চীনের সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়ন
2023-08-04 09:35:27

বন্ধুরা, চীন ও বাংলাদেশ প্রাচীনকাল থেকেই সামুদ্রিক রেশমপথের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং গভীর মৈত্রী স্থাপন করেছে। আসলে চীন সামুদ্রিক অর্থনীতি উন্নয়নে, সমুদ্রের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে খুব গুরুত্বারোপ করে। এ ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশের বিনিময় করার অনেক কিছুই আছে। আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে এক্ষেত্রে চীনের কিছু প্রচেষ্টা শেয়ার করব।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দেশের সামুদ্রিক কাজের উন্নয়নের ওপর অনেক গুরুত্ব দেন। তিনি সমুদ্র খাতের শক্তিশালী দেশ গঠনে ধারাবাহিক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সমুদ্রের অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ চেতনা উত্থাপন করেছে। বিশ্বের সমুদ্র  পরিচালনায় চীনের এসব প্রস্তাবনা আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে।

২০১৮ সালের জুন মাসে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সানতুং প্রদেশ পরিদর্শনকালে ছিংতাও শহরের সমুদ্রবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক জাতীয় পরীক্ষাগার পরিদর্শন করেন। তিনি তখন জোর দিয়ে বলেছিলেন, সামুদ্রিক অর্থনীতি উন্নয়নের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল। সমুদ্র খাতের শক্তিশালী দেশ গঠনে আরো ভালোভাবে সমুদ্রের যত্ন নিতে হবে, বুঝতে হবে, সমুদ্র-বিষয়ক বিজ্ঞান উদ্ভাবন দ্রুততর করতে হবে।

 

তিনি বলেন, আমাদের উচিত সমুদ্র খাতের শক্তিশালী দেশ গঠন করা। আমার সবসময় এ আস্থা আছে। সমুদ্রের অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান গবেষণা উন্নয়ন করতে হবে এবং তা ভালো করে করতে হবে। সমুদ্র সম্বন্ধে আমাদের জানা বোঝা ক্রমশ বাড়ছে। পরবর্তীতে সমুদ্র খাত উন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে।

২০২২ সালের জুলাই মাসে, সি চিন পিং হাইনান প্রদেশ পরিদর্শনের সময় উল্লেখ করেন, সামুদ্রিক শক্তিশালী দেশ গঠন করা হল চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবন বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত কর্তব্য। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে, চীনের সমুদ্র অর্থনীতি মেলায় পাঠানো অভিনন্দনবাণীতে জনাব সি চিন পিং বলেন, সমুদ্র হল, উচ্চ মানের উন্নয়নের কৌশলগত বিষয়। সমুদ্রবিষয়ক বিজ্ঞানের উদ্ভাবনকে দ্রুততর করতে হবে, সমুদ্রের সম্পদ উন্নয়নের সামর্থ্য বাড়াতে হবে এবং সমুদ্রবিষয়ক কৌশলগত নতুন শিল্প লালন করতে হবে।

 

সমুদ্র মানবজাতির বেঁচে থাকা এবং উন্নয়নের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে, বিশ্বের সমুদ্র পরিচালনার বিষয়াদি বর্তমান বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সি চিন পিং বার বার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশ্বের সমুদ্র পরিচালনায় চীনের প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি সামুদ্রিক খাতে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব ভিত্তিক সহযোগিতায় সমর্থন করেন। তিনি চান সক্রিয়ভাবে ‘নীল অংশীদারি সম্পর্ক’ স্থাপন করতে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে, ছিংতাও শহরে চীনা গণ-মুক্তিফৌজের নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকীতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সি চিন পিং সমুদ্রের অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ চেতনা উত্থাপন করেন। তিনি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে মানবজাতি এবং সমুদ্রের সুষম সহাবস্থানের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন,

আমাদের থাকা এই নীল পৃথিবী, সমুদ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে ভাগ করা হয়নি, বরং সমুদ্রের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের জনগণ অভিন্ন কল্যাণের সম্পর্কে যুক্ত। আমাদের উচিত জীবন রক্ষার মতো সমুদ্র রক্ষা করা। চীন সার্বিকভাবে জাতিসংঘ কাঠামোর আলোকে সমুদ্র পরিচালনা-ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা ও নিয়ম প্রণয়নে যোগ দেয়, সমুদ্রের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে। চীন সমুদ্রের প্রাকৃতিক সভ্যতা নির্মাণের ওপর অনেক গুরুত্বারোপ করে, চীন টেকসইভাবে সমুদ্রের পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কাজ জোরদার করছে, সমুদ্রের জীববৈশিষ্ট্য রক্ষা করছে এবং সমুদ্র সম্পদের সুশৃঙ্খল ব্যবহার বাস্তবায়ন করছে। যাতে বংশধরদের একটি নীল সমুদ্র দেওয়া যায়।

 

সিপিসি’র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর থেকে, চীনের সমুদ্র শক্তিশালী দেশ গঠনে অব্যাহতভাবে নতুন সাফল্য অর্জিত হচ্ছে। সামুদ্রিক জিডিপি দশ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। সামুদ্রিক অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে চীনের সামুদ্রিক জিডিপি ৯.৪৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে চীনের সামুদ্রিক জিডিপি ২.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান হয়। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.১ শতাংশ বেড়েছে। চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ উপ-মন্ত্রী, দেশের সমুদ্র ব্যুরোর প্রধান ওয়াং হুং বলেন,

সিপিসি’র অষ্টাদশ কংগ্রেসের পর থেকে চীনের সমুদ্রের জিডিপি ৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে। সামুদ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

চীন সক্রিয়ভাবে নতুন উন্নয়নের ধারণায় উন্নয়নের নতুন কাঠামো স্থাপন দ্রুততর করেছে এবং আধুনিক সামুদ্রিক শিল্প ব্যবস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছে।

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)