১৬ বছর বয়সে গ্যাবনের ছেলে জিন ক্রিশ্চিয়ান জেঙ্গু লেখাপড়ার জন্য লিব্রেভিল থেকে কুয়াংচৌ আসেন। এরপর ৩০ বছর কেটে গেছে। তিনি চীনে কাজ করছেন, এখানেই বিয়ে করেছেন। তিনি একজন সিনিয়ার শল্যচিকিৎসক। বিগত ৩০ বছরে তিনি চীনের ক্রমাগত উন্মুক্তকরণ ও উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছেন; অনুভব করেছেন। তিনি চীনের জীবনাদর্শকে উপলব্ধি করতে পারেন।
জেঙ্গু ছোটবেলা থেকে চীনা অভিনেতা ব্রুস লি-কে পছন্দ করেন। তিনি চায়নিজ কংফু শেখেন এবং চীনে লেখাপড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৯০ সালে ১৬ বছর বয়সে জেঙ্গু চীনে আসেন। তিনি মাত্র এক বছরে চীনা ভাষা পরীক্ষা পাস করেন এবং চীনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তির জন্য আবেদন করেন। পরে তিনি কুয়াংচৌতে গিয়ে চিকিত্সাবিদ্যা বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেন।
মেডিসিন অধ্যয়ন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। জেঙ্গু ১১ বছর পর সান ইয়াত-সেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রী লাভ করেন। কুয়াংচৌ আফ্রিকার মতো উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুসমৃদ্ধ। তিনি দ্রুত স্থানীয় জীবনযাত্রার সাথে মানিয়ে নেন। তবে বিদেশে কোনো কোনো সময় তাঁর একাকী বোধ হতো। চীনা ভাষায় চিকিত্সাবিজ্ঞান শিক্ষা তাঁর জন্য অনেক কঠিন ছিল; একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই অভিজ্ঞতা স্মরণ করে তিনি বলেন, “তখন আমার শিক্ষকরা ও সহপাঠীরা আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। অনেক অপরিচিত চীনা মানুষও আমাকে উত্সাহ দিয়েছেন। চীনারা খুবই বন্ধুভাবাপন্ন, সদয়।”
চীনে বিগত ৩০ বছরে পরিবহনব্যবস্থা ও তথ্য-যোগাযোগ খাতে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। চীনে বসবাস করা খুবই সুবিধাজনক বলে তিনি মনে করেন।
জেঙ্গুর কুয়াংচৌতে অনেক চীনা বন্ধু আছে। তিনি কুয়াংচৌ’র একটি মেয়ের প্রেমে পড়েন এবং পরে তাকে বিয়ে করেন। জেঙ্গু এখন নিজেকে কুয়াংচৌ’র স্থানীয় বাসিন্দা বলেই মনে করেন। তিনি এমনকি ক্যান্টোনিজ টিভি সিরিজও দেখেন। তিনি স্থানীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন।
কুয়াংচৌ শহর চীনের ফুলের শহর হিসেবে পরিচিত। এই শহরের উন্মুক্ততা ও সহনশীলতা এবং প্রাণশক্তি তাঁর মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। ব্রুস লি এখনও তাঁর আইডল। ব্রুস লি’র ছবি তাঁর কম্পিউটারের ডেস্কটপে শোভা পায়। ব্রুস লি তাঁকে শুধু চায়নিজ কুংফুর শক্তি দেখাননি, বরং তাকে চীনা দর্শন ও প্রজ্ঞার সংস্পর্শে আসতেও সাহায্য করেছেন।
ব্রুস লি’র একটি কথা হলো তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। ‘এই পৃথিবীতে আপনাকে সবসময় মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনি বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হবেন। অন্যের অনুকরণ করবেন না, নিজের পথে চলুন, হাল ছাড়বেন না।’
কুয়াংচৌ বিভিন্ন শিল্পে সমৃদ্ধ। এ শহর কুয়াংতং, হংকং ও ম্যাকাও অঞ্চলের কেন্দ্রীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। জেঙ্গু’র নিজের স্বপ্ন চীনা স্বপ্নের আওতায় বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি একজন ডাক্তার হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজ করেন। তিনি চান, আগামী প্রজন্ম আরও ভালোভাবে বাঁচুক। (ছাই/আলিম)