চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-২৮
2023-08-05 16:38:14

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ

ছেংতুতে জমকালো অ্যাথলিট-গালা

'ইয়ুথ ইন টাইম' বা সময়ের তারুণ্য শিরোনামে ৩১তম বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গ্রীষ্মকালীন গেমস অ্যাথলিট-গালা বিভিন্ন সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটিয়েছে।

 

সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতুতে ফিসু গেমস ভিলেজে অবস্থিত আসিয়ান আর্ট সেন্টার থিয়েটারে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় আকর্ষণীয় এ গালা। 

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলিট ডান জ্যাক ম্যাথিউকে গালা শো চলাকালীন সিচুয়ান অপেরার মুখ পরিবর্তনকারী অভিনয়শিল্পীর সাথে পারফর্ম করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।

ইভেন্টটি ছিল বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক উপাদানের একটি দুর্দান্ত সংমিশ্রণ, যেখানে ছিল ঐতিহ্যবাহী চীনা নান্দনিকতার সারাৎসার, মন্ত্রমুগ্ধকর লোকসংগীত, বিস্ময়কর মার্শাল আর্ট, চিত্তাকর্ষক রাস্তার নৃত্য, চমকপ্রদ জাদু প্রদর্শনী এবং দুর্দান্ত ইলেকট্রনিক সংগীতায়োজন।

 

মাসকট রোংপাওকে নিয়ে তৈরি স্যুভেনির জনপ্রিয়তায় শীর্ষে

ছেংতু ইউনিভার্সিয়াডের মাসকট রোংপাওকে নিয়ে তৈরি স্যুভেনির ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আকর্ষণীয় এ সব স্যুভেনির সংগ্রহ করতে ছ্যংতুর ৪০০ লাইসেন্সধারী স্যুভেনির-শপে ক্রেতাদের লম্বা লাইন পড়ে।

পাণ্ডা মাসকট রোংপাওয়ের মুখের আকৃতি সিচুয়ানের ঐতিহ্যবাহী অপেরায় ব্যবহৃত মেক-আপ শৈলীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মাসকটের হাতে একটি টর্চ রয়েছে যার শিখাটি ৩১ সংখ্যার আকারের যা ইউনিভার্সিয়াডের ৩১তম আসরের স্মারক।  রোংপাওয়ের কান, চোখ এবং লেজ সব কিছুতেই শিখার আদল রয়েছে।

অপেরা অভিনেতা, মহাকাশচারী, গাঢ় লাল জামা পরা পুতুল, ব্যাজ, খেলনা ফিগার, পিন এবং এমনকি রোংপাও-আকৃতির আইসক্রিমসহ হাজারের বেশি রোংপাও পণ্য পাওয়া যায় স্যুভেনির শপগুলোতে।

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছ্যংতু শহরে ২৮ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত, দ্বিবার্ষিক ইউনিভার্সিয়েডে ১১৩টি দেশ ও অঞ্চলের মোট সাড়ে ৬ হাজার তরুণ-ক্রীড়াবিদ ১৮টি খেলায় ২৬৯টি ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। 

 

২. চীনের সাংস্কৃতিতে মুগ্ধ ছেংতু ইউনিভার্সিয়াডের অতিথিরা

বিদেশি তরুণ তরুণীরা দেখছেন চীনের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প। চীনের পাখা ও অন্যান্য অবৈষয়িক সংস্কৃতির পরিবেশনা মুগ্ধ করছে বিদেশিদের। তারা খেলছেন চীনের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলা। তীর ছোঁড়া কিংবা  কাগজ কাটার মতো শিল্পে অংশ নিচ্ছেন বিদেশিরা। এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশে ছেংতু সিটিতে। এখানে আন্তর্জাতিক ইউনিভার্সিয়েড গেমস উপলক্ষ্যে দেশ বিদেশ থেকে এসেছেন তরুণ ক্রীড়াবিদরা।

চীনের অবৈষয়িক সংস্কৃতি মুগ্ধ করে এখানে আগত বিদেশি তরুণ ক্রীড়াবিদদের। সিংগাপুরের প্রতিনিধি দলের সদস্য ক্রীড়াবিদ জেং জিইয়ু উচ্ছ্বসিত নানা আয়োজনে অংশ নিতে পেরে।

 ‘ছেংতুতে এটা আমার প্রথম আসা। এখানে এত মানুষের সঙ্গে খেলায় অংশ নিয়ে আমি খুব খুশি। এটা সত্যিই মজার। এটা আমার প্রথম প্রচেষ্টা’।

জেং চীনের ঐতিহ্যবাহী সুচু খেলায় অংশ নেন। চীনের সাধারণ মানুষের মধ্যে আড়াই হাজার বছর ধরে সুচু খেলা প্রচলিত। এটা এক ধরনের ফুটবল।

 

ব্রাজিলের এই খেলোয়াড়ের মতোই অনেক বিদেশি ক্রীড়াবিদ ড্রাম বাজিয়ে দারুণ মজা পান।

‘আমি ড্রাম বাজাতে ভালোবাসি। আমি এখানে কালকেও এসেছি। এটা আমার দ্বিতীয়বার। এটা এতো মজার। আমি এই ড্রাম ভালোবাসি’।

অনেক ক্রীড়াবিদ পায়ে হেঁটে ঘুরছেন বিভিন্ন স্থানে। বাঁশের তৈরি কারুশিল্প,  কুচেং এবং কুছিনের মতো ঐতিহ্যবাহী চীনা বাদ্যযন্ত্রের সুরে মুগ্ধ হন তারা। স্পেনের ক্রীড়াপ্রতিনিধি দলের কোচ যেমন বলছিলেন।

‘আমি এই স্টাইলের গান ভালোবাসি। চায়নিজ মিউজিক ভালোবাসি। এর ধ্বনি, সুর আমার অনুভূতিকে আলোড়িত করে’।

ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতির পরিবেশনায় মুগ্ধ হন বিদেশি তরুণ ক্রীড়াবিদরা।

ছেংতু ইউনিভার্সিয়েড ভিলেজে এই বিদেশি প্রতিনিধিদের জন্য নানা রকম অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয় যেখানে তারা চীনের অবৈষয়িক সংস্কৃতির পরিচয় পেতে পারেন এবং সেগুলোতে অংশও নিতে পারেন। তারা নিজেরা চীনের ঐতিহ্যবাহী কাগজকাটা শিল্পে অংশ নেন। কাগজ কেটে তৈরি করেন নানা রকম নকশা।

বিভিন্ন রাশিচক্রের নকশা কিভাবে কাগজ কেটে ফুটিয়ে তুলতে হয় সেটা শেখেন তারা। নিজের নিজের রাশিচক্র ফুটিয়ে তোলেন কাগজ কেটে।

ঐতিহ্যবাহী দড়িশিল্প, শ্যাডো গেম, পাপেট ইত্যাদি অবৈষয়িক চীনা  সংস্কৃতি তাদের মুগ্ধ করে।

 

৩. সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণে প্রেসিডেন্ট সি’র নির্দেশনা

চীনা সংস্কৃতির অনুরাগী প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং আধুনিক চীনা সভ্যতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যবাহী চীনা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণের ওপর সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

২৮ জুলাই চেংতুতে বিশ্ব বিশ্বিদ্যালয় গেমসের উদ্বোধনের আগে ও পরে তার সিচুয়ান ও শায়ানসি প্রদেশে বিভিন্ন জাদুঘর, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান পরিদর্শন ও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা আবারও প্রমাণ করেছে যে, চীনের প্রেসিডেন্ট দেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণে কতটা নিরলস।

 ২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট সি সিচুয়ান প্রদেশের কুয়াংইউয়ান সিটিতে প্রাচীন সড়ক ব্যবস্থাপনা ‘সুতাওয়ে’র ছুইইউনলাং সেকশন পরিদর্শন করেন। তিনি ওই প্রাচীন সড়ক পথে কিছুটা হাটেন এবং খুব কাছে থেকে পার্শবর্তী প্রাচীন সাইপ্রেস বন অবলোকন করেন।

 

ছুই্‌ইউনলাং সেকশনে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সংরক্ষিত সাইপ্রেস বন-যেখানকার গাছগুলোর গড় বয়স হাজার বছরের বেশি। আর সবচেয়ে প্রাচীন গাছটির বয়স ২৩ শ বছরের বেশি।

চমৎকারভাবে সাইপ্রেস বন সংরক্ষণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট।

 

২৬ জুলাই প্রেসিডেন্ট সি তেইয়াং সিটিতে সানসিংতুই জাদুঘরের নতুন ভবন পরিদর্শন করেন।

৪ হাজার বছরের প্রাচীন সু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে প্রাপ্ত নির্দশনের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, সানসিংতুই ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসা পেয়েছে।

এখানে প্রাপ্ত সাংস্কৃতি নিদর্শন সংরক্ষণে আরও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন চীনের প্রেসিডেন্ট।

 

 ২৮ জুলাই ছেংতু ইউনিভার্সিয়াড উদ্বোধনের আগে বিশ্বনেতাদের সম্মানে আয়োজতি ভোজসভায় প্রেসিডেন্ট সি শহরটির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরেন।

সট: সি চিনপিং, চীনের প্রেসিডেন্ট

ছেংতু একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক শহর। আজ চীনের একটি অগ্রসর ও সুখী শহর ছেংতু। আমি আপনাদের শহরটি পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এতে আপনারা চীনের বহুমাত্রিক আধুনিকায়ন উদ্যোগ সরাসরি দেখতে পাবেন।

২৯ জুলাই বেইজিং ফেরার পথে প্রেসিডেন্ট সি উ্ত্তর-পশ্চিম চীনের শায়ানসি প্রদেশের হানছোং মিউনিসিপাল জাদুঘর পরিদর্শন করেন।

চীনা সংস্কৃতির প্রভাববলয় বাড়াতে এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্মীদের আরও উদ্যোগী হতে বলেন তিনি।

আপস…

বস্তুত, ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে আধুনিক চীনা সভ্যতা গড়তে জাতির আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে প্রেসিডেন্ট সি’র তাৎপর্যপূর্ণ এ সফর ও নির্দেশনায়।

---------------------------------------------------------------------------

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, মাহমুদ হাশিম, শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।