময়টায় শুধু পনির তৈরি করতে পারতাম। এখন পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় চমরী গরুর দুধ সরাসরি দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে পারছি। এতে আমাদের আয় বেড়েছে।
দিন যত যাচ্ছে আধুনিকীকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এই গ্রাম। গ্রামটা ধীরে ধীরে বদলে যাওয়ায় খুশি ড্রোলমা ও গ্রামবাসী।
প্রতিবেদন আফরিন মিম
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।
অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।
সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী
লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া,
অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল