চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-২৭
2023-07-29 19:12:14

চীনের সংস্কৃতি-সপ্তাহ

সিএমজির আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি

মানুষে মানুষে বন্ধন বাড়াতে এবং সভ্যতার মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়াকে উন্নীত করতে একটি বৃহৎ আকারের আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি চালু করেছে চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি। সম্প্রতি বেইজিংয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এ কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দেয়া হয়।

সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং সিএমজির যৌথ আয়োজনে এটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী হু হেপিং এবং সিএমজি প্রেসিডেন্ট শেন হাইসিয়ং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। 

আয়োজকরা জানান, প্রোগ্রামটি আলো ও ছায়া শিল্প এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল ভাষার মাধ্যমে বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার আকর্ষণীয় গল্প বলবে। এটি চীনা, বিদেশী শিল্পী এবং বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান থিয়েটার দলকে বৈচিত্র্যময় শিল্পচর্চায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানাবে। 

এদিকে, প্যারিস অলিম্পিকস এবং ফ্রাঙ্কো-চীনা বন্ধুত্বের প্রচারের জন্য ২৪ জুলাই একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চালুর ঘোষণা দিয়েছে চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি। ওই দিন থেকে ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকের এক বছরের কাউন্টডাউন শুরু হয়।

‘বেইজিং থেকে প্যারিস পর্যন্ত - ফরাসি এবং চীনা শিল্পীদের অলিম্পিক জার্নি’ শিরোনাম এ ইভেন্টের লক্ষ্য দু’দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়ানো এবং তাদের ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করা।

অলিম্পিকের সময় প্যারিস এবং অন্যান্য শহরগুলোতে প্রদর্শিত হবে এ সাংস্কৃতিক কর্মসূচি। অনুষ্ঠানটি তৈরির জন্য উভয় দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।  উদ্বোধনী অনু্ষ্ঠানে প্রথম ব্যাচের শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

 

২. চীনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধদলের তাইওয়ান সফর

তাইওয়ান-ভিত্তিক মা ইং-চিউ ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে মূল ভূখণ্ডের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরি একটি প্রতিনিধিদল ১৫ থেকে ২৩ জুলাই তাইওয়ান সফর করে।

চীনের অলিম্পিক টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন তিং নিংসহ প্রতিনিধি দলের অনেক সদস্যের জন্য এটি ছিল প্রথম সফর। সফরের সময়, পিং পং, ঐতিহ্যবাহী চীনা সংগীত এবং নৃত্যের পাশাপাশি একটি সিম্পোজিয়ামসহ একাধিক ক্রিয়াকলাপ, মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাভাবিক বন্ধনকে দৃঢ় করেছে।

চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চাং ইয়ুয়ানমো এবং তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী চ্যান ইউ-শিয়াং জানাচ্ছিলেন তাদের সুন্দর অভিজ্ঞতার কথা।

‘যখন আমি এখানে এসেছি, আমার একটিমাত্র স্যুটকেস ছিল। এখন আমার আরেকটি ঢাউস স্যুটকেস হয়েছে। কারণ আমরা যেখানেই গেছি নানান রকম স্যুভেনির, পাইনঅ্যাপেল কেক, হানিকম্ব কেকসহ অনেক উপহার পেয়েছি’।

‘মূল ভূখণ্ডের বন্ধুদের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল সহজ-সাবলীল এবং উপভোগ্য। আমাদের মধ্যে কোনো আড়াল ছিল না। আমাদের উচ্চারণে একটু ভিন্নতা আছে বটে, তবে আমার মনে হয়েছে আমি সহপাঠীদের সঙ্গে গল্পসল্প করছি। আমি আশা করি এ ধরনের বিনিময় কর্মসূচি এখন নিয়মিত হবে এবং উভয়পক্ষ পরস্পরকে বোঝার সুযো পাবে’।

তাইওয়ানের চংচি বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতি বিষয়ক বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক হুয়াং কুই-বো মনে করেন এ ধরনের সফর উভয় পারের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াবে।

 ‘আমি বিশ্বাস করি যে তাইওয়ানের সমাজের অধিকাংশই মূল ভূখণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক এবং ছাত্রদের সফরের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ পুনরুদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এ ধরনের বিনিময় গোষ্ঠী নেতৃত্ব দিচ্ছে’।

মূল ভূখণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয় বিনিময় গ্রুপের এ আয়োজন প্রণালীর দু’পারের সম্পর্কে নতুন শক্তি যুগিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ কর্মসূচি চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

 

৩. চিরায়ত চীনা সাহিত্য

কবি ওয়াং চিহুয়ান: অনু কবিতায় অমরত্ব

থাং রাজবংশের প্রথমদিকের একজন কবি ওয়াং চিহুয়ান। তাঁর জন্ম ৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু ৭৪২ খ্রিস্টাব্দে। এ সময়কে থাং রাজবংশের স্বর্ণযুগ বলা হয়। কবি চিহুয়ানের জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তিনি থাং রাজবংশের সম্রাট সুয়ানচোংয়ের সময়ে কাব্য চর্চা করেন। ওয়াং চিহুয়ান ওয়াং সু-হুয়ান নামেও পরিচিত।

তাকে ঘিরে একটি গল্প রয়েছে। একবার ওয়াং চিহুয়ান তার সতীর্থ কবি কাও শি এবং ওয়াং ছাংলিংয়ের সঙ্গে পানশালায় যান। সে যুগে একটা প্রথা ছিল যে, পানশালায় সন্ধ্যায় পেশাদার বিনোদনকারীরা বিভিন্ন কবির কবিতা গান গেয়ে পরিবেশন করতেন। তিন কবি একটা প্রতিযোগিতায় নামেন। তারা দেখতে চান কার কবিতা পেশাদার শিল্পীরা বেশি পরিবেশন করেন।

সন্ধ্যার শুরুতে একজন শিল্পী ওয়াং ছাংলিংয়ের একটি কবিতা গেয়ে শোনান। কিছুক্ষণ পর আরেকজন শিল্পী কাও শির কবিতা শোলেন। এরপর আবার ওয়াং ছাংলিংয়ের দুটি কবিতা গাওয়া হলো। এভাবে চলতে লাগলো। কিন্তু ওয়াং চিহুয়ানের একটি কবিতাও গাওয়া হলো না।

ওয়াং চিহুয়ান যখন ভীষণ হতাশ, তখন মঞ্চে উঠলেন সবচেয়ে সুন্দরী এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী। তিনিই ছিলেন ওই পানশালার সেরা আকর্ষণ। তিনি পরিবেশন করলেন ওয়াং চিহুয়ানের কবিতা। ওই কবিতাটির নাম ‘সীমানা ছাড়িয়ে।’

পরবর্তিকালে ওয়াং চিহুয়ানের যে দুটি কবিতাকে মাস্টারপিস বা সেরা কীর্তি বলা হয় তার মধ্যে এ কবিতাটি রয়েছে। কবিতাটি ‘আউট অব দ্য গ্রেট ওয়াল’ ‘ বিয়ন্ড দ্য বর্ডার’ এমনি বিভিন্ন নামে ইউরোপে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার সবচেয়ে  বিখ্যাত কবিতা হলো ‘স্টর্ক টাওয়ারের উপরে’ বা সারস মিনারের উপরে।

কবিতাটি চার লাইনের। চার লাইনের এবং প্রতিটি লাইনে পাঁচটি ক্যারেকটার বা শব্দ। প্রতিটি লাইনে অন্ত্যমিল আছে।  তিনি ছোট ছোট এমন অনেক চতুর্পদী লিখেছিলেন। কিন্তু তার ছয়টি কবিতা শেষ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেছে।

শ্রোতাদের শোনাচ্ছি কবি ওয়াং চিহুয়ানের সেরা সৃষ্টি সারস মিনারের উপরে

সূর্য অভিবাদন করে পর্বতের প্রতি

সাগরের দিকে বয় হোয়াংহোর গতি

সুন্দর দৃশ্য দেখতে হলে পরে

উঠতেই হবে যে অনেক উপরে।

কবি ওয়াং চিহুয়ান ছোট ছোট এমন জ্ঞানগর্ভ কবিতার জন্য চিরায়ত চীনা সাহিত্যে অমরত্ব পেয়েছেন।

---------------------------------------------------------------------------

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, মাহমুদ হাশিম, শান্তা মারিয়া

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।