‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ৩০
2023-08-08 15:45:29

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। ছেংতুর দ্যা টেম্পল হাউজ

২। ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর এক অনন্য নিদর্শন সিনচিয়াং আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড বাজার

৩। খাই ইয়ুয়ান সিটির মিনি ট্রেনে একদিন 

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ৩০তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।  

 

১। ছেংতুর দ্যা টেম্পল হাউজ

আধুনিক নকশা এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের মেলবন্ধনের অপূর্ব নিদর্শন দ্যা টেম্পল হাউস হোটেল। বিলাস বহুল এই হোটেল চীনের সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতুতে অবস্থিত। সিচুয়ানের চমৎকার পরিবেশ এবং চীনের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও আধুনিকতার প্রতিফলন ঘটেছে এই হোটেলে।

হোটেলের সামনের দিকটা ছিং রাজবংশের সময়কার একটি ভবনে অবস্থিত। সামনের দিকের এই ভবন ও ধূসর-ইটের প্রশস্ত গেইট মুগ্ধ করে পর্যটকদের। গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই মনে হয় বাড়ির আঙ্গিনায় প্রবেশ করলাম। কেননা এর ডিজাইন করা হয়েছে চীনের ঐতিহ্যবাহী বাড়ির আঙিনার মতো করে।

এই টেম্পল হাউজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এখানে পুরনো ও নতুন স্থাপত্যের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। এখানকার গেস্টরুম আধুনিক আর্কিটেক্ট ডিজাইনার দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। আকারে বড় এই হোটেলে রয়েছে  একশটি গেস্টরুম। শান্ত পরিবেশের এই ঘরগুলোতে আছে  আগের দিনের ডিজাইনের পালঙ্ক, টেবিল ইত্যাদি আসবাব। পাশাপাশি আছে আধুনিক ওয়াশরুমের সুবিধা।  এই হোটেলের রুমগুলো থেকে উপভোগ করা যায় থাইখু লি শপিং জেলার অপরুপ দৃশ্য।

হোটেলে আছে বিনামূল্যে ওয়াইফাই ব্যবহারের সুবিধা। তবে গুগল ও ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করতে চাইলে ব্যবহার করতে হবে  ভিপিএন।

হোটেলের ভেতরে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করার জন্য নিয়োজিত আছেন বেশ কয়েকজন কর্মচারী। কোন কিছু জিজ্ঞসা করা মাত্রই তথ্য ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকেন তারা। পর্যটকদের আথিতেয়তায় যেন সর্বদা প্রস্তুত তারা। স্থানীয়দের সাথে চীনা ভাষায় যোগাযোগ করার পাশাপাশি বিদেশী অতিথিদের সঙ্গে যেন  যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য যারা ইংরেজীতে পারদর্শী তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হয় এখানে। 

এই হোটেলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এখানকার সুস্বাদু খাবার । ব্রেকফাস্টে এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন ফ্লেবারের প্যাস্ট্রি, চীনের ঐতিহ্যবাহী নুডুলস ও স্যুপ। এছাড়া সিচুয়ানের বিখ্যাত নিরামিষ তফু ও জনপ্রিয় হটপট। বিখ্যাত সিচুয়ান খাবারের নিরামিষ সংস্করণ রয়েছে, যেমন মা পো তোফু এবং হটপট। 

এই হোটেলের পুল আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। এছাড়া পুলের পাশেই আধুনিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন  জিম ও ৪২টি স্পা, ফিটনেস সেন্টার, মিটিং রুম, ইভেন্ট আয়োজন করার কনফারেন্স রুম ও বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার আলাদা জায়গা রয়েছে।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

২। ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর এক অনন্য নিদর্শন সিনচিয়াং আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড বাজার

ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীর এক অনন্য নিদর্শন হচ্ছে সিনচিয়াং আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড বাজার। এখানে প্রবেশ করলে আপনার মনে হবে, আরবের কোন একটি মসজিদভিত্তিক বাজারে প্রবেশ করেছেন।

 

 

চীনের দশটি মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উইগুর, কাজাখ ও হুই জাতিগোষ্ঠী অন্যতম। যাদের বেশিরভাগ লোক বসবাস করেন চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে।

২০০৩ সালে এই তিন জাতির সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে রাজধানী উরুমছিতে নির্মাণ করা হয় সিনচিয়াং আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ড বাজার।

ঐতিহাসিক সিল্ক রোডের সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক সংস্কৃতিকে তুলে ধরে এই বাজার।

প্রায় ৪০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিসৃত এই বাজারে রয়েছে একটি ৮০ মিটার উচ্চতার দর্শনীয় টাওয়ার, একটি খোলা মসজিদ, একটি অপেরা থিয়েটার এবং একটি ফুড কোর্ট।

 

 

২০০০ এরও বেশি পণ্য পাওয়া যায় এখানে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জামাকাপড়, টুপি, অলঙ্কার, হস্তশিল্প, সঙ্গীত যন্ত্র, বিভিন্ন ধরনের তাজা ও শুকনো ফল থেকে শুরু করে উইগুরদের ওষুধ, কার্পেট, টেক্সটাইল পণ্য পাওয়া যায়।

 

তিন অংশে বিভক্ত এই বাজার পর্যটকদের জন্য সিনচিয়াংকে জানার জন্য একটি জানালার মতো কারণ, যারা তাদের ভ্রমণ ব্যস্ততার কারনে সিনচিয়াংয়ের অন্যান্য অংশে যেতে পারেনা কিংবা কেনাকাটার সময় পাচ্ছেন না তারা সবকিছু একসঙ্গে পাবেন এই বাজারে।

প্রতিবেদন- হোসনে মোবারক সৌরভ

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। খাই ইয়ুয়ান সিটির মিনি ট্রেনে একদিন 

চীনের ইয়ুননান প্রদেশের একটি ছোট শহর হলো খাই ইয়ুয়ান সিটি। এটি হোংহ্য হানি এবং ই জাতির স্বায়িত্তশাসিত প্রিফেকচারে অবস্থিত। এখানকার  অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের একটি মজার উপায় হলো ট্রেনে চড়ে ঘোরা। পর্যটকদের এই আনন্দ দিতে খাই ইয়ুয়ান সিটির রয়েছে একটি বিশেষ ট্রেন। এর নাম খাই ইয়ুয়ান সাইট সিয়িং মিনি ট্রেন। এই ট্রেনে চড়ে পাহাড়, ধানক্ষেত, ছোট জলাশয় ইত্যাদি দৃশ্য উপভোগ করা যায়।

 

এটি একটি মিনি ট্রেন বা ছোট ট্রেন। এর রয়েছে একশ বছরের ঐতিহ্য। ইয়ুয়েইয়ু রেলওয়ের একটি অংশ এই রেললাইন ও ট্রেন। এটি ফরাসিরা নির্মাণ করেছিল।

বর্তমানে ট্রেনটি সাজানো হয়েছে ঊনবিংশ শতকের আদলে। ট্রেনের বেঞ্চ এবং সাজসজ্জা থেকে শুরু করে গার্ডের পোশাক পর্যন্ত বহন করছে অতীতের আমেজ।

এক থেকে তিনঘন্টার ট্রেন ভ্রমণে ৯.০৫ কিলোমিটার এলাকা ঘোরা যায়। ট্রেনটি তার যাত্রা শুরু করে খাই ইয়ুয়ান রেলওয়ে স্টেশন থেকে। শহর ছাড়িয়ে আঁকাবাকা পার্বত্য পথে যেতে থাকে ট্রেনটি। কখনও টানেলের ভিতর দিয়ে কখনও সেতুর উপর দিয়ে আবার কখনও ধানক্ষেতের ভিতর দিয়ে চলে ট্রেন। এটি কিন্তু হাই স্পিড ট্রেন নয়। এটি চলে ধীরে ধীরে। ফলে পর্যটকরা দারুণ উপভোগ করতে পারেন রেলযাত্রা।

 

দেড় ঘন্টা চলার পর ট্রেনটি একটি ছোট্ট স্টেশনে থামে। সেখানে ট্রেন থেকে নেমে পর্যটকরা পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পারেন। সেখানে ছবি তোলার জন্য নানা রকম বিশেষ স্থান আছে। একটি দেয়ালে কয়েকটি গ্রাফিতিও রয়েছে।

ফিরতি পথেও একই রকম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পান পর্যটকরা। এই মিনি ট্রেন যায় হানি ও ই জাতি অধ্যুষিত ঐতিহ্যবাহী গ্রামের ভিতর দিয়ে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটার মধ্যে যে কোন সময় স্টেশনে টিকেট কেটে এই ট্রেন যাত্রায় অংশ নিতে পারেন পর্যটকরা।

ট্রেনের ভিতরে ছোট ছোট সুভ্যেনির এবং খাবার দাবারও বিক্রি হয়।পর্যটকরা কখনও কখনও গান বাজনায় মেতে ওঠেন ট্রেনের ভিতরেই।

 

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী