৩১তম বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গ্রীষ্মকালীন গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিচালক ছেন উই ইয়া
2023-07-27 15:06:23

আটাশ জুলাই থেকে চীনের সিছুয়ান প্রদেশের ছেংতু শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৩১তম বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গ্রীষ্মকালীন গেমস বা সামার ইউনিভার্সিয়েড। ৮ অগাস্ট পর্যন্ত চলবে এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।

২০০১ সালে ছেন উই ইয়া বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিশ বছরেরও বেশি সময় পর তিনি আবার বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০ বছরেরও বেশি সময়ে তিনি চীনের ক্রীড়াঙ্গনে প্রাণবন্ত উন্নয়ন এবং দেশের সমৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছেন।

ছেন উই ইয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের সঙ্গে তার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। এবার তিনি বিশ্বের তরুণ-তরুণীদেরকে জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপহার দিতে চান।

ছেন উই ইয়া বলেন, এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার শ্লোগান হলো ‘স্বপ্ন অর্জন’। এই শ্লোগানের সঙ্গে মিল রয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের থিমের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের ৯৯ শতাংশ হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এখানে কোনো বিখ্যাত গায়ক বা অভিনেতা-অভিনেত্রী থাকছেন না। কেবল কয়েকটি কঠিন পরিবেশনা পেশাগত তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিয়ে করানো হচ্ছে।

ছেন উই ইয়া মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আসলে তারুণ্যের এক মহাসম্মিলনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সব সময়ই তারুণ্য ও স্বপ্নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্বপ্ন বাস্তবায়ন, কঠোর পরিশ্রম এবং তারুণ্য ও বন্ধুত্ব - গেমসের এই চেতনা গোটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিখুঁতভাবে প্রতিনিধিত্ব করে।

ছেন উই ইয়া আবেগের সঙ্গে বলেন, “তারুণ্যের চেতনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উদ্ভাবনের সাহস, সাফল্য অর্জনের সাহস এবং শিখরে আরোহণের সাহস। তরুণরা সাহসের সঙ্গে স্বপ্ন অর্জনের পথে দৌড়ায় এবং অনবরত উপরে উঠতে থাকে। এটিই মূল ধারণা, যা আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকাশ করতে চাই।”

ছেন উই ইয়া মনে করেন, খেলাধুলা শুধু শারীরিক ব্যায়ামই নয়; বরং আধ্যাত্মিকতার প্রকাশ এবং একটি জাতির চেতনার প্রদর্শনও। ক্রীড়া আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং সংহতিতে ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের রং বেইজিং শীত্কালীন অলিম্পিক গেমসের নীল রং থেকে একটু ভিন্ন। এবার উজ্জ্বল ও বর্ণিল রং বেছে নেওয়া হয়েছে। ‘সানশাইন’ বা সূর্যালোক হলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল অভিব্যক্তি।

ছেন উই ইয়া মনে করেন, শীতকালীন অলিম্পিক গেমস বেইজিংয়ে শীতকালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু এটা গ্রীষ্মকালীন প্রতিযোগিতা এবং গ্রীষ্মকালের ছেংতু শহর অনেক গরম থাকে। তার মতে, এটি এক ধরনের উদ্দীপনা, তারুণ্যের উদ্দীপনা, এতে মানুষ উত্তেজিত ও উদ্যমী বোধ করে।

ছেন উই ইয়া বলেন, ছেংতু শহর সবসময়ই মেঘলা থাকে বলে ছেংতুবাসীরা প্রাচীনকাল থেকে সূর্যের প্রতি বিশেষ অনুভূতি পোষণ করে। প্রাচীনকাল থেকেই এখানকার মানুষের মন সূর্যের প্রতি ভালোবাসা ও ভক্তিতে ভরপুর। চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে। সেটি হলো তরুণরা ‘সকাল আট বা নয়টায় সূর্য’।

সেচ্ছাসেবকসহ দু’হাজারেরও বেশি মানুষ সামার ইউনিভার্সিয়েডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন এবং পুরো অনুষ্ঠানের দৈর্ঘ্য হবে এক শ’মিনিটেরও কম।

এবারের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময়ের সমান, যদিও স্টেডিয়ামে প্রবেশ করা অ্যাথলেট এবং প্রযুক্তিগত কর্মকর্তাদের সংখ্যা শীতকালীন অলিম্পিকের প্রায় তিনগুণ। ছেন উই ইয়া বলেন, অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশপথের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য বারবার আমরা মহড়ার আয়োজন করেছি এবং একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক পারফরম্যান্সকে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে সীমিত রেখেছি।

এত অল্প সময়ের মধ্যে একটি অবিস্মরণীয় ও চমৎকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা কতটা কঠিন তা সহজেই কল্পনা করা যায়। ছেন উই ইয়া বলেন, ক্রমাগত অনুশীলনের পর তিনি বুঝতে পেরেছেন ‘চমত্কার তবে সহজসাধ্য’ - এ দুটি’র মধ্যে কোনো বড় দ্বন্দ্ব নেই।

এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উচ্চ-প্রযুক্তির পূর্ণ ব্যবহারের কারণে আগের চেয়ে আরও সৃজনশীল ধারণাগুলোকে সীমিত সময় এবং স্থানের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে সৃজনশীলতা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ছেন উই ইয়া বলেন, এবারের প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ২০ বছর আগের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটি আর জনসমাগমের উপর নির্ভর করে না কিংবা কষ্টকর অনেক প্রক্রিয়ার উপরও নির্ভর করে না।

একত্রিশতম বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমস আগে দু’বার স্থগিত হয়েছিল। এটিই ছেন উই ইয়া এবং তার দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

গত বছরের মে মাসে এ প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির স্মৃতিচারণ করে ছেন উই ইয়া বলেন, তিনি ও তার দল মঞ্চের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে একে অপরের সঙ্গে আলিঙ্গন করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, এবার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবেই। তবে পরদিনই তারা প্রতিযোগিতা আরও এক বছর পিছিয়ে দেওয়া খবর পান।

ছেন উই ইয়া বলেন, “তিন বছর সময় আমার মনে গভীর দাগ কেটেছে। অনেক কষ্ট আছে। আছে খুব বেশি ক্লান্তি, খুব বেশি বিভ্রান্তি, এবং খুব বেশি উত্তেজনা ও আশা।”

তিনি বলেন, বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করা তার জন্য ছিল প্রথমবারের মতো বড় আকারের কোন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা। তারপর তিনি নানা বড় আকারের অনুষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপ-পরিচালক এবং সমাপনী অনুষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পরিচালক এবং ২০১০ সালে কুয়াংচৌ এশিয়া গেমসের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন তিনি।

ছেন উই ইয়া মনে করেন, বড় আকারের অনুষ্ঠানের মঞ্চে কোনও পরিবেশনা পরিচালনা করা একজন পরিচালকের জন্য খুব ভালো পরীক্ষা ও অভিজ্ঞতা; টিভি নাটক বা চলচ্চিত্র পরিচালনার চেয়ে এটা একটু ভিন্ন।

বিগত ২০ বছরে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বৈদেশিক বিনিময় গভীরতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেন উই ইয়া বারবার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় আকারের অনুষ্ঠানে নিজের চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।

তিনি বলেন, “আমি নিজেই আলোর পিছনে ধাবমান ব্যক্তি। দৌড়ে সূর্য সবসময় এগিয়ে থাকে, যা আমাকে আরও জোরে দৌড়াতে অনুপ্রাণিত করে। আমার প্রতিটি সৃষ্টিই স্বপ্ন ধরার একেকটি প্রক্রিয়া।”