‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. চীনা বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের দূতাবাসের সংবর্ধনা
চীনে অবস্থানকালে কঠোর অধ্যবসায়ের পাশাপাশি দেশটির ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে চীনা বৃত্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ২০২৩ সালে চীনা সরকারি বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য সম্প্রতি ঢাকায় চীনা দূতাবাসে আয়োজিত এক প্রি-ডিপারচার রিসিপশন বা প্রাক-প্রস্থান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের দুই দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার ‘উজ্জ্বল সেতু’ বলেও আখ্যা দেন তিনি।
‘প্রথমে তরুণ শিক্ষার্থী যারা বৃত্তি পেয়ে চীন যাচ্ছেন তাদের সবাইকে বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানাচ্ছি। তোমাদের কঠোর পরিশ্রম এবং একাডেমিক অর্জন এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়কে। তাদের সহযোগিতায় আমরা শিক্ষার্থীদের এই বৃত্তির জন্য বাছাই করতে পেরেছি।‘
চীন ও বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাস ও চমৎকার সংস্কৃতি আছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশ প্রাচীনকাল থেকেই ভালো প্রতিবেশী ও বন্ধু।
তিনি বলেন, এই বছরের আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের শুরুতে বাংলাদেশের মেয়ে আলিফা চীনের চিঠির জবাবে প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের কথায় উঠে এসেছে বাংলাদেশি যুবকদের উদ্দেশ্যে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের বার্তা।
এসময় তিনি তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘নতুন যুগে চীন-বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে "আশার সেতু" হয়ে উঠুন। চীন থেকে ফিরে আসার পর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দুই দেশের বন্ধুত্বে অবদান রাখুন।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তৌফিক হাসান, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও অ্যাবকার প্রেসিডেন্ট মুন্সি ফয়েজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ও শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও শিক্ষকসহ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষে চীনা সরকারি বৃত্তির আওতায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরসহ উচ্চ শিক্ষায় মোট ৫৫ জন শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছেন।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান
২. এদিকে, চীনে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা। তবে চীনে পড়াশোনা শেষ করে নিজ দেশে ফিরে এসে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। বর্তমান যুগ যেহেতু প্রযুক্তি নির্ভর তাই উন্নত প্রযুক্তির সন্ধ্যানেই তাদের আগ্রহ বেশি।
সিএসই স্কলারশিপ টাইপ এ এর আন্ডারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজ্যান্সের উপরে মাস্টার্সের জন্য চীন যাচ্ছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। চীন থেকে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভিজ্ঞতা অর্জন করে বাংলাদেশে তা বাস্তবায়ন করার ইচ্ছা তার।
পড়াশোনা করে নিজেকে ঝালিয়ে নিতে চান বৃত্তিপ্রাপ্ত আরেক শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে নানচিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের জন্য যাচ্ছেন আশা।
শুধু আশা, মাসুদ কিংবা নাহিদ নয় তাদের মতো এমন আরো অনেক শিক্ষার্থীরই ইচ্ছা পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে ফিরে এসে ভালোকিছু করার।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম
৩. চাকরি খুঁজে পেতে স্নাতকদের সহায়তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ চীনের
স্নাতকদের চাকরি খুঁজে পেতে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে চীনজুড়ে স্থানীয় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মূল শিল্প চেইনের উপর ভিত্তি করে পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশ এখানকার স্নাতকদের জন্য প্রতিভার নিরিখে পরকল্পনা সাজিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, এর মাধ্যমে স্নাতকদের আরও সুনির্দিষ্ট উপায়ে চাকরি খুঁজে পেতে সাহায্য করা যাবে।
স্নাতকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে চলতি বছরের শুরু থেকেই নানা উদ্যোগ নিয়েছে চীন। বিভিন্ন চাকরিমেলা ও অনলাইন নিয়োগ নিয়ে লাইভ স্ট্রিম স্নাতকদের চাকরি পেতে সহায়তা করছে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর সাথে স্নাতকদের দূরত্ব কমিয়ে আনতেও ভূমিকা রাখছে পদক্ষেপগুলো। এসব পদক্ষেপের সুবাদে এখন পর্যন্ত আনহুইয়ের ৩ লাখ ৩০ হাজার স্নাতক চাকরি পেয়েছে।
উত্তর চীনের থিয়েনচিন মিউনিসিপালিটি একটি অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি করেছে যেটি স্নাতকদের চাকরি খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে আধুনিক ও কার্যকর সেবা দিচ্ছে। এই প্লাটফর্মের সাহায্যে এক লাখেরও বেশি স্নাতক চাকরি পেয়েছে।
থিয়েনচিনের একজন স্নাতক থাং পেং নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের অভিমত জানান।
‘নিজের সাথে মিলে যায় এমন চাকরির খোঁজ খুব দ্রুত পেয়ে যাই আমরা এখানে। পাশাপাশি আমরা মানবসম্পদ বিভাগের ম্যানেজারের সাথেও কথা বলতে পারি। প্রাথমিক ধাপগুলো পার হয়ে গেলে আমরা অনলাইনে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে সই করি।’
এদিকে, হেইলংচিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরের সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন একসাথে ১০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।
দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের শেনচেন শহর কর্মসংস্থান খাতের জন্য ১১৪ কোটি ইউয়ানের একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। এই তথবিলের অর্থ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ও স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তুকি দেওয়া হবে।
পূর্ব চীনের চিয়াংসি প্রদেশজুড়ে এখানকার কর্তৃপক্ষগুলো কর্মসংস্থান পরিষেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর যে স্নাতকরা চাকরি খুঁজে পাননি, তাদেরকে দিকনির্দেশিনা দেয় এসব পরিষেবা কেন্দ্র। এখন পর্যন্ত এই পরিষেবা কেন্দ্রগুলো ৩ হাজারের বেশি স্নাতকদের সাহায্য করেছে।
এদিকে দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের পাচং শহরের কয়েকটি সরকারি অধিদফতর মিলে স্নাতকদের জন্য বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের ব্যবস্থা করেছে। এর মাধ্যমে চাকরিদাতারা কী চায় সে বিষয়ে স্নাতকরা আরও স্পষ্ট ধারণা পাবে বলে বিশ্বাস কর্তৃপক্ষের।
পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের চেনচিয়াং শহরের চিয়াংসু বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের জন্য আয়োজন করছে কর্মজীবন-ভিত্তিক নির্দেশনামূলক আলোচনাসভা। চিয়াংসু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক হওয়া চৌ ছেং জানান, আলোচনাসভাগুলোতে অংশগ্রহণ করে উপকৃত হয়েছেন তিনি।
এদিকে মধ্য চীনের হেনান প্রদেশের শাংছিউ শহরের মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যুরো জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৫৪ হাজারের বেশি চাকরি নিয়ে ২০টিরও বেশি চাকরিমেলার আয়োজন করেছে তারা।
প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী