বিজ্ঞানবিশ্ব ৩০তম পর্ব
2023-08-07 15:43:11

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির খোঁজ-খবর নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান- বিজ্ঞানবিশ্ব

৩০তম পর্বে যা থাকছে:

* পরিবেশবান্ধব ও বুদ্ধিমান গাড়িশিল্পে উহানের অভাবনীয় অগ্রগতি

* ফাইভ-জি রোবটের সাহায্যে রিমোট আই সার্জারির সফল পরীক্ষা সম্পন্ন চীনে

*  পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে প্রচেষ্টা জোরদার করছে চীন

 

 

পরিবেশবান্ধব ও বুদ্ধিমান গাড়িশিল্পে উহানের অভাবনীয় অগ্রগতি

চীনের অটো ভ্যালি নামে পরিচিত দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর উহান। পরিবেশবান্ধব ও বুদ্ধিমান যানবাহন তৈরির মাধ্যমে চীনের গাড়ি-নির্মাণ শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নিয়েছে অটো ভ্যালি। 

উহানের অটো ভ্যালি গড়ে উঠেছে ৫০০ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে। এখানে দশটিরও বেশি গাড়ি-নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে এবং ৫শ’রও অধিক অটো যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী রয়েছে। গত ৩০ বছরে এই এলাকাটি একটি প্রাণবন্ত শিল্প কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখন এই অটো ভ্যালি এর পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করেছে। শিল্প কেন্দ্রটি এখন পরিবেশবান্ধব জ্বালানিচালিত বুদ্ধিমান যানবাহনে জোর দিচ্ছে।

সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গাড়ি-নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তংফেং মোটর গ্রুপের উচ্চমানের বুদ্ধিমান বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্র্যান্ড ভোইয়াহ প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক বহুমুখী গাড়ি বিশ্ববাজারে ছেড়েছে। এই উচ্চমানের গাড়ির মডেলটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ইউয়ানেরও বেশি, যা প্রায় ৪২ হাজার আমেরিকান ডলারের সমান। এ থেকেই টের পাওয়া যায় চীনের গাড়িশিল্প বিলাসবহুল ও বুদ্ধিমান যানবাহন বিকাশে অগ্রগতি অর্জন করছে।

উহানের অটো ভ্যালিতে রাস্তায় রাস্তায় বুদ্ধিমান বাসের দেখা পাওয়া যায়। প্রতিটি বাসেই চালক আছেন, তবে তাদের কষ্ট করে স্টিয়ারিং হুইল ঘুরাতে হয় না! প্রয়োজনে বাস নিজ থেকেই স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে নেয়। বাসটিতে যেমন রয়েছে বুদ্ধিমান বাহনের প্রযুক্তি তেমনি যেসব রাস্তায় বাসটি চলে সেই রাস্তাগুলোও আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন।  

উহান ইকোনমিক এন্ড টেকনোলজিকাল ডেভেলপমেন্ট জোনের বিগ ডেটা সেন্টারের পরিচালক ছ্যং ইউয়েই বলেন, “ডেডিকেটেড ফাইভ-জি ফ্রিকুয়েন্সির আওতায় আমাদের ১০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বুদ্ধিমান সড়ক আছে। সড়কগুলোতে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত ৯১২টি বুদ্ধিমান গাড়ি চলাচল করে। এখন পর্যন্ত উহানের প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দা যাতায়াতের জন্য এই বুদ্ধিমান যান ব্যবহার করেছেন।”

যাত্রীদের কাছে স্বচালিত ট্যাক্সিও অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই শহরে। হাজারো যন্ত্র, আধুনিক ক্যামেরা ও রাডার সংযুক্ত রয়েছে আধুনিক সড়কগুলোতে। এগুলোর সাহায্যেই একটি স্বচালিত গাড়ি বুঝতে পারে রাস্তায় লাল বাতি জ্বলছে কিনা বা সামনে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা।

সরবরাহ চেইন সম্প্রসারণের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানোর মধ্য দিয়ে দিন দিন অগ্রগতি ঘটছে উহানের অটো ভ্যালির।

উহান ইকোনমিক এন্ড টেকনোলজিকাল ডেভেলপমেন্ট জোনের ইনফরমেশন ব্যুরোর উপ পরিচালক চেং চাও বলেন, “শিল্প চেইনকে উন্নত করতে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে আমাদের কীসের অভাব রয়েছে এবং এর পরিপূরক কী হতে পারে তা খুঁজে বের করার জন্য গত দুই বছর চেষ্টা চালিয়েছি আমরা।”

চেং চাও আরও বলেন, নতুন নীতির হাত ধরে অটো ভ্যালিতে উদ্যোক্তাদের দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হবে, যা গাড়ি-নির্মাণ কোম্পানিগুলোতে অভিনব পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে প্রচেষ্টা জোরদার করছে চীন

কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে খুব শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে চীন। পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

চীন তার ‘গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট’ ট্রেডিং স্কিম উন্নত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহারে উৎসাহ দিতে সরকার-গৃহীত পদক্ষেপের একটি অংশ।       

গেল সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনইএ) এবং অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে বলা হয়, চীনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস থেকে বিদ্যুৎ উত্পাদন ও ব্যবহারের একমাত্র প্রমাণ হলো পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সনদপত্র। একটি বাণিজ্যিক সনদপত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে কেনাবেচা হতে পারে।

বেশিরভাগ নবায়নযোগ্য শক্তির বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরিবেশবান্ধব সনদপত্র প্রাপকদের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বায়ু, সৌর, মহাসাগরীয় শক্তি, নির্দিষ্ট জলবিদ্যুৎ, উপকূলীয় বায়ু শক্তি এবং কেন্দ্রীভূত সৌর শক্তিকে। 

সনদপত্রগুলোকে তিনটি প্ল্যাটফর্মে ভাগ করা হয়েছে। চায়না গ্রীন ইলেকট্রিসিটি সার্টিফিকেট ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম, বেইজিং পাওয়ার ট্রেডিং সেন্টার এবং কুয়াংচৌ পাওয়ার ট্রেডিং সেন্টার -- এই তিনটি প্লাটফর্মে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, তালিকাভুক্তি এবং কেন্দ্রীয় বিডিং – এ্ই তিনটি উপায়ে সনদপত্রগুলো কেনাবেচা করা যেতে পারে।

একটি উন্নত গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট ট্রেডিং স্কিম পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে সহায়ক বলে জানান এনইএ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওয়াং তাফেং।

তিনি বলেন, "যখন একটি প্রকল্প পরিবেশবান্ধব শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, তখন গ্রিন পাওয়ার সার্টিফিকেট প্রদানকারী এজেন্সি এটিকে গ্রিন পাওয়ারের অন-গ্রিড সরবরাহের ভিত্তিতে একটি সনদপত্র প্রদান করবে। এটি ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে বেশ ভালো বাণিজ্য করতে সক্ষম।”

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ, সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বহুজাতিক কোম্পানি, সরবরাহ চেইনের উপরের দিকে ও নিচের দিকে থাকা কোম্পানি, রপ্তানিমুখী উদ্যোগ এবং শিল্প নেতাদেরকেও পরিবেশবান্ধব সনদপত্র কিনতে এবং আরও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করতে উত্সাহ দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে। 

গত মাসে প্রকাশিত এনইএ’র তথ্যে দেখা যায়, জুনের শেষ নাগাদ চীনের নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন কিলোওয়াটে পৌঁছায়, যা কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতারও বেশি। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা এখন দেশটির মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এটা একটি নতুন রেকর্ড।

 

|| প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

 

ফাইভ-জি রোবটের সাহায্যে রিমোট আই সার্জারির সফল পরীক্ষা সম্পন্ন চীনে

 

ফাইভ-জি বা পঞ্চম প্রজন্মের রোবটের মাধ্যমে কয়েকটি খরগোশের চোখে মাইক্রোন-স্তরের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে চীনে। বিশ্বে এ ধরনের অস্ত্রোপচার এই প্রথম এবং এটার মধ্যে দিয়ে চোখের শল্যচিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক অর্জিত হয়েছে।

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় কুয়াংচৌ শহরে অবস্থিত সুন ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চুংশান চক্ষুচিকিৎসা কেন্দ্রে থাকা ১২টি খরগোশের ওপর গত ২৩ জুন অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন দেশটির সর্বদক্ষিণের প্রদেশ হাইনানের রাজধানী হাইখৌয়ের চুংশান চক্ষুচিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক দল।

চুংশান চক্ষুকেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক লিন ও তার চিকিৎসক দল এ পরীক্ষামূলক অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেয়। এর পর এক মাসের পর্যবেক্ষণে দেখা যায় সবকটি খরগোশই পরিপূর্ণ সুস্থ রয়েছে। লিন মনে করেন, দূরবর্তী স্থান থেকে চিকিৎসা প্রদানের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি এই অগ্রগতি চীনের চিকিৎসা সরঞ্জামকে নেতৃস্থানে নিয়ে যাবে এবং একটি জাতীয় চিকিৎসা মান প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।

তিনি বলেন, দেশে শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা-সম্পদ বন্টনে অসমতা এবং চক্ষুচিকিৎসাবিদ্যায় ভারসাম্যহীনতা দূর করার ক্ষেত্রে এই অর্জনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। এছাড়া ডাক্তার ও রোগীদের জন্য সময় বাঁচাতে, খরচ কমাতে এবং চিকিত্সার দক্ষতার উন্নতিতে সহায়তা করবে এ অস্ত্রোপচার।

তিনি বলেন, “যদি সবকিছু সুন্দরভাবে আগায়, তাহলে ছয় মাসের মধ্যে মানুষের ওপর ফাইভ-জি রিমোট মাইক্রোন চক্ষু সার্জারি সম্পাদন করা যাবে।”

অধ্যাপক লিন তার দল এর আগে ইঁদুর, শূকর ও অন্যান্য প্রাণীর উপর একই ধরনের অস্ত্রোপচার করেছিল।

সুন ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক হুয়াং খাই বলেন, এই অস্ত্রোপচারের সাফল্য প্রমাণ করে, ফাইভ-জি রোবটগুলোর নৈপুণ্য নির্ভুল।

তিনি বলেন, "চক্ষু সার্জারির জন্য সর্বোচ্চ মাত্রার নির্ভুলতা ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন হয়।"

এ ধরনের অস্ত্রোপচারে ব্যবহারের জন্য ফাইভ-জি রোবট ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি তৈরি করতে হুয়াং খাইয়ের দল অধ্যাপক লিনের দলের সঙ্গে কাজ করছে।

হুয়াং বলেন, তারা ফাইভ-জি রোবটের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার প্রসারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করবেন। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চতর স্তরের চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আগামীতে এর সঙ্গে ডিজিটাল টেলিমেডিসিন যুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

হাইনান চক্ষু হাসপাতালের ভাইস-প্রেসিডেন্ট চুং সিংউয়ু বলেন, চক্ষু চিকিৎসার সমন্বিত উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দূরবর্তী অস্ত্রোপচারের এই সাফল্য। তিনি বলেন, “উদ্ভাবনী ও নির্ভুল চক্ষুচিকিৎসা প্রযুক্তি চক্ষুস্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অভাব দূর করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।"

 

|| প্রতিবেদন: শিয়াবুর রহমান

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী