তাজা আদা চাষে সমৃদ্ধ সিন ফেং উপজেলা
2023-08-05 17:36:17


 

আদা চাষের প্রসঙ্গ এলে চীনের চ্যচিয়াং প্রদেশের চিয়াংসিংয়ের নানহু অঞ্চলের সিনফেং উপজেলার কথা উল্লেখ করতেই হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিনফেং উপজেলায় উত্পাদিত আদা ধীরে ধীরে খাবার-টেবিলে অন্য খাদ্যের পরিপূরক থেকে প্রধান উপাদানে পরিণত হয়েছে।

 

ভোর সাড়ে পাঁচটায় আদা চাষী লি ইউয়ে মিং ও তার স্ত্রী নিজেদের গ্রিনহাউসে আদা তোলা, পরিচ্ছন্ন করা এবং গাড়িতে ওঠানোসহ নানা কাজ ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের এমন কর্মব্যস্ততার কারণে লক্ষণীয় উপার্জন করেন লি ইউয়ে মিং দম্পতি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাষের নতুন পদ্ধতি এবং জলসেচসহ প্রযুক্তির পরিবর্তনে সিন ফেং উপজেলায় জলবায়ু ও পরিবেশের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে আদা চাষ ও বিক্রির সময় বেড়েছে। আদা চাষ থেকে উপার্জনও অনেক বেড়েছে। 

 

“আদার পর ধান চাষ হয়। গিনহাউস বছরের কোনও সময়ই ফাঁকা থাকে না।” কথাগুলো বলছিলেন লি ইউয়ে মিং।

 

জানা গেছে, ২০০৬ সালে স্থানীয় কৃষিবিজ্ঞান বিভাগের নেতৃত্বে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রচুর ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে মাটিতে জৈব-রাসায়নিক দেওয়া হয়, যা জিঞ্জার ব্লাইট রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিন ফেংয়ে নানা পদ্ধতির আদা চাষে গড় আয় বেড়েছে।

 

২০১৮ সালে সিন ফেং উপজেলা আদা চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি-ভিত্তিক বিমা চালু করে। আদা চাষীরা মাত্র কয়েকশ’ ইউয়ান ব্যয় করে বিমা পলিসি গ্রহণ করতে পারেন। এর ফলে তারা নিম্ন ও চরম তাপমাত্রা এবং প্রবল বৃষ্টিপাতসহ আবহাওয়াগত কারণে ক্ষতি নিয়ে চিন্তামুক্ত হতে পারেন। 

 

বেশি উপার্জন ও নিশ্চয়তার কারণে সিন ফেং উপজেলার চাষীরা আদা চাষে উৎসাহী। ২০২২ সালে এ উপজেলায় আদা চাষের পরিমাণ ৬০০ হেক্টর ছাড়িয়ে যায়। আদা চাষীর সংখ্যা ১ হাজার ৮শ’ অতিক্রম করে। এ উপজেলায় উত্পাদিত আদার পরিমাণ চ্যচিয়াং প্রদেশের মোট আদা উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি, বার্ষিক হিসাবে অর্থমূল্যে যা ২০ কোটি ইউয়ান। 

 

ভালো আদা চাষ করা হলো প্রথম পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিন ফেং অধিবাসীরা প্রক্রিয়াকরণের ওপর গুরুত্বারোপ দিয়ে আসছে, যার ফলে ছোট আদার বড় বাজার তৈরি হয়েছে।

 

সিন ফেং আদা উন্নয়ন কোম্পানি লিমিটেডের কারখানায় প্রবেশ করলে বেশ কম কর্মী দেখা যায়। সারি সারি উত্পাদন লাইনে সেখানে সতেজ আদা পরিস্কার, ডিহাইড্রেশন, লবণাক্তকরণ, জীবাণুমুক্তকরণ ও ফিলিংসহ ৩২টি প্রক্রিয়ার কাজ করছে যন্ত্র। তারপর ‘চিয়াং চুং হুয়াং’ লেখা প্যাকেটের মধ্যে সেগুলো প্যাকেজিং করা হয়।

 

এ কোম্পানির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, “প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি উন্নত করার পর আদার লবণাক্তকরণের সময় অনেক কমেছে। এগুলো আরও স্বাস্থ্যকর হয়েছে।” বর্তমানে এ কোম্পানির উন্নত ৮ ধরনের পণ্যের বার্ষিক উত্পাদন ৫০০ টন ছাড়িয়ে গেছে।

 

তাছাড়া প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সিন ফেং অধিবাসীরা ‘গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু করে সারা মৌসুমে আদা চাষ করতে পারছেন। কয়েক বছর আগে, সিন ফেং আদা প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান চ্যচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে। দু’টি প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টায় এমন প্রযুক্তি আবিস্কৃত হয়েছে, যার সাহায্যে কোনও প্রিজারভেটিভ যোগ না করেই ১২ মাস পর্যন্ত আদা সংরক্ষণ করা যায়। বর্তমানে ভোক্তারা বছরের চার মৌসুমেই সিন ফেং’র তরতাজা আদা খেতে পারে। ক্রয়ের সময় বাড়ার ফলে সিন ফেং আদার মূল্যও অনেক বেড়েছে।

 

জানা গেছে, বর্তমানে সিন ফেং উপজেলায় ৮টি আদা প্রক্রিয়াকরণের প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর বার্ষিক উত্পাদনের পরিমাণ ১ হাজার টন। অর্থের হিসাবে এটা ৫ কোটি ইউয়ানের বেশি। 

 

পাশাপাশি আদা প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি উদ্ভাবন এবং পণ্য ধরে রাখতে কৃষকদের উত্সাহ দেয় সিন ফেং সরকার। চলতি বছরের মার্চ মাসে এ উপজেলার আদা লবণাক্তকরণের কৌশল চিয়াংসিন শহরের অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

 

কৃষিক্ষেত থেকে খাবারের টেবিল পর্যন্ত – সব জায়গায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে সিন ফেং আদা। চিয়াং চু হুয়াং ই-কমার্স কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উ সিয়া ২০১৪ সাল থেকে অনলাইনে তার আদা বিক্রি শুরু করেন। ২০১৬ সালে কোম্পানিটির আদা বিক্রিতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয় ৩৫ শতাংশ। এখন প্রতিদিন অনলাইনে সাড়ে ৩ হাজার ইউয়ানের আদা বিক্রি করেন তিনি। লাইভস্ট্রিম ছাড়া উ সিয়া ভিডিও তৈরিসহ নানা পদ্ধতিতে আদা বিক্রির চেষ্টা করছেন।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘সিন ফেং আদা’র ব্র্যান্ড আরও বেশি খ্যাতি পেয়েছে।। ব্রাউন সুগার আদা পেস্ট, ক্যান্ডিড আদা, সিন ফেং আদা শ্যাম্পুসহ বৈশিষ্ট্যময় আদা-জাত পণ্যের কারণে সিন ফেং আদা আরও জনপ্রিয় হয়েছে।