তিব্বতের চিয়েবা জেলার প্রথম নারী সামরিক কর্মচারী সুওলাং ছিউজেনের গল্প
2023-07-29 19:16:36

তিব্বতের শানান শহরের জেতাং জেলা থেকে ইয়ালুজাংবো নদীর (ভারতে প্রবাহিত অংশের নাম ব্রহ্মপুত্র) তীর ধরে ১৮ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে প্রায় আধা ঘন্টার মধ্যে চিয়েবা জেলায় পৌঁছানো যায়। জেলাটি ইয়ালুজাংবো নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত, গড় উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬০০ মিটার। যদিও এটি তুলনামূলকভাবে নগর এলাকার কাছাকাছি, তবে অতীতে মালভূমিতে সুবিধাজনক যানের অভাবে এখানকার অর্থনীতি অনেক পিছিয়ে ছিল। স্থানীয় মানুষ শুধুমাত্র আলু, বার্লিসহ বিভিন্ন ফসল রোপণ এবং পশুপালনের মাধ্যমে  জীবিকা নির্বাহ করতো। একজন নতুন পুলিশ অফিসার সুওলাং ছুইজেনের বাড়ি এখানে। তিনিই এখানকার প্রথম নারী সৈনিক এবং প্রথম জাতীয় সরকারি কর্মচারী।

সুওলাং ছুইজেনের বয়স এখন ২৭ বছর। তিনি এই মালভূমি গ্রামে বেড়ে ওঠেন। তার বাবা এবং মাও এখানে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন। তার বাবা-মা সারাজীবন এখানেই বাস করেছেন, একদিনের জন্যও স্কুলে যাননি, তিব্বতের পাহাড় থেকে বের হননি। কিন্তু তারাই সুওলাং ছুইজেনকে জাতীয় অভিবাসন প্রশাসনের একজন কর্মচারী হিসাবে লালন-পালন করেছেন।

ছোটবেলায় সুওলাং ছিউজেনের পরিবার খুব কঠিন অবস্থায় ছিল। তার মা গংছিউ ছুইজেন জানান, সে সময় দুই বোনের একজন জুনিয়র স্কুলে এবং অন্যজন প্রাথমিক স্কুলে পড়তো। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কৃষিকাজ করতেন। সংসার চালানো খুবই কঠিন ছিল। চারজনের খাওয়াদাওয়া এবং দুই বোনের পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হতো।

২০১৪ সালে, একটি জনপ্রিয় সামরিক-থিমযুক্ত টিভি সিরিজ "স্পাইসি নারী সৈনিক" তিব্বত স্যাটেলাইট টিভিতে সম্প্রচারিত হচ্ছিল এবং এটি ছিল গংছিউ ছুইজেনের প্রিয় টিভি সিরিজ। এই সময়ে তার মেয়ে সুওলাং ছুইজেন কলেজে যাওয়া অথবা পরিবারকে সমর্থন করার জন্য চাকরি করার মধ্যে একটি বেছে নেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছিল। স্বজনরা মনে করেন যে, পরিবারের বড় বোন হিসাবে তার আরও পারিবারিক দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া উচিত। মায়ের পরিশ্রম দেখে সুওলাং ছুইজেনও তাই ভেবেছিলেন। তবে তার মা, গংছিউ ছুইজেন তা মনে করেননি। তার একটি ছোট বোনও ছিল, তিনি পরিবারে একমাত্র সন্তান ছিলেন যে শিক্ষা গ্রহণ করতে স্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি নিজেই পারিবারিক দায়িত্ব কাঁধে নিতে বাধ্য হন। তাই ছোটবেলা থেকে তাঁর স্বপ্ন ছিল, পাহাড় থেকে বের হয়ে বাইরের পৃথিবী দেখা।

"মা, তুমি সেনাবাহিনীতে যোগ দাও।" গংছিউ ছুইজেন জোর করেই মেয়েকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ান। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে, তার ১৮ বছর বয়সী কন্যা, সুওলাং ছুইজেন, সবুজ সামরিক ইউনিফর্ম পরে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তিনি তিব্বতের শানানের চিয়েবা জেলা থেকে বেরিয়ে আসা প্রথম নারী সৈনিক হয়ে ওঠেন।

২০১৫ সালের শেষ দিকে, সারা চীনে "দারিদ্র্যবিমোচনের অভিযান" শুরু হয়। গ্রিনহাউস চাষ-কৌশল শিখতে এবং গ্রিনহাউস তৈরিতে সাহায্য করার জন্য সরকার গংছিউ ছুইজেন’কে লাসায় পাঠায়। দ্বিতীয় বছরে, পরিবারের তিনটি গ্রিনহাউসে চাষ করা স্ট্রবেরি প্রথম তিন মাসে তাদের আয় ২০ হাজার ইউয়ান বাড়ায়। জনগণের জন্য কল্যাণকর সিপিসি ও সরকারের ধারাবাহিক নীতিমালা দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি মানুষকে দেশের উন্নয়নের লভ্যাংশ উপভোগের সুযোগ দেয়।

এই সময়ে, সুওলাং ছুইজেন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনীতে কাজ করেন। কঠিন প্রশিক্ষণ এই নারী সৈনিককে দমাতে পারেনি। তিনি নিজের চমত্কার পারফরমেন্সের মাধ্যমে  পুরষ্কার পেয়েছেন। গংকিউ ছুইজেন এতটাই খুশি যে, তিনি গ্রামে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের বাড়িতে পুরস্কারের পদক দেখিয়ে বেড়িয়েছেন।

২০১৮ সালে, সুওলাং ছুইজেন সফলভাবে জাতীয় অভিবাসন প্রশাসনের একজন জাতীয় কর্মচারী হিসাবে যোগ দেন। নতুন পদে, সুওলাং ছুইজেন লোবু বর্ডার থানায় একজন পুলিশ অফিসার হন। সুওলাং ছুইজেন পুরনো পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে কাজ শেখেন এবং ভাষার সুবিধা কাজে লাগিয়ে সীমান্তের বাসিন্দাদের সাথে মিশে যান। তিনি তার বেতনের টাকা দিয়ে অভাবীদের সাহায্য করেন এবং বিধবা ও একাকী বয়স্কদের সান্ত্বনা দেন। তিনি ইতিমধ্যেই পরিবারের নিবন্ধন কাজের দায়িত্বে রয়েছেন, এবং সবাই তাকে আদর করে 'সিস্টার ইয়াক' বলে ডাকে।

২০২০ সালে, সুওলাং ছুইজেন তার বাবাকে ছয় বছরের সঞ্চয়কৃত ১.৫ লাখ ইউয়ান দিয়ে একটি লোডার এবং একটি গাড়ি কিনে দেন। তার পরিবারের জীবন আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।

গংকিউ ছুইজেন এমন একজন মালভূমির নারী যিনি কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেননি এবং তার বিশেষ উচ্চাকাঙ্ক্ষাও নেই। তিনি কেবল তার জীবনের অভিজ্ঞতা এবং একটি কৃতজ্ঞ হৃদয় দিয়ে তার মেয়েকে বারবার সঠিক জীবন-সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন। এই মালভূমির মা তিব্বতি অঞ্চলে কৃষক ও পশুপালকের সরল মন দিয়ে তার মেয়েকে জীবনে বারবার সঠিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করেন।

মালভূমিতে তখন সন্ধ্যা নেমেছে। চিয়েবা জেলা থেকে শহুরে এলাকায় যাওয়ার রাস্তাটি একটি ভাঙা ময়লা রাস্তা থেকে সোজা ও প্রশস্ত দ্বিমুখী ছয়-লেনের মহাসড়কে পরিণত হয়েছে। গাড়ির জানালা নামিয়ে ইয়ালু জাংবো নদী থেকে সন্ধ্যার শীতল বাতাস অনুভব করা যায়, যে বাতাস চিয়েবা জেলার সবুজ বার্লির ক্ষেতে ঢেউ তোলে। বার্লি ঘরে তোলার সময় হয়েছে বলে! (ইয়াং/আলিম/ছাই)