আগস্ট ২: গত পয়লা আগস্ট ছিল চীনের সশস্ত্রবাহিনী দিবস। দিনটি ছিল চীনা গণমুক্তি ফৌজ তথা পিএলএ প্রতিষ্ঠার ৯৬তম বার্ষিকী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পিএলএ বড় দেশের সশস্ত্রবাহিনীর আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করে আসছে। পাশাপাশি, পিএলএ সার্বিকভাবে নতুন যুগের আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রেখে আসছে। চীনা গণমুক্তি ফৌজ ইতোমধ্যেই বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষের শক্তি হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।
স্থানীয় সময় ১৬ জুলাই সন্ধ্যায়, কিরিবাতির একটি বন্দরে, চীনা নৌবাহিনীর ‘পিস আর্ক’ নামক একটি ভাসমান হাসপাতালে চীনা চিকিত্সক ও নার্সদের সাহায্যে, স্থানীয় এক নারী একটি সুস্থ শিশুর জম্ম দেন। এ নারী বলেন,"পিস আর্কের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। এখানকার প্রত্যেক চিকিত্সক ও নার্স সবসময় আমার ও আমার বাচ্চার যত্ন নিয়েছে। আমি অনেক ভাগ্যবান।”
কিরিবাতির প্রেসিডেন্ট তানেতি মামাউ স্থানীয় সময় ১৮ জুলাই ‘পিস আর্ক’ পরিদর্শনের সময় এই শিশুর নাম দেন ‘আকেন্দ্রি’, স্থানীয় ভাষায় যার অর্থ হচ্ছে ‘পিস আর্ক’। ‘পিস আর্ক’ ভাসমান হাসপাতাল হচ্ছে চীনা সশস্ত্রবাহিনীর বিশ্বশান্তি রক্ষা ও মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টার প্রতীক। ২০০৮ সাল থেকে পিস আর্ক অনেক বার বিভিন্ন দেশে গিয়ে মানবিক চিকিত্সা-সেবা দিয়েছে। মোট ৪৩টি দেশ ও অঞ্চলের আড়াই লক্ষাধিক মানুষ এই হাসপাতালে সেবা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত হাসপাতালে দেড় হাজারেরও বেশি অপারেশান হয়েছে।
চীনা সশস্ত্রবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। স্থানীয় সময় ২৫ জুলাই, কঙ্গো কিনশাসাতে পাঠানো চীনের ২৬তম শান্তিরক্ষা বাহিনীর সব কর্মকর্তা ও সেনাকে ‘মেডেল অব অনার ফর পিস’ দেওয়া হয়। এটি হচ্ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকারীদেরের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদেশগুলোর মধ্যে চীন সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে থাকে। ৩০ বছরেও বেশি সময় ধরে, চীনা সশস্ত্রবাহিনী মোট ২৫টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। এ সব মিশনে মোট ৫০ হাজারের বেশি চীনা সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈন্য অংশগ্রহণ করেছেন। চীনা শান্তিরক্ষীরা মোট ২০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে গিয়েছেন, মোট ১৮ হাজার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ বা মেরামত করেছেন। পাশাপাশি, তাঁরা সশস্ত্র প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ছোট-বড় ৬২০০টি মিশন সম্পন্ন করেছেন। তাঁরা মোট ২ লাখ ৬৭ হাজার রোগীকে চিকিত্সা-সেবাও দিয়েছেন। ‘শান্তিরক্ষার মৌলিক শক্তি’ হিসেবে আন্তর্জাতিক সমাজ চীনা শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে।
চীনা সশস্ত্রবাহিনী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দুর্যোগের সময় উদ্ধার ও মানবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে আসছে। অ্যাডেন উপসাগর এবং সোমালি সাগরে চীনা নৌবাহিনী সাধারণ বেসামরিক জাহাজকে এসকর্ট সুবিধা দিয়ে থাকে। চলতি বছরের ৭ জুলাই পর্যন্ত, চীনা নৌবাহিনী ৭১০০টিরও বেশি দেশী বা বিদেশী জাহাজকে নিরাপত্তা দিয়েছে। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চাং সিও কাং বলেন, “সিপিসি-র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের পর থেকে, চীনা সশস্ত্রবাহিনী বড় দেশের সশস্ত্রবাহিনীর আন্তজাতিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আসছে। সার্বিকভাবে নতুন যুগের আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতাও এগিয়ে নিয়ে আসছে এই বাহিনী। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষাসহ নানান ক্ষেত্রে পিএলএ ভূমিকা রাখছে। চীন সবসময় বিশ্বের শান্তির নির্মাণকারী, বিশ্বের উন্নয়নে অবদানকারী, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার রক্ষাকারী। চীনের সশস্ত্রবাহিনী অব্যাহতভাবে বাস্তব কার্যক্রমের মধ্যমে বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে। আন্তরিকতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে বিশ্বের অভিন্ন কল্যাণের জন্য আরও বেশি কাজ করবে পিএলএ।”
(আকাশ/আলিম/জিনিয়া)