সুন্দর দৃশ্য দেখতে রুন ফেং গ্রামে বহু পর্যটকের আগমন
2023-07-28 10:15:54



চীনের নি সিয়াং হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইন ছুয়ান শহরের চিন ফেং অঞ্চলের উপকণ্ঠে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত একটি গ্রাম রয়েছে, যার নাম রুন ফেং গ্রাম। এই গ্রামের সড়ক বরাবর সারিবদ্ধভাবে নির্মিত আন হু প্রদেশের স্টাইলে বাড়িগুলো খুব পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। প্রতি সপ্তাহান্তে এই গ্রামে অনেক হৈচৈ হয়। আশপাশ এলাকার পর্যটকরা নিজেরা গাড়ি চালিয়ে এখানে ভ্রমণে আসেন। দিনের বেলায় তারা ক্যাম্প বসিয়ে কাবাব সম্মিলনীর আয়োজন করেন এবং ফলমূল তোলার আনন্দ উপভোগ করেন। রাতের বেলায় তারা রাতের পর্দায় তারা উপভোগ করেন। দূরে না গিয়ে পর্যটকরা এখানে মানসিক শান্তি উপভোগ করেন। 

“অনেক শহরবাসী এখানে আসেন। আমরা তাদেরকে স্থানীয় সুস্বাদু খাবার সরবরাহ করি। শিশুদের বিশেষ বিনোদনমূলক অঞ্চল আছে এখানে। খাওয়া ও সবজি চাষসহ প্রকৃতির কাছে আসার অনেক আনন্দ পান পর্যটকরা।” কথাগুলো বলেছেন লি সি থিয়ান ইউয়ান মি ইয়ু কৃষি-উদ্যানের পরিচালক চু সিয়াও লিং।

রুন ফেং গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির ক্যাডার ওয়াং পেং ছেং বলেন, “গত দু বছরে কৃষি-পর্যটন নিয়ে আমাদের চেষ্টা সফল হয়েছে। প্রতি সপ্তাহান্তে এখানে বেড়াতে আসেন কয়েক শ’ পর্যটক। গ্রামটিতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। গ্রামবাসীদের জীবনেও সমৃদ্ধি এসেছে।”



রুন ফেং গ্রাম নিং সিয়া হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনার আওতায় অন্য স্থান থেকে সরিয়ে আনার পর নির্মিত এক গ্রাম। পানীয় জলের সমস্যার কারণে সিন চিয়াংয়ের দক্ষিণাঞ্চলীয় সি হাই কু এলাকার ৩০০টি পরিবারকে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৪০০ কিলোমিটার দূরে রুন ফেং গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। দরিদ্র পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নিং সিয়াং হুই জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সি হাই কু’তে বসবাসকারী ৩০০টি পরিবার স্থানীয় সরকারের সাহায্যে ৪০০ কিলোমিটার দূরে রুন ফেং গ্রামে স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্য দিয়ে তারা দরিদ্র পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ইন ছুয়ান শহরে পা দেয়।

রুন ফেং গ্রামের পিছন দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। গ্রামে সুবজ বৃক্ষের ছায়ায় সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গ্রামবাসীদের আঙ্গিনায় প্রবেশ করলে দেখা যায় যে, প্রতিটি বাড়িতে বসার ঘর, শোবার ঘর, স্নানঘর, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, পানীয় জল সরবরাহ এবং রান্না করার ব্যবস্থাসহ সব কিছু আছে। নতুন বাড়ি শহর থেকে বেশ কাছে বলে গ্রামবাসীরা সহজে শহরে চাকরি করতে পারেন। প্রথম দিকে তাদের স্থিতিশীল উপার্জন হতো না। তবে রুন ফেং গ্রামে উদ্ভাবনী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন গ্রামীণ পর্যটন গড়ে ওঠার পর গ্রামবাসীরা গ্রামে বসেই উপার্জন করতে পারছেন, যার ফলে তারা সুন্দর জীবন প্রত্যাশা করতে পারছেন।

চিন ফেং অঞ্চলের সরকার ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করে ২০১৯ সালে রুন ফেং গ্রামের পাশে লি সি থিয়ান ইউয়ান মি উয়ু কৃষি-উদ্যান স্থাপন করে। এই উদ্যানে পরিবেশ-বান্ধব কৃষি, চাষবাস অভিজ্ঞতা, রেস্তোরা ও হোটেলসহ কৃষি পর্যটনের সব সেবা দেওয়া হয়। বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে রুন ফেং সু চি তৈরি করে সরকার, যাতে পর্যটকদের বৈশিষ্ট্যময় গ্রামীণ পর্যটনের অভিজ্ঞতা প্রদান করা যায়।

রুন ফেং সু চি’র দায়িত্বশীল ব্যক্তি কুও পেং ফেই বলেন, “রুন ফেং গ্রামের শিল্প পরিকল্পনার অনুসারে রুন ফেং সু চি ২২টি আন হু প্রদেশের স্টাইলের আঙ্গিনা গড়ার মধ্য দিয়ে সংস্কার শুরু করে। সেসব আঙ্গিনায় থাকার হোটেল, ক্যাফে, রেস্তোরা ও ক্যাম্পিংসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হয়, যাতে এগুলো শহরবাসীদের ছুটি কাটানোর গন্তব্যস্থলে পরিণত হয়।”

পর্যটক ইয়ান চিয়া’র এটি প্রথম রুন ফেং গ্রাম ভ্রমণ নয়। আমাদের সাংবাদিককে তিনি জানান, “গ্রামের পরিবেশ অনেক ভালো। গ্রামবাসীরাও অনেক অতিথিপরায়ন। শহরের কোলাহল থেকে এসে নিরিবিলি পরিবেশ পাই এখানে। তেলে ভাজা রুটি ও মুরগিসহ এখানকার নানা খাদ্যও খুব মজাদার। দামেও সস্তা। তাই এখানে বাচ্চাদের নিয়ে বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ভ্রমণ করা - দুটোই উপযোগী”।

রুন ফেং গ্রামীণ পর্যটনের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এখানে শ্রমের চাহিদা অনেক বেড়েছে। গ্রামবাসীরা ঘরের সামনেই কাজ করতে পারছেন। ছাব্বিশ বছর বয়সী মা চিয়ান ছিন রেস্তোরার একজন কর্মী। তিনি এক বছর ধরে এই কাজ করেছেন। গত মাসে তিনি ৪ হাজার ৩শ ইউয়ান বেতন পেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার ঘর থেকে কৃষি-উদ্যান যেতে মাত্র তিন মিনিট লাগে। পরিবারের জন্য উপার্জন করার পাশাপাশি বাচ্চাকেও দেখাশোনা করতে পারছি।”

জানা গেছে, বর্তমানে লি সি থিয়ান ইউয়ান মি ইয়ু কৃষি-উদ্যানে আসা পর্যটকের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। উদ্যানে রয়েছেন ৩৫ জন কর্মী। বেশি পর্যটক আগমনের মৌসুমে প্রতিদিন ৮০ জনেরও বেশি লোক নিয়োগ করা হয়। রুন ফেং সু চি প্রতি বছর গ্রামটিতে ৩ লাখ ৬০ হাজার ইউয়ান বয়ে আনে।

বর্তমানে রুন ফেং গ্রাম গ্রামীণ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পণ্যের মুল্য অনুসন্ধান করছে। গ্রাম প্রশাসন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নারীদের তৈরি ময়দা ও স্ন্যাক্সসহ নানা পণ্য বিক্রি করতে উত্সাহ দিচ্ছে, যাতে গ্রামবাসীদের উপার্জন আরও বাড়ে।

(রুবি/রহমান)