জুলাই ৩১ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে, চীনে আগ্রাসন চালিয়ে জাপানের সশস্ত্রবাহিনী প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এবং চীনের জনগণের ওপর জীবাণু অস্ত্রের গবেষণা চালায় এবং ব্যাবহার করে। জাপানি বাহিনীর ইউনিট-৭৩১ চীনে অসংখ্য অমানবিক পরীক্ষা চালায় এবং সেসব পরীক্ষার লক্ষ্য ছিল জীবাণু অস্ত্র নিয়ে গবেষণা করা। জাপানি এই ইউনিটের কাজকর্ম ছিল এক কথায় শয়তানি কাজ। অথচ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, এই ইউনিটের অপরাধ জাপানি সরকার গোপন করার অপচেষ্টা চালায়। এ ইউনিটসংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জাপান সরকার কখনই প্রকাশ করেনি। অবশ্য, জাপানের কিছু বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিত সত্যকে জানার চেষ্টা কখনও বন্ধ করেননি। তাঁরা সত্য ইতিহাসকে জানার ও জানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি, তাঁরা জাপানের সরকারকে নিজেদের অতীত অপরাধ পর্যালোচনা করার ও আত্মসমালোচনা করার আহ্বানও জানিয়ে আসছেন।
৮১ বছর বষয়ী কাতসুও নিশিইয়ামা জাপানের শিগা ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সের একজন অধ্যাপক। জাপানি বাহিনীর ইউনিট-৭৩১-এর অপরাধ নিয়ে তিনি ২০ বছর ধরে গবেষণা করেছেন। তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তিনি মনে করেন, এ ইউনিট চীনে অনেক অপরাধ করেছে। তিনি তাঁর কথায় ও লেখায় তা বলে আসছেন।
গত ৩০ জুলাই এক অনুষ্ঠানে জাপানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দেড় শতাধিক লোক কাতসুও নিশিইয়ামার বক্তব্য শোনেন এবং তাঁর সাথে মত বিনিময় করেন। অনেক অংশগ্রহণকারী জানান, ইউনিট-৭৩১-এর অপরাধ অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এটা সত্য। জাপান সরকার এহেন অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা মনে করেন, শুধু সত্যিকারের অর্থে ইতিহাসকে বিবেচনা করলে, সত্য ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের আশা করা যায়।
একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “এ অনুষ্ঠানে আমরা ইউনিট-৭৩১-এর আসল চেহারা বুঝতে পেরেছি। তারা কী ধরনের গবেষণা করেছিল, তাও আমরা জানতে পেরেছি। আমি মনে করি, এ ধরনের অনুষ্ঠান অনেক অর্থবহ।”
আরেকজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “এ ধরনের অনুষ্ঠান অনেক প্রয়োজনীয়। ভুল ভুলই, সত্য সত্যই। যদি ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে তা-ই করতে হবে। আমি মনে করি, এটা একটি মৌলিক নীতি হওয়া উচিত।’
আরেকজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “এখনও ইতিহাসের অনেক দলিল অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। আমি এতে ক্ষুব্ধ। চীনে যে অমানবিক অপরাধ চালানো হয়েছিল, তা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকেও তা জানানো উচিত আমাদের। ”
যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি আগ্রাসী বাহিনীর অপরাধের অনেক প্রমাণ আছে, তারপরও জাপানের কিছু কিছু লোক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুদ্ধের দায়িত্ব অস্বীকার করে এবং সেদেশের শান্তিপূর্ণ সংবিধানকে সংশোধন করার অপচেষ্টা চালায়। এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন কাতসুও নিশিইয়ামা। জাপানকে শান্তিপূর্ণ সংবিধান মেনে চলার এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে অবিচল থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “জাপানের উচিত শান্তিপূর্ণ সংবিধানের চেতনা অনুসরণ করা। অথচ, এখন অনেকেই সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছেন।”
ইউনিট-৭৩১-এর অপরাধ জাপানের কিছু কিছু লোক গোপন করার বা অস্বীকার করার চেষ্টা করে আসছেন। তবে, কাতসুও নিশিইয়ামার মতো অনেক বিশেষজ্ঞ সবাইকে সত্য ইতিহাস জানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাপানের সরকারের উচিত, এ সব ন্যায্য কণ্ঠ শোনা এবং নিজের আগ্রাসনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে আত্মসমালোচনা করা ও সেই অনুসারে কাজ করা।
(আকাশ/আলিম/জিনিয়া)