চলতি বাণিজ্যের ২৯তম পর্বে
2023-08-04 20:42:20

চলতি বাণিজ্যের ২৯তম পর্বে থাকছে:

১. চীনা অর্থনীতির অন্যতম প্রাণশক্তি পর্যটন

২. সারা বিশ্বে চীনা অর্থনীতির প্রতিনিধি আরএমবি আরও শক্তিশালী

৩. চীনা বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হতে চায় মার্কিন দুই চেইন কোম্পানি স্টারবাক্স ও কোকাকোলা

 

চীনা অর্থনীতির অন্যতম প্রাণশক্তি পর্যটন

চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনে এখন ভরা গ্রীষ্ম। এই গরমে একটু শীতলতার সন্ধানে পর্যটকরা যাচ্ছেন সমুদ্রতীরের শহরে এবং পাহাড়ি পর্যটনস্পটগুলোতে। পর্যটনের কারণে স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙা হচ্ছে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পর্যটনকে এখন চীনে দারুণ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে পর্যটন শিল্পের রমরমা অবস্থা অর্থনীতির বিকাশে সাহায্য করছে।

টাইগার বিচ। পর্যটকরা আসছেন সমুদ্রতীরে একটু আনন্দে সময় কাটানোর আশায়। উত্তর পূর্ব চীনের লিয়াওনিং প্রদেশের বিখ্যাত পর্যটন শহর তালিয়ান সিটি। উপকুলবর্তী এই শহরে গ্রীষ্মমৌসুমে ভিড় করছেন পর্যটকরা।

চীনে এখন গ্রীষ্মের ছুটি চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। গ্রীষ্মেরদাবদাহে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন সমুদ্রতীরের শহরগুলোতে। বোহাই সাগরের তীরে তালিয়ান সিটি একটি বিখ্যাত পর্যটন শহর। এখানকার টাইগার বিচ ওশেন পার্কে প্রতিদিন ২০ হাজার পর্যটক আসেন।

পর্যটক

”এবার আমি তালিয়ান এসেছি মূলত আমার  ছেলেকে টাইগার বিচ ওশান পার্ক দেখাতে এবং  সৈকতে কিছুটা আনন্দ করতে। আমরা এমন স্থানে এসেছি যেখানে সাগরের বাতাস প্রশান্তি নিয়ে আসে।”

পর্যটকদের কারণে স্থানীয় ক্যাটারিং শিল্প, হোটেল এবং অন্যান্য ব্যবসাও চাঙা হয়ে উঠেছে। জমে উঠেছে স্থানীয় ফুড মার্কেটগুলো।

চীনে এখন ভরা গ্রীষ্ম। এইসময় সাগরসৈকতে পর্যটকদের ভিড় জমেছে। থিমপার্কগুলোতে যাচ্ছেন পর্যটকরা।

শাংরি লা তালিয়ান হোটেলের ডিরেক্টর অব মারকেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন ওয়াং তানসিয়া জানান, হোটেলগুলোতে এখন ব্যবসা মৌসুম তুঙ্গে।

”বর্তমানে হোটেলে গড়ে ৯০ শতাংশই প্রতিদিন ভরে যাচ্ছে। গতবছরের এই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি ব্যবসা হচ্ছে।”

পর্যটন ব্যবসার কারণে এয়ারপোর্ট, ট্রেন ও বাসস্টেশনগুলোও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। পরিবহন ব্যবসাও চাঙা হয়েছে।

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ছোংছিং মহানগরীতে পর্যটকরা আসছেন। এখন ফুলের বাগান ও পার্কগুলোতে বিভিন্ন রঙের ফুলের সমারোহ। ফুলের বাগানের চমৎকার দৃশ্য ক্যামেরায় ধরে রাখতে পর্যটকদের আগ্রহের সীমা নেই।

এক নারী পর্যটক বলছেন, “এই ফুলগুলো তৃণভূমিতে দারুণ সুন্দর দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। এই দৃশ্য যেমন সুন্দর তেমন স্বপ্নময়।”

চীনে এখন সাংস্কৃতিক পর্যটনও দারুণ জনপ্রিয়। মিউজিক কনসার্টগুলোতে যাচ্ছে দর্শক।

ছোংছিংয়ের ব্ল্যাকভ্যালি পর্যটন স্থানে শনিবার রাতে বসে গানের আসর। ২৯ জুলাই থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত চারটি সংগীত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

গ্রীষ্মের ছুটিতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক  স্থানে পর্যটকরা যাচ্ছেন। স্কুলের সামার ভ্যাকেশনের সুযোগে শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পর্যটনে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। অন্যান্য সংগঠনও এভাবে গ্রুপ টুরের আয়োজন করেছে। বেইজিংয়ের থিয়েনথানসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছেন পর্যটকরা। অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আকর্ষণ করছে পর্যটকদের।

কালচারাল টুরিজম জনপ্রিয় হওয়ার কারণে আনুষাঙ্গিক সকল শিল্পই বিকশিত হচ্ছে। হোমস্টে, হোটেলগুলো যেমন ভরে উঠছে, তেমনি জমে উঠছে নাইট মার্কেট, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিও। স্থানীয় পর্যটন বৃদ্ধি গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

ভিনদেশে চীন

সারা বিশ্বে চীনা অর্থনীতির প্রতিনিধি আরএমবি আরও শক্তিশালী

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: সারা বিশ্বে চীনের প্রতিনিধি হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চীনা মুদ্রা রেনমিনবি বা আরএমবি’। বিশেষ করে এর মাধ্যমে ক্রমেই বাড়ছে আন্তর্জাতিক লেনদেন। ফলে চীনের বাইরে অন্যান্য দেশগুলোতেও ব্যবহার করার সুযোগ মিলছে চীনা মুদ্রা আরএমবি’র।

পরিসংখ্যান বলছে, বৈদেশিক লেনদেনে আরএমবি ব্যবহারের হার আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে ১৮ শতাংশ বেড়েছে। আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শক্তিশালী নীতি কাঠামো ও বাজারের চাহিদা বাড়ার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

বহুদিন ধরেই চেষ্টা চলছে বৈদেশিক লেনদেনে সরাসরি চীনা মুদ্রা আরএমবি ব্যবহারের জন্য। ছোট ছোট নানা উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ফলে বর্তমানে ধীরে ধীরে বাড়ছে আরএমবি ব্যবহারের হার। 

চীনা মুদ্রা আরএমবি বা ইউয়ানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন বাড়াতে চীনের স্থানীয় সরকার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যুগপথ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষ করে ইউয়ানের বিনিময় মূল্য আরো স্থিতিশীল ও বাজারমূল্য অনুযায়ী রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আরো বেশি প্রতিষ্ঠান আরএমবি’র মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন করতে উৎসাহিত হচ্ছে।

এদিকে চীনের বাইরে কাজ করা শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আরএমবি ব্যবহারে উৎসাহিত করার কাজ করছে চীন সরকার। আবার চীনের সবচেয়ে বড় ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে নিয়মিতই।

চীনের সবচেয়ে বড় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না –আইসিবিসি বলছে, বিনিয়োগ ও ঋণ কার্যক্রমে এখন আরো বড় ভূমিকা পালন করছে আরএমবি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিদেশী বিনিয়োগে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে খুব শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। এরইমধ্যে ৪৫০ বিলিয়ন ইউয়ানের একটি বিশেষ তহবিল গঠনের পরিকল্পনাও করছে তারা। একইসঙ্গে ঋণ গ্রহীতা বা গ্রাহকদের জন্য পেশাদার ও নিরাপদ সেবা নিশ্চিত করারও পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের বাইরে নানা লেনদেনে আরএমবি ব্যবহারের হার আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে ১৮ শতাংশ বেড়েছে। আবার আরএমবিতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২০২২ সালে বেড়েছে ৭০ শতাংশ। আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শক্তিশালী নীতি কাঠামো ও বাজারের চাহিদা বাড়ার কারণেই বিনিময়ে সরাসরি আরএমবি ব্যবহারের পরিমাণ এতোটা বেড়েছে।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনা বাজারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হতে চায় মার্কিন দুই চেইন কোম্পানি স্টারবাক্স ও কোকাকোলা

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের ছোট শহরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের চেইন কফিশপ স্টারবাক্স। অন্যদিকে চীনা বাজার ধরতে মরিয়া কোকা-কোলা। উভয় প্রতিষ্ঠানই করোনা পরবর্তী সামনের বছরগুলোকে লক্ষ্য করে বাজার সম্প্রসারণ নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। বিশেষ করে চীনের বাজার ধরতে কার্যক্রম জোরদার করেছে মার্কিন বহুজাতিক কোমল পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানি কোকাকোলা।

২০২০ সালে যেখানে স্টারবাক্সের স্টোরের সংখ্যা ছিলো সাড়ে ৬শ’ সেখানে ২০২২ সালে স্টোরের সংখ্যা আরো আড়াইশ’ বেড়ে যায়। মূলত চীনে কার্যক্রম শুরুর মাত্র অল্প কিছু দিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা পায় পশ্চিমা চেইন কফিশপ স্টারাবাক্স।

এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের মধ্যবিত্তের সক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করায় এতো দ্রুত সফলতা পায় এই কোম্পানিটি। তাদের প্রত্যাশা, ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের আউটলেটের সংখ্যা পৌঁছে যাবে ৩ হাজারে।

চীনের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের লক্ষ্য করে চীনে ব্যবসার প্রসার শুরু করে পশ্চিমা জনপ্রিয় চেইন কফিশপ স্টারবাক্স। বিশেষ করে ছোট ছোট শহরগুলোতে আউটলেট স্থাপন শুরু করে তারা।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে চীনে তাদের মোট আউটলেটের সংখ্যা ছিলো ৬৫৪টি। এর মাত্র ৯০ দিনের মাথায় গিয়ে আউটলেটের সংখ্যা বাড়ানো হয় আরো ২২৯টি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানির লক্ষ্যই ছিলো মধ্য ও নিম্নবিত্ত গ্রাহকদের কাছে পৌছে যাওয়া। গেল বছরের সেপ্টম্বরে নেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে চীনজুড়ে অন্তত ৩ হাজার কফিশপ আউটলেট প্রতিষ্ঠা করা। স্টারবাক্স চায়নার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা লিউ ওয়েনচুয়ান জানান, উত্তর আমেরিকার বাইরের কোন দেশে এটাই কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারণ।

চীনের বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্টান আই-রিসার্চ কনসালটেন্সি বলছে, বড় শহরগুলোতে প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় ছোট ছোট শহরের সব পর্যায়ের ভোক্তাকে লক্ষ্য করে নীতি সাজিয়েছে এই পশ্চিমা কোম্পানিটি।

এদিকে, অফলাইন ও অনলাইনে কোম্পানির পণ্যের প্রচারণা বাড়ানো, পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন এবং উৎপাদনে আরো বেশি বিনিয়োগ করার উপর জোর দিয়েছে কোকাকোলা। এসব কার্যক্রমের কিছু প্রমাণও মিলেছে গেল বছরের কার্যক্রমে। বিশেষ করে ২০২২ সালেই চীনে নতুন করে আরো ২০টি পণ্য বাজারজাত করা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া প্রদেশের আটলান্টা ভিত্তিক দ্য কোকা-কোলা কোম্পানি।

চীনের বাজার প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেমস কুইনসে সম্প্রতি বলেছেন, চীনের বাজারে কোকাকোলার নতুন পণ্য ও বিনিয়োগ ব্যবসায় আরো বেশি মুনাফা নিয়ে আসবে। নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০১৯ সালে করোনার প্রভাবে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে গেল বছর কোকা-কোলার বাজার ১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। বিশেষ করে ভারত ও ভিয়েতনামে কোকো-কোলার বাজার কিছুটা চাঙ্গা হলেও চীনের বাজারে চাহিদা কিছুটা কমে যায়।

চীনের খাদ্য ও পানীয় খাতের বিশ্লেষক ছু তানপেং কোকা-কোলার বিনিয়োগ ও বাজারজাতকরণ নীতি বিশ্লেষন করেছে বলেছেন, চলতি বছর কোকা-কোলা চীনের বাজারে প্রায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং গেল বছরের যে মন্দাভাব সেটা কেবলই ক্ষণস্থায়ী।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কোকা-কোলার বাণিজ্য ৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এসব বাণিজ্য থেকে কোকাকোলার ব্যবসায়ীক লাভ হয়েছে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

এদিকে ডিজিটাল মাধ্যমে চীনের ক্রেতাদের কাছাকাছি আসতে অনলাইনে প্রচারণা বাড়িয়েছে কোকা-কোলা। বিশেষ করে আলিবাবা ও জেডি’র মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার পণ্যের জনপ্রিয়তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।