‘বিশ্বের ছাদে’-র মুক্তা পোতালা প্রাসাদ
2023-07-28 19:52:24

 

এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা তিব্বত নিয়ে কথা বলব।

 

‘পোতালা’ সংস্কৃত শব্দ। একে ‘পুতুওলুও’ হিসাবেও অনুবাদ করা হয়। সাধারণভাবে এটি ‘দ্বিতীয় পুতুও পর্বত’ নামে পরিচিত। পোতালা প্রাসাদটি তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লাসার কেন্দ্রে লাল পাহাড়ে অবস্থিত। এর মোট আয়তন ৪ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার; আর মোট নির্মাণএলাকা ১ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। এর প্রধান ভবনটি প্রায় ১১৭.২  মিটার উঁচু এবং এতে প্রাসাদ, প্যাগোডা হল, বৌদ্ধ হল, ধর্মগ্রন্থ হল, সন্ন্যাসী ঘর এবং উঠানের মতো অনেক ছোট ভবনও রয়েছে। এটি বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত বৃহত্তম প্রাসাদ-শৈলীর বিল্ডিং কমপ্লেক্স। একে ‘পৃথিবীর ছাদে এক মুক্তা’ বলে অভিহিত করা হয়।

এই অপূর্ব সুন্দর প্রাসাদটি খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে নির্মিত হয়। সেই সময়ে, থাং রাজবংশের রাজকুমারী ওয়েনছেংয়ের সঙ্গে বিয়ের আগে লাল পাহাড়ে একটি প্রাসাদ তৈরী করেন সুংচানকানবু। প্রাসাদটিকে ‘লাল পাহাড় ভবন’ বলে ডাকা হতো।  তুবো রাজবংশের পতনের পর ‘লাল পাহাড় ভবন’ ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়।

১৬৪৫  খ্রিস্টাব্দে, পঞ্চম দালাই লামা, নগাওয়াং লোবসাং গিয়াতসো, ‘লাল পাহাড় ভবন’-এর মূল জায়গায় পোতালা প্রাসাদ তৈরি করেন। পোতালা প্রাসাদের প্রধান ভবনগুলো লাল প্রাসাদ এবং সাদা প্রাসাদে বিভক্ত। লাল প্রাসাদটি মাঝখানে এবং সাদা প্রাসাদ গোটা পোতালা প্রাসাদের দুই পাশে অবস্থিত। লাল প্রাসাদের ভেতরে অতীতের সকল দালাই লামার শোক হল এবং বিভিন্ন রকমের বৌদ্ধ হল ও সূত্র হল রয়েছে। সাদা প্রাসাদ এমন এক জায়গা, যা ছিল অতীতের সকল দালাই লামার কার্যালয় ও আবাসস্থল। সাদা প্রাসাদের প্রধান ভবন হল ইস্ট হল, যার প্রস্থ ২৫.৮  মিটার ও দৈর্ঘ্য ২৭.৮ মিটার। এটি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে মুখ করে অবস্থিত এবং যে-কোনো বড় বড় অনুষ্ঠান এখানে আয়োজিত হয়।

পোতালা প্রাসাদের চিত্রকলা চমত্কার, এবং সবচেয়ে বিখ্যাতটি হল পশ্চিম হলের ম্যুরাল। এখানে মোট ৬৯৮টি ম্যুরাল আছে। এগুলোর মধ্যে আছে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় কাহিনী, বৌদ্ধ গল্প, রীতিনীতি, ক্রীড়া এবং স্থাপত্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত ম্যুরাল।  এগুলোর মধ্যে তিব্বতি বৈশিষ্ট্যযুক্ত থাংকাগুলো সিল্ক বা কাগজে আঁকা এবং সিল্ক ও সাটিন দিয়ে সেলাই করা। চিত্রগুলোর বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রধানত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় ঐতিহাসিক ঘটনা, শিক্ষা, তিব্বতি জ্যোতির্বিদ্যা, ক্যালেন্ডার এবং তিব্বতি ওষুধসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে।

 

থাংকা

থাংকা, যাকে টাঙ্গা ও থাংকাও বলা হয়, একটি প্রাচীন হস্তশিল্প যা সোংটসান গাম্পো সময়কালে আবির্ভূত হয়েছিল। এটি রঙিন সাটিন দিয়ে ফ্রেম করা স্ক্রোল পেইন্টিং। এই ধরনের স্ক্রোল পেইন্টিং প্রথমে কাপড় বা কাগজে আঁকা হয়, তারপরে সিল্ক এবং সাটিন দিয়ে সেলাই করা হয়। ঝুলানোর জন্য অনুভূমিক অক্ষের উপরের প্রান্তে একটি স্ট্রিং রয়েছে এবং নীচের অক্ষের দুই প্রান্ত চমত্কারভাবে সাজানো। আর এর ছবি পাতলা সিল্ক ও ডবল ফিতা দিয়ে আবৃত।

থাংকা পেইন্টিংগুলোতে তিব্বতের ইতিহাস, রাজনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি এবং সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্র জড়িয়ে আছে। থাংকাতে ব্যবহৃত উপকরণগুলোও অত্যন্ত পরিশীলিত।  রঙ্গকগুলো সমস্ত প্রাকৃতিক খনিজ উদ্ভিদ সামগ্রী এবং রঙটি খুব উজ্জ্বল ও টেকসই।  কাপড় ও কাগজের থাংকা ছাড়াও, অনেক ফ্যাব্রিক থাংকা যেমন সূচিকর্ম, ব্রোকেড, টেপেস্ট্রি এবং অ্যাপ্লিকস, এবং এমনকি মুক্তো, জেড এবং রত্নপাথর দিয়ে অলঙ্কৃত সোনার সুতো দিয়ে তৈরি বিরল ধনও রয়েছে।

 

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn  আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (উর্মি/আলিম)