চীনের উপর ক্রমাগত সাইবার আক্রমণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কী ধরনের ‘নিরাপত্তা উদ্বেগ’ প্রকাশিত হয়?
2023-07-27 14:51:39

জুলাই ২৭: চীনের হুবেই প্রদেশের উহান মিউনিসিপ্যাল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট ব্যুরো এবং গণনিরাপত্তা ব্যুরো গতকাল (বুধবার) আলাদাভাবে প্রকাশিত বিবৃতি ও বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ন্যাশনাল কম্পিউটার ভাইরাস ইমার্জেন্সি রিসপোন্স সেন্টার এবং ৩৬০ সিকিউরিটি টেকনোলজি কোম্পানির পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে যে, উহান ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। হামলাকারীরা বিদেশি সরকারের মদদপুষ্ট একটি হ্যাকার গ্রুপ ও অপরাধী। ফরেনসিক বিশ্লেষণের পর প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মেলে যে, এ সাইবার আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে চালানো হয়েছে।

যদিও এখনও পর্যন্ত এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা হয়নি, তবে যারা এই ধরনের খবরের সঙ্গে পরিচিত তারা একটি সুপরিচিত ছায়া দেখতে পাবেন। ২০২২ সালেও ন্যাশনাল কম্পিউটার ভাইরাস ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার এবং ৩৬০ সিকিউরিটি টেকনোলজি কোম্পানির পর্যবেক্ষণে আবিষ্কৃত হয় যে, নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি (Northwestern Polytechnical University) বিদেশি হ্যাকারদের সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছিল। তখনকার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) অধীন টেইলার্ড অ্যাকসেস অপারেশন অফিস Office of Tailored Access Operation (টিএও) ৪১ ধরনের বিশেষ নেটওয়ার্ক আক্রমণের অস্ত্র ব্যবহার করে নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ওপর হাজার হাজার সাইবার আক্রমণ চালায় এবং সেখান থেকে মূল প্রযুক্তিগত তথ্য চুরি করে।

নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং উহান ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র - দুটিই খুব সাধারণ বেসামরিক স্থাপনা। কিন্তু সেগুলোও মার্কিন সাইবার নজরদারির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সিআইএ’র প্রাক্তন কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন ২০১৩ সালে ‘প্রিজম’ সিস্টেম প্রকাশ করার সময় উল্লেখ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র আসলে বিশ্বব্যাপী সাইবারস্পেসে সর্বব্যাপী পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছে। নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং উহান ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সাইবার আক্রমণ স্নোডেনের কথার যথার্থতা প্রমাণ করেছে।

বর্তমানে, বিশ্বজুড়ে সাইবার নিরাপত্তায় নিয়োজিত গবেষকরা একমত যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী সাইবারস্পেসে যা তৈরি করার চেষ্টা করছে, তা সুস্পষ্ট আধিপত্যবাদী বৈশিষ্ট্যসহ একটি ‘শৃঙ্খলা বিন্যাস’ এবং এমনকি এ থেকে তাদের মিত্ররাও রেহাই পাবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী নজরদারি নেটওয়ার্কে চীন প্রধান লক্ষ্যবস্তু ও শিকার। যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে চীনের উপর নজরদারি বাড়ানো কৌশলগত প্রতিযোগিতার একটি প্রয়োজনীয় উপায়। যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া চীনের ‘গোপন অস্ত্র’ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের উত্থানের ‘হুমকি’ থেকে রক্ষা করা যায়। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে চোখ ও কান লাগানোর চেষ্টা করতে চায়। জানা গেছে, উহান ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সরঞ্জামগুলোতে একটি ব্যাকডোর প্রোগ্রাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা বেআইনিভাবে ভূমিকম্পের তীব্রতার ডেটা নিয়ন্ত্রণ ও চুরি করতে পারে এবং চীনের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

ইন্টারনেটে বহুল প্রচারিত একটি কথা আছে। সেটা হলো যুক্তরাষ্ট্র অন্যদের বিরুদ্ধে যে বিষয়ে অভিযোগ করে, তা নিজেই করেছে বা করছে। অনেক মার্কিন কর্মকর্তা সম্প্রতি তথাকথিত ‘যুক্তরাষ্ট্রের উপর চীনের সাইবার আক্রমণ’ নিয়ে অতিরঞ্জন করছেন। উহান ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সেন্টারে সাইবার আক্রমণ আবারও প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমান ‘নিরাপত্তা উদ্বেগের’ কারণে চীনের উপর ক্রমাগত অনিয়ন্ত্রিত, সীমাহীন ও অতল সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে এবং আবারও প্রমাণ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রকৃত হ্যাকার সাম্রাজ্য।

চীন দায়িত্বজ্ঞানহীন সাইবার আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানায় এবং সাইবার নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সাইবার আধিপত্যের বিরোধিতা করতে এবং যৌথভাবে সাইবার হামলার জবাব দিতে সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষদের উচিত হাতে হাত ধরে চলা। সাইবারস্পেস মানবজাতির এক অভিন্ন জগত। একে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বাইরের স্থান বলে মনে করে সিএমজি সম্পাদকীয়।

লিলি/রহমান/রুবি