‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ২৯
2023-08-01 18:46:25

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। মাশরুম আকৃতির পাহাড়ে দাঁড়িয়ে পাথরের টাউন পাওশান

২। যে সড়ক মন ভুলিয়ে দেয় পর্যটকদের লিহুয়াংপি সড়ক

৩। তং ফং ইয়ুন আর্ট টাউনে একদিন

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ২৯তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।    

 

১। মাশরুম আকৃতির পাহাড়ে দাঁড়িয়ে পাথরের টাউন পাওশান

চীনের ইউননান প্রদেশের লিচিয়াং শহর থেকে ১১০ কিলোমিটার উত্তরে চিনশাচিয়াং নদীর উপত্যকায় অবস্থিত পাথরের টাউন পাওশান। এটি পাওশান স্টোন টাউন নামেই বেশি পরিচিত।

পাহাড়ের উপর মাশরুম আকৃতির এই স্টোন টাউনে বাস করে ১০০টি পরিবার। এই টাউন তিন দিকে পাথর।এর মধ্যে দুটি পাথরের ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে হয় এই টাউনে। এর একটি দক্ষিণে আরেকটি উত্তরে।

এ টাউনের ইতিহাস   

এই টাউনের প্রতিটি বাড়িই তৈরি করা হয়ছে প্রাকৃতিক পাথর দিয়ে। এখানকার বাসিন্দারা পাথরে ঘর খোদাই করে ৮০০ বছর আগে থেকে বাস করছে এখানে। বলা ইউয়ান রাজবংশের (১২৭১-১৩৬৮ ) সময়কালে তৈরি করা হয়েছে এই শহর। ১২৫৩ সালে, ইউয়ান রাজবংশের রাজকুমার কুবলাই তার সেনাবাহিনীকে তালি শহর দখল করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার সেনাবাহিনী চিনশাচিয়াং নদী অতিক্রম করার পর, তারা একটি পাথরের টাউনে বিশ্রাম নেয় এবং পাওশান পাথর টাউনে প্রথম গ্রামবাসী হয়।  

ইউনান সংখ্যালঘুদের বাসস্থান এই টাউন। নাসি জাতিগোষ্ঠীর জীবন যাপন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে এই স্টোন টাউন যেন উদাহরণ তৈরি করেছে। স্টোন টাউনের চারপাশে পাহাড়ের ধারে রয়েছে সিড়ি সিড়ি ধানের মাঠ। গ্রীষ্ম ও শরৎকালে পাওশান স্টোন টাউন সাজে অপরূপ সাজে। 

 

পাওশান স্টোন টাউনে থাকার ব্যবস্থা

এখানে পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। পর্যটকদের থাকার যে গেস্ট হাউজ আছে সেখান থেকে উপভোগ করা যায় এই টাউনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানে একরাত কাটালে পর্যটকরা দেখতে পারেন স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা পরিবেশনা। এছাড়া এখানে রয়েছে খাবারের সুব্যবস্থা।

 

যেভাবে যাবেন পাওশান

আঁকাবাঁকা পথে লিচিয়াং শহর থেকে এই টাউনে যেতে ৫ থেকে ৬ ঘন্টার মতো সময় লাগে। তবে এই জায়গায় পৌঁছানোর আরেকটি বিকল্প রাস্তা হলো হল জেড ড্রাগন স্নো মাউন্টেন সিনিক এরিয়ার মধ্য দিয়ে । এদিক দিয়ে গেলে ৪-৫ ঘন্টাতেই পৌছানো যায় এখানে।

পাবলিক বাস 

লিচিয়াং থেকে পাওশান টাউনশিপে পাবলিক বাসেও যাওয়া সম্ভব। পাবলিক বাসে সময় লাগে ৪ ঘণ্টার মতো। বাস টার্মিনাল থেকে পাওশান স্টোন টাউনে পৌঁছানোর জন্য প্রায় ৩ ঘন্টার মতো হাঁটতে হবে।

প্রাইভেট মিনিবাস

লিচিয়াং থেকে পাওশান স্টোন টাউনে যাওয়া যায় মিনি বাসে। মিনি বাসে যেতে ভাড়া লাগবে ৩০ ইউয়ান।

পানি পথে

নদীপথেও যাওয়া যায় এই স্টোন টাউনে। চিনশাচিয়াং নদীতে নৌকা করে যেতে ভাড়া লাগে ৩০০-৪০০ ইউয়ান।তবে বোটম্যানের সাথে দামাদামি করলে আরও কমেও যাওয়া যায়। 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

২। যে সড়ক মন ভুলিয়ে দেয় পর্যটকদের লিহুয়াংপি সড়ক

কোন অঞ্চলের প্রাচীন অবকাঠামো দেখলেই বুঝতে পারা যায় ওই অঞ্চলটি আগে কতটা সমৃদ্ধ ছিলো। বিশেষ করে ভবনের নকশা ও স্থাপত্যশৈলী ওই অঞ্চল সম্পর্কে দারুণ কিছু বার্তা দেয়।

এমনই এক জায়গা চীনের হুপেই প্রদেশের উহান শহরের লিহুয়াংপি সড়ক। এখানকার প্রতিটি অলিগলি বহন করছে প্রাচীন ইতিহাস আর ঐহিত্য।

৬০৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি নামকরণ করা হয়েছে সেনাবাহিনীর একজন উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা লি ইউয়ানহংয়ের নাম অনুসারে। এই কর্মকর্তা পরবর্তীতে ২ বারের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হোন। উহানের হুয়াংপি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এই নেতা।

নিজের এলাকায় তিনি পরিচিত ছিলেন লি হুয়াংপি নামে। তার এই নাম থেকেই সড়কটির নামকরণ করা হয় লি হুয়াংপি রোড। ১৮৬১ সালে হানকৌ বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট চালু হওয়ার পর এই সড়কে ঘিরে স্থাপন করা হয় ১২ টি বিদেশী কনস্যুলেট। এছাড়া প্রায় ৩০টি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ১০০টিরও বেশি ইন্টারন্যাশনাল ফার্মের কার্যালয় নির্মাণ করা হয় এখানে।

এরপর থেকেই বিদেশী লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায় এ অঞ্চলে। আসতে শুরু করেন পর্যটকরা। ইউরোপীয় ধাঁচে এখানে গড়ে তোলা হয় ১০টিরও বেশি ঐতিহাসিক ভবন।

পর্যটকরা এসব ভবনের ভেতর দিয়ে হাঁটলে ইতিহাস ছুঁয়ে দেখার পান। রয়েছে বেশ কিছু রেস্তোরা। যেখানকার বাহারী স্বাদের খাবারে মেতে ওঠেন তারা।

ঐতিহাসিক ভবনগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছে স্থানীয় কতৃপক্ষ। ভবনগুলো যেন গৌরবউজ্জ্বল ঐহিত্য ধরে রাখতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

 নানা কারণে এ এলাকায় রাজনীতিবিদ, সেলেব্রিটি ও ব্যবসায়ীদের আনাগোনা থাকে। সব মিলিয়ে উহানের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা হয়ে উঠেছে লিহুয়াংপি সড়ক ।

প্রতিবেদন- হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। তং ফং ইয়ুন আর্ট টাউনে একদিন

চীনের ইয়ুননান প্রদেশের মিল্য সিটিতে রয়েছে বিভিন্ন সংস্কৃতির পরিচয়বাহী নানা রকম পর্যটন স্থান।

এখানে যেমন আছে ই জাতির সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী পর্যটন স্থান তেমনি আছে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ধারক বিভিন্ন স্পট। মিল্য সিটির প্রাকৃতিক দৃশ্যও খুব সুন্দর। মিল্য সিটিতে আছে এমন একটি পর্যটন স্পট যেখানে গেলে ই জাতির সংস্কৃতি, বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্পর্শ পাওয়া যাবে। এই পর্যটন পার্কের নাম তং ফং ইয়ুন আর্ট টাউন। লোকজ সংস্কৃতির স্পর্শ পেতে এবং সারাদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আস্বাদ নিতে এই পার্কের জুড়ি নেই। এর পাশাপাশি আছে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ইতিহাস জানারও সুযোগ।

মিল্যর মৈত্রেয় স্থানের হংহ্য এলাকায় গড়ে উঠেছে এই পার্ক। এর পিছনে রয়েছে একজন নিবেদিত প্রাণ শিল্পীর পরিকল্পনা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা।  এই শিল্পী ‘স্ট্রেঞ্জ ম্যান’ নামে পরিচিত। তিনি জন্মেছিলেন মৈত্রেয়তে।

এই আর্ট টাউনে ঢুকলে প্রথমে চোখে পড়ে পরিস্কার জলের বিশাল লেক। আকাশের ছায়া পড়ে সেই লেকের জল একেবারে নীল হয়ে আছে। পাশে আছে একটি উইন্ড মিল। সেটি বিগত দিনের নকশায় একটি চমৎকার স্থাপত্য। এর পর বিশাল অংশ জুড়ে আছে ল্যাভেন্ডার ফুলের বাগান। দিগন্ত বিস্তৃত ফুলের বাগানে ছবি তুলতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন পর্যটকরা।

মৈত্রেয়র রেড ওয়াইন তৈরির দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্য অনুসরণ করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে বোতল আকৃতির একটি স্থাপনা। বিশাল স্থাপনাটি লাল ইটের তৈরি। এটি ই জাতির মানুষের আগুনের সংস্কৃতিকেও তুলে ধরছে।

এখানে রয়েছে কিছু প্রতীকি স্থাপনা যেগুলো বৌদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয়বাহী। এখানকার খাবারও খুব বিখ্যাত। বিশেষ করে স্থানীয় কুইজিনের স্বাদ গ্রহণের জন্য আদর্শ এই স্থান।

এই আর্ট টাউন বা কারুশিল্প নগরে পর্যটকদের থাকার জন্য হোটেল আছে। হোটেলের কক্ষগুলোও তৈরি করা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার আদলে।

রাতে বারবিকিউ পার্টি এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের জলে নৌ ভ্রমণ করা যায়। এই আর্ট টাউনে  চিত্রকলা প্রদর্শনীও রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন নামী শিল্পীর আঁকা ল্যান্ডস্কেপ মুগ্ধ করে দর্শকদের।

এখানে সুভ্যেনির কেনার দোকানও আছে।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী