এবারের পর্বে রয়েছে
১. এবার মৎস শিল্পেও ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি
২. কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাড়ছে বিপন্ন প্রজাতির মাছ
৩. ইউয়ান লংপিংকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কৃষিবিদের স্মৃতি রোমন্থন
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
১. এবার মৎস শিল্পেও ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি
কৃষিখাতে ব্যাপক সমৃদ্ধি নিশ্চিতের পর এখন মৎস্য শিল্পের দিকে নজর দিয়েছে চীন। এ শিল্পের বিকাশেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে দেশটি। বিশেষ করে পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মৎসজীবীদের কাজ আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। বেড়েছে সীফুডের উৎপাদন। পরিবেশবান্ধব নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে খামারিরা।
ফুচিয়ান প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্বের সমুদ্রতীরবর্তী শহর নিংথের উপকূলে যুগ যুগ ধরেই কাঠের ও পলিস্টাইরিনের তৈরি রাফটে সামুদ্রিক মাছ চাষ করে থাকেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা। তবে আগে রাফটগুলোর উপাদান ছিলো প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। একদিকে যেমন মাছচাষীদের জন্য এসব রাফটে কাজ করা ছিলো বিপজ্জনক তেমনি পলিস্টাইরিনের ফলে সাগরের পানিও দূষণ হতো।
তবে আগের অবস্থা এখন আর নেই। বিগত কয়েক বছরে এই অঞ্চলের মৎস্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে স্থানীয় সরকার।
আগে এখানকার মাছচাষীদের রাত জেগে কাজ করতে হতো। কারণ রাতের সময়টা ছিলো বড় মাপের হলুদ ক্রোকার মাছ ধরার মোক্ষম সময়। তবে এখন আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে মাছচাষীদের কাজের চাপও অনেক কমে গেছে, পোহাতে হচ্ছে না বাড়তি কোনো ঝামেলা।
প্লাটফর্মটিতে প্রতিবছর ৬০০ টন বড় মাপের হলুদ ক্রোকার মাছ উৎপাদিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা, যার বাজারমুল্য রয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।
এভাবেই মৎস শিল্পের বিকাশে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করছে চীন সরকার। এখন সে পথই অনুসরণ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া
২. কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাড়ছে বিপন্ন প্রজাতির মাছ
কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে একসময়ের বিলুপ্তির পথে যাওয়া মাছগুলোর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। চীনের ছিংহাই হ্রদে দিন দিন বাড়ছে ন্যাকেড কার্পের সংখ্যা, যা পরিবেশগত অবনতির কারণে একসময় ছিলো বিলুপ্তির পথে। স্থানীয়ভাবেই কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমের চাষ করা হচ্ছে এই মাছ। এগুলো এক বছর পর্যন্ত পুকুরে চাষ করে এরপর ছাড়া হয় ছিংহাই হ্রদে। চীনের সবচেয়ে বড় হ্রদ হলো উত্তর-পশ্চিমের ছিংহাই হ্রদ। আর এ হ্রদের পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ন্যাকেড কার্প। এটি চীনা ভাষায় হুয়াংইউ নামে বেশি পরিচিত।
হুয়াংইউ মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন হার খুবই কম। তাই কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এই মাছের প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে কাজ করছে ছিংহাই কর্তৃপক্ষ।
কৃত্রিম প্রজননের জন্য আছে স্থানীয় বেশকিছু পরীক্ষামূলক হ্যাচারী স্টেশন। সেখানে চব্বিশ ঘন্টা শিফটে কাজ করেন স্টাফ সদস্যরা। হ্যাচারী স্টেশনগুলোতে মাছের ভ্রূণ বৃদ্ধিতে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার নির্দিষ্ট স্তরে জল প্রবাহের গতি এবং তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়। গেল দুই দশক ধরে এই কাজটিই করে যাচ্ছেন তারা।
মাছের হৃদস্পন্দন যখন বোঝা যায় তখন মাছগুলোকে জলের ভ্যাটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রতি দুই ঘন্টা পর পর মাছকে খাওয়ানো হয় ডিমের কুসুম।
এক মাস বয়সে মাছগুলোকে স্থানান্তর করা হয় পুকুরে। পুকুরে মাছকে খাওয়ানোর জন্য শ্রমিকরা অবলম্বন করে্ন শিষ দেওয়া পদ্ধতি। শিষ বাজালে মাছরা আরও খেতে আগ্রহী হয় বলে মনে করেন তারা।
দুই দশক ধরে চলছে এই কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে মাছের সংখ্যা বাড়ানোর। এখন পর্যন্ত এই লেকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ছাড়া হয়েছে ২০ মিলিয়ন মাছ।
সম্প্রতি প্রতিদিন ভোরবেলা ৪ লাখেরও বেশি হুয়াংইউ মাছ এই সেন্টার থেকে নিয়ে পুহা নদী, ছোয়ানচি নদী এবং ছিংহাই হ্রদে ছাড়া হয়। চলতি বছরে ২১৭ মিলিয়ন এই মাছ লেকে ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০০৩ সালে এই বিরল প্রজাতির মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় চীন সরকার। ফলে ২০২২ সালের শেষ নাগাদ এই হুয়াংইউ মাছের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১০০ টনে, যা প্রায় এক দশক আগে প্রাথমিক সুরক্ষা সময়ের তুলনায় ৪৪ গুণ বেশি।
আর এভাবেই ফিরিয়ে আনা হচ্ছে ছিংহাই হ্রদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম
৩. ইউয়ান লংপিংকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কৃষিবিদের স্মৃতি রোমন্থন
কৃষিজগতে নিত্য-নতুন জাত উদ্ভাবন করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন চীনের গবেষকরা। এর মাধ্যমে শুধু চীনের জনগণই নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে এই অসামান্য অবদান রাখার জন্য এ পর্যন্ত চীনের দুজন কৃষিবিদ পেয়েছেন দ্য ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ। এই পুরস্কারকে খাদ্য ও কৃষি জগতের নোবেল প্রাইজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ রাখতে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীন। অল্প জায়গায় বেশি ফসল উৎপাদন করে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে দেশটি। আর এই মহৎ কাজের পেছনে রয়েছেন দেশটির বেশ কয়েকজন কৃষিবিদ। অসামান্য অবদান রাখায় এরইমধ্যে অনেকে পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক এবং দ্য ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট এমিরেটাস কেনেথ এম কুইন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে। দ্য ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ নিয়ে পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি।
ছবি: কেনেথ এম কুইন, প্রেসিডেন্ট এমিরেটাস, দ্য ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন
“দ্য ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজকে খাদ্য ও কৃষিখাতের নোবেল প্রাইজ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ পর্যন্ত চীনের দুইজন কৃষিবিদ এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন চীনের সাবেক কৃষিমন্ত্রী হি কাং। কৃষিনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার জন্য ১৯৯৩ সালে তিনি পান দ্য ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ। আরেকজন হলেন চীনের বিখ্যাত কৃষিবিজ্ঞানী, হাইব্রিড ধানের জনক অধ্যাপক ইউয়ান লংপিং। কঠিন সময়ে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় ২০০৪ সালে এই পুরস্কার ভূষিত হন তিনি।"
ছবি: হাইব্রিড ধানের জনক অধ্যাপক ইউয়ান লংপিং
বিশ্বের আলোচিত কৃষিবিদ ইউয়ান লংপিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন কেনেথ এম কুইন।
"অধ্যাপক ইউয়ান লংপিংয়ের সঙ্গে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো। একটা সময় আমরা ভালো বন্ধুতে পরিণত হই। নানা বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হতো। প্রায় এক দশক ধরে তার প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রাইস ডেভেলপমেন্ট ফোরামে ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছি। আমি ছাংশায় গিয়েছিলাম। সেখানে একটি সিম্পোজিয়ামে বক্তব্য রেখেছিলাম। একসময় আমি আফ্রিকান বিজ্ঞানীদেরও নেতৃত্ব দিয়েছি। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার সঙ্গেও আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। আসলে মহৎ একটা কাজের সঙ্গে বিশ্বের বড় বড় নেতারা নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন।"
কৃষি জমিকে কতভাবে কাজে লাগানো যায়, তার দুর্দান্ত উদাহরণ তৈরি করেছে চীন। এখন সে পথেই হাঁটছে বিশ্বের অনেক দেশ।
প্রতিবেদন- এইচআরএস অভি
সম্পাদনা- শিহাবুর রহমান
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী