আকাশ ছুঁতে চাই ২৯
2023-08-03 19:49:23

১. একশ দশ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে চান যে নারী

২. চীন দেখে মুগ্ধ রুশ মেয়ে সোফিয়া

৩. চীন ও ইন্দোনেশিয়ার ফার্স্টলেডিদের দারুণ কিছু সময়

৪. চীনের নারী আন্দোলনের ইতিহাসে সিপিসির ভূমিকা

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

একশ দশ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে চান যে নারী

বয়সকে হার মানিয়ে মানবসেবার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন ৯৪ বছর বয়সী নারী চাং নিইয়ুয়ান।  নার্সিং পেশায় স্বেচছাশ্রমের ভিত্তিতে তিনি স্থাপন করেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্মাননা। চলুন শোনা যাক এই মহিয়সী নারীর গল্প।

চাং চিনইয়ুয়ান। বয়স তার ৯৪ বছর। তিনি একজন নার্স। ১৯৯৩ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেন। কিন্তু এখনও তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে চলেছেন। তিনি ১১০ বছর বয়স পর্যন্ত মানুষের সেবায় কর্মক্ষম থাকতে চান।

 চিয়াংসি প্রদেশের নানচাং শহরের কলেজ থেকে তিনি নার্সিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন।

১৯৪৯ সালে চীনে মহান কমিউনিস্ট বিপ্লবের সময় থেকে হাসপাতালে নার্সের কর্তব্যপালন শুরু করেন চাং।

                                               

২০২৩ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস এবং ফ্লোরেন্স নাইটংগেল ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন থেকে আন্তর্জাতিক অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। এই সম্মাননা তাদেরই দেয়া হয় যারা সেবা, শিক্ষা, ব্যবস্থাপনা বা গবেষণায় আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

এই সম্মানসূচক আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড গ্রহণকারী প্রথম চীনা নাগরিক হলেন চাং।

চাং বিশেষভাবে কৃতিত্ব রেখেছেন প্রবীণদের সেবায়। তিনি একটি স্মার্ট এলডারলি কেয়ার সার্ভিস প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন। এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে দক্ষতার সঙ্গে রোগীকে পরিষেবা প্রদান করা হয়।

পঞ্চাশের দশকে যখন নানছাং হাসপাতালে নার্স হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন, তারপর থেকে তিনি নার্সিং সেবাকে আরও উন্নত করার জন্য নানা রকম পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এমনকি ধুলো না উড়িয়ে কিভাবে রোগীর বিছানার চাদর বদলানো সম্ভব সেটিও তিনি বের করেছেন।

১৯৯৩ সালে তিনি অবসর নেন। কিন্তু এই মহান পেশায় তিনি স্বেচ্ছাশ্রমী হিসেবে কাজ করতে থাকেন।একজন প্রবীণ রোগীর বাড়িতে তিনি দেখেন তার রক্তচাপ অনিয়মিত এবং রোগী ওষুধ খেতে প্রায়ই ভুলে যান। তিনি আরও দেখতে পান অনেক পরিবারেই রোগীর সেবা নিয়ে অজ্ঞতা ও অসচেতনতা রয়েছে। তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ গঠন করেন।

কিন্তু প্রথমদিকে তারা গ্রহণযোগ্যতা পাননি। অনেকে এমনকি তাদের চোর বলেও মনে করেছে।তবে ধীরে ধীরে এই বিরুপতা কেটে গেছে। মানুষ তাদের দ্বারা উপকৃত হয়েছে।অনেক পরিবারেই তিনি এখন ভীষণ আপন। তাকে পরিবারের সদস্য বলে মনে করেন অনেক রোগী। অনেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তাকে দেখে। ষোলোজন অবসরপ্রাপ্ত নার্স নিয়ে প্রথমে তার গ্রুপ গড়ে ওঠে।

২০০৯ সালের অক্টোবরে চাং হোম-বেজড একটি প্রবীণ যত্ন স্বেচ্ছাসেবী দল গড়ে তোলেন। বর্তমানে তার স্বেচ্ছাসেবী দলে ২০ হাজার সদস্য আছেন। ৩৫০টি মহল্লায় সাত লাখের বেশি মানুষকে তারা বিনামূল্যে নার্সিং সেবা দিচ্ছেন।

চাংয়ের বয়স ৯৪ বছর হলেও তিনি এখনও পুরোপুরি কর্মক্ষম। তিনি মনে করেন বয়স যাই হোক যতদিন বেঁচে থাকবেন ততোদিন মানুষের সেবায় কাজ করে যাবেন। তিনি চান একশ দশ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

চীন দেখে মুগ্ধ রুশ মেয়ে সোফিয়া

চীনে প্রথমবারের মতো এসেছেন রাশিয়ার নৃত্যশিল্পী সোফিয়া। সিনচিয়াংয়ে আন্তর্জাতিক নৃত্য উসবে যোগ দিতে চীন সফর করেন তিনি। চীনা খবার, পোশাক, সাজসজ্জা, প্রকৃতি সবকিছুই মুগ্ধ করে সোফিয়াকে। চলুন শুনি সেই গল্প।

 

চীন মুগ্ধ করেছে রাশিয়ার মেয়ে সোফিয়াকে। চীনা পোশাক, খাবার, সংস্কৃতি সবকিছুই অসাধারণ সুন্দর ও শৈল্পিক বলে মনে হয়েছে তার কাছে।

 

উত্তর পশ্চিম চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। এর রাজধানী উরুমছি। উরুমছিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় ৬ষ্ঠ চায়না সিনচিয়াং আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসব। এই উৎসবে এশিয়া আফ্রিকা ইউরোপ থেকে এক হাজারের বেশি শিল্পী অংশ নেন। চীনের লোকজ শিল্পীরাও এখানে নৃত্য পরিবেশনা করেন।

এই উৎসবে যোগ দিতে রাশিয়ার নৃত্যশিল্পী সোফিয়া এসেছেন সিনচিয়াংয়ে।

তার পুরো নাম সোফিয়া ম্যাক্সিমোভনা এফ্রেমেনকো। তিনি রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী সংগীত ও নৃত্যনাট্য জোরেনকা পরিবেশন করেন। এটি রাশিয়ার সারাতভ অব্লেস্ত  প্রশাসনিক এলাকার বালাশভ শহরের একটি বিশেষ নৃত্য।

সোফিয়া তার প্রথম চীন সফরে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন। তিনি হানফু পরে চীনা নারীর মতো সাজসজ্জা করে খুব আনন্দ পেয়েছেন। উরুমছি ঘুরে দেখেছেন তার সহশিল্পীদের সঙ্গে। তিনি আবার সিনচিয়াং ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

 

চীন ও ইন্দোনেশিয়ার ফার্স্টলেডিদের দারুণ কিছু সময়

সিচুয়ান প্রদেশের ছেংতুতে চলছে ইউনিভারসিয়েড গেমস। এই বিশাল আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আসেন ফার্স্টলেডি ইরিয়ানা জোকোয়ি। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের স্ত্রী ফং লি ইউয়ানের সঙ্গে চমৎকার কিছু সময় কাটান তিনি।

ফং লি ইউয়ান চায়না  নিউ হোটেলে ইরিয়ানাকে স্বাগত জানান। তারা একসঙ্গে সিচুয়ানের এমব্রয়ডারিশিল্প, কারুশিল্প, চীনামাটির পাত্র, বাঁশের কারুসামগ্রী, রূপার জালের তৈরি অসাধারণ কিছু শিল্পকর্ম দেখেন।

চীনের ঐতিহ্যবাহী চা পরিবেশনা শিল্পে মুগ্ধ হন ইরিয়ানা।

দুই ফার্স্টলেডির অবশ্য এটাই প্রথম সাক্ষাত নয়। তাদের আগের বৈঠকগুলোর আনন্দময় স্মৃতিচারণ করেন ফং লিইউয়ান। তিনি বলেন, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতির মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তিনি আশা করেন দুই দেশের মৈত্রী গভীরতর হবে। ছেংতুর স্থানীয় সংস্কৃতি ও দৃশ্য উপভোগের জন্য ইরিয়ানাকে স্বাগত জানান তিনি।   এসব আয়োজনের জন্য ফংলিইউয়ানকে ধন্যবাদ জানান ইরিয়ানা । তিনি চীনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যরক্ষা এবং এর লোকজ সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষার প্রশংসা করেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

 

চীনের নারী আন্দোলনের ইতিহাসে সিপিসির ভূমিকা

চীনের নারী আন্দোলনের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা গৌরবের সঙ্গে চীনের নারী অধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা চীনে নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠাকে সম্ভব করেছেন। সিপিসির এই গৌরবময় ভূমিকা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি বই।

সম্প্রতি চীনের জাতীয় নারী ফেডারেশন ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) এক শতাব্দী ধরে নারী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়’ এই শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করেছে।

বইটিতে বিগত শতাব্দীতে সিপিসি’র নেতৃত্বে চীনা নারী আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস এবং প্রধান অর্জনগুলোর একটি ব্যাপক ও পদ্ধতিগত পর্যালোচনা করা হয়েছে।। গভীরভাবে নারী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দলের সঞ্চিত মূল্যবান অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে। । বইটিতে সিপিসি’র নেতৃত্বে চীনের  নারীদের  নিজের স্বপ্ন, পরিবারের স্বপ্ন, দেশের স্বপ্ন ও জাতির স্বপ্ন সমন্বয় করার কঠিন সংগ্রাম এবং তা বাস্তবায়ন করার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।

বইটিতে চীনের নারী আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব এবং কর্মীদের অনেক আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বইটি শুধু চীনের নারী অধিকার আন্দোলনের নয় বরং বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশে নারী অধিকার অর্জনের ইতিহাসেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

 

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল

কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন দুর্বার ও আফরিন মিম