শেকড়ের গল্প | পর্ব ২৯
2023-08-02 18:42:28

এবারের পর্বে রয়েছে

১. জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় চীনের অবদান প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে

২. কৃষিতে অবদান রাখছেন চীনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা

৩. এশিয়ার দীর্ঘতম গাছ এখন তিব্বতে

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

১. জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় চীনের অবদান প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে

গেল এক দশকে বনাঞ্চল রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। সম্প্রতি চীনের একটি প্রদেশে ভ্রমণ করেছে জাতিসংঘের একটি প্রতিনিদি দল। জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায়  চীনের উদ্যোগগুলো দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছেন তারা।

                                               

বিভিন্ন দেশের জীববৈচিত্র্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল। সম্প্রতি চীনের ইউননান প্রদেশ পরিদর্শন করেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির চীন বিষয়ক প্রতিনিধি বিয়েট ট্রাংকম্যান।  প্রদেশের তেহং তাই এবং চিংপো প্রিফেকচারের জীববৈচিত্র পর্যবেক্ষণ করেন তারা।  বিয়েট ট্রাংকম্যান বলেন, পরিবেশ সুরক্ষায় চীন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো।

বিয়েট ট্রাংকম্যান, ইউএনডিপির চীন বিষয়ক প্রতিনিধি

"আপনি যদি প্রকৃতিকে অক্ষত অবস্থায় রেখে দেন, তাহলে সে নিজেই নিজের যত্ন নিতে পারে, আমাদের কিছুই করার প্রয়োজন হয় না। এরপরও প্রকৃতি সুরক্ষায় চীন যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করেছে দেশটি। পরিবেশগত রেড লাইন কর্মসূচির সূচনা করা হয়েছে, যা সত্যি কাজে লাগছে। প্রকৃতির সুরক্ষা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে মূলত মানবজাতির উপকার হচ্ছে।"

ট্রাংকম্যান বলেন, পৃথিবী থেকে প্রতিদিন ২০০ প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়ন হেক্টর বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ সবের জন্য মানবজাতির দায় রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। আর এজন্য পাশাপাশি দেশগুলোর উচিত সহযোগিতা ও সমন্বয় বাড়ানো।

"খুনমিং বায়োডাইভারসিটি ফান্ড গঠন করে চীন যে বার্তা কপ-১৫ সম্মলনে দিয়েছে, তা সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ। দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগী দেশগুলোর জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় কাজে লাগানো হবে এ তহবিল। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি,  তা হলো জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় আমাদের আরও ব্যাপক পরিসরে ভাবতে হবে। আবাসস্থল জুড়ে, অঞ্চলজুড়ে আমাদের এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কোন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আবদ্ধ না থেকে একটি সমন্বিত পদ্ধতিতে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার বিষয়টি ভাবতে হবে। একটি সমন্বিত উপায়ে ভূমি, জল ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করতে হবে।"

জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় চীন যে পথ বেছে নিয়েছে, তা এখন অনেক দেশই অনুসরণ করছে।

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা:  মাহমুদ হাশিম

 

 ২. কৃষিতে অবদান রাখছেন চীনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা

চীনে শুধু শহরাঞ্চলে নয়, প্রান্তিক পর্যায়েও পৌঁছে গেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। উন্নয়নের এ ধারায় অবদান রাখছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউননান প্রদেশে অনেক অবসরপ্রাপ্ত কৃষি বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানী এগিয়ে এসেছেন। তারা নিজেদের উৎসাহে বিনামূল্যে সাহায্য করছেন কৃষকদের। 

দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তিরা যখন অবসরে যান, বেশিরভাগ মানুষই সময় কাটান নীরবে, নিভৃতে। বিভিন্ন দেশের চিত্রটা এমন হলেও, এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চীন। এদেশের অবসর নেয়া ব্যক্তিরা তাদের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করার সুযোগ পান। ফলে ভালো সময় যেমন কাটে, তেমনি তাদের মাধ্যমে উপকৃত হোন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। 

শুধু কৃষকদেরই নয় তারা ভবিষ্যত প্রজন্মকে সচেতন করতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছেও পৌছে দিচ্ছেন কৃষি ও গ্রামের উন্নয়ন বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য ও অভিজ্ঞতা। 

ইউননান প্রদেশের প্রায় ৩০ হাজার অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সংগঠন হলো ইউননান সিনিয়র টেকনিশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন। এখানে আশি বছরের বেশি বয়সী সদস্যও আছেন। তারা গ্রামে গ্রামে ক্ষেতে খামারে ঘুরে কৃষকদের সঠিক পদ্ধতিতে চাষ শিখাচ্ছেন। পৌঁছে দিচ্ছেন নানা তথ্য। 

প্রবীণ এই মানুষরা ক্ষেতে খামারে ঘুরে কৃষকদের শেখাচ্ছেন আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।

কুনমিং শহরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করছেন অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা। গতানুগতিক পাঠ নয়, মজার সব বিষয় শিখছে তারা, এতে আগ্রহ বাড়ছে বিজ্ঞানের প্রতি। 

স্কুলের শিক্ষার্থীদের কৃষিবিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তোলার মাধ্যমে এই অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরা গ্রামীণ উন্নয়নে অবদান রাখছেন। অন্যান্য অঞ্চলের অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ মানুষরাও যেন অবদান রাখতে পারেন, সেই সুযোগও তৈরি হচ্ছে চীনে।

 

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- শিহাবুর রহমান

 

৩. এশিয়ার দীর্ঘতম গাছ এখন তিব্বতে

গেল এক দশকে ৬৮ মিলিয়ন হেক্টর জায়গায় নতুন করে বনায়ন করেছে চীন। ফলে ১০ বছরে নতুন বন সৃষ্টির দিক থেকে বিশ্বের প্রথম আসনটি এখন চীনের। আর এই দেশটির তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বনে এবার দেখা মিলেছে এশিয়ার দীর্ঘতম গাছের। চিরসবুজ পাতার জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাত দীর্ঘতম এই গাছের নাম সাইপ্রেস। এই গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, পাতাগুলো সারা বছর চিরসবুজ থাকে।

১০২ দশমিক ৩ মিটার দীর্ঘ সাইপ্রেস গাছটি আগের রেকর্ড ভেঙ্গে এটি এখন এশিয়ার দীর্ঘতম গাছের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। চিরসবুজ পাতার জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাত দীর্ঘতম এই গাছের নাম সাইপ্রেস। এই গাছের পাতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য  সারা বছর চিরসবুজ থাকে এই গাছের পাতা।

সম্প্রতি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে এক অনুসন্ধানের সময় নাইংচি শহরের পোমে কাউন্টির ইয়ারলুং জাংপু গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের জাতীয় প্রকৃতি সংরক্ষণ এলাকায় এ গাছটি খুঁজে পাওয়া যায়।

 

গবেষক দলের সদস্যরা ড্রোন ও লেজার রাডার ব্যবহার করে ওই এলাকার মানচিত্র তৈরি করেন এবং তা থেকে ওই গাছটির উচ্চতার ব্যাপারে নিশ্চিত হন। এ ছাড়া গবেষকরা ৯০ মিটার লম্বা ২৫টিসহ ৮৫ মিটারের বেশি উচ্চতার অসংখ্য গাছ সনাক্ত করেছেন।

 

সাইপ্রেস গাছ পাওয়া যায় মূলত দক্ষিণ-পূর্ব তিব্বতের একটি ছোট এলাকায় এবং এর সংখ্যা বেশ কম। এ গাছকে জাতীয়ভাবে প্রথম-শ্রেণীর সংরক্ষিত উদ্ভিদ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে চীনে।

 

 

তিব্বত ছাড়াও দক্ষিণ চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ছুয়াংইয়ুয়ান শহরের চিয়ানক্যুও কাউন্টির "শুতাও" সড়কে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি সাইপ্রেস গাছ। এসব গ্রাছের গড় বয়স ১ হাজার ৫০ বছর। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতম গাছটির বয়স ২ হাজার ৩০০ বছর।

 

বর্তমানে, ছুয়াংইয়ুয়ান শহরে রয়েছে ৭ হাজার ৮০৩টি প্রাচীন গাছ, যার মধ্যে ৭ হাজার ৭৭৮টি প্রাচীন সাইপ্রেস গাছ।

 

 

সময়ের আবর্তনে অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও হারায়নি গাছগুলো। চারদিকে শাখা-প্রশাখা মেলে স্বমহিমায় ছায়া দিয়ে যাচ্ছে পুরো শুতাওকে। শতশত পাখিদের কলকাকলি আর কিচিরমিচির শব্দে সর্বদা মুখর এই এলাকা। তাইতো হাজার বছরের পুরনো এসব গাছ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন পর্যটকরা।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শিহাবুর রহমান

 

 

 

 

 

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী