আকাশ ছুঁতে চাই ২৮
2023-07-27 21:59:47

 

কী আছে এবারের পর্বে

১. ইয়ুননানের মেয়ে ই বোফং

২. বদলে গেছে যাযাবর নারী বাহতের জীবন

৩.  সং যুগের কন্যা 

৪. দেশের হয়ে সেঞ্চুরি করলেন ফারজানা

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

ইয়ুননানের মেয়ে ই বোফং

ইয়ুননানের মেয়ে ই বোফং। তিনি ট্রেন অ্যাটেনডেন্টের পেশায় এগিয়ে যাচ্ছেন সাফল্যের সঙ্গে। চলুন শোনা যাক তার গল্প। 

 

চীনের কুনমিং সাউথ রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে লাওসের ভিয়েনতিয়েনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে ট্রেন। অনেক স্মার্ট তরুণ তরুণী রয়েছেন ট্রেন অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে। এদের মধ্যে আছেন তরুণী ই বোফং। 

তিনি লাও ভাষা জানেন। তাই নিজের ডিউটি তিনি সুচারুভাবে পালন করতে পারেন। 

 

ইয়ুননান প্রদেশের মংলা কাউন্টির এক গ্রামে জন্ম নেন ই বোফং। তার এই হোমটাউনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সম্পদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কারণে ইয়ুননান প্রদেশ পর্যটনের স্বর্গরাজ্য। এখন কুনমিং থেকে ভিয়েনতিয়েন পর্যন্ত রেল যোগাযোগ হওয়ায় যাতায়াত ও সুযোগ সুবিধা আগের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে।

 

ই বোফং লেখাপড়া করেছেন কুনমিং শহরে। টেকনিকাল কলেজ থেকে লাও ভাষায় মেজর নিয়ে ২০২০ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েশন করেন। 

চাকরি নেন চায়না রেলওয়ে কুনমিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কুনমিং ও ভিয়েনতিয়েনের মধ্যে প্রথম রেল যোগাযোগ শুরু হয়। বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার একটি উচ্চমানের উদাহরণ হলো  চায়না ও লাওসের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন। প্রথমদিনের সেই ঐতিহাসিক যাত্রাটিতে ট্রেন এটেন্ডডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ই বোফং। 

 

১হাজার৩৫ কিলোমিটার পথ ট্রেন পাড়ি দিতে হয়। এ বছরের জুন পর্যন্ত এই ট্রন ১৬.৪ মিলিয়ন যাত্রী ও ২১ মিলিয়ন টন মাল পরিবহন করেছে। 

এ বছরের ১৩ এপ্রিল থেকে ক্রস বর্ডার যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ই বোফং ২০টির মতো রাউন্ড ট্রিপে দায়িত্ব পালন করেছেন। 

 

ট্রেনটি যখন মংলা কাউন্টির ভিতর দিয়ে যায় তখন ই বোফংয়ের ভীষণ ইচ্ছা করে তার গ্রামের বাড়িতে যেতে যেখানে বাস করেন তার পরিবারের সদস্যরা। মংলা কাউন্টি ফল ও রাবার বাগানের জন্য বিখ্যাত। এই ট্রেনের কারণে এখন গ্রামের উৎপাদিত কৃষি ও কারুপণ্য সহজেই বাজারে পৌছানো সম্ভব। 

ইয়ুননানের মেয়ে ই তার কর্তব্য পালন করেন হাসিমুখে। আর কাজের ফাঁকে মনে মনে ভাবেন এই ট্রেন তার এলাকার উন্নয়নে বিপুল ভূমিকা রাখছে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান 


বদলে গেছে যাযাবর নারী বাহতের জীবন


চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে রয়েছে অনেক জাতিগোষ্ঠী। কাজাখ জাতিগোষ্ঠীর একজন নারী বাহত তুরলকসির জীবনে ভিাবে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে স্থানীয় সরকারের পদক্ষেপের মাধ্যমে এখন শুনবো সেই গল্প। 

 


বাহত তুরলকসি । বয়স ৫৩ বছর। তিনি বাস করেন উত্তর পশ্চিম চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের ইয়ুমিন কাউন্টিতে। 

তিনি কাজাখ জাতিগোষ্ঠীর নারী। তিনি পশুপালক পরিবারের মেয়ে। কঠোর শ্রমসাধ্য জীবন ছিল শৈশবে। 

 বিশেষ করে প্রতি গ্রীষ্মে তারা চলে যেতেন চারণভূমিতে। এই স্থানান্তরের সময় প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো।  স্থায়ী  গৃহের স্বস্তি একেবারেই ছিল না। 

 

বাহত শব্দের অর্থ সুখ। বাবা মা তার নাম বাহত রেখেছিলেন কারণ তাদের আশা ছিল ভবিষ্যত প্রজন্মের জীবন অনেক সহজ ও সুখের হবে। সেই স্বপ্ন বর্তমানে কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে। যাযাবরের জীবনে কিছুটা হলেও এসেছে স্থায়ী গৃহের শান্তি। 

 কাজাখ যাযাবর পশপুপালক সমাজের রীতি হলো শীতকালে তারা গ্রামে পশুপাল নিয়ে বাস করে। পশুদের খোঁয়াড়ে রাখা হয়। নিজেরা থাকেন শক্ত ছাউনির বাড়িতে। গ্রীষ্মে তারা পশুপাল নিয়ে চলে যান পাহাড়ী চারণ ভূমিতে। সেখানে তাঁবুতে বাস করতে হয় শীত আসার আগ পর্যন্ত। শিশুদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক জীবন সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে। 

 

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার যাযাবরদের জন্য  স্থায়ী বসতি গড়ে তোলার বেশ কিছু প্রকল্প চালু করেছে। এতে বাহতের জীবনেও এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। আগে বাহত তার স্বামী সন্তান নিয়ে চলে যেতেন চারণ ভূমিতে। তাদের স্থায়ী গৃহ ছিল না। সন্তানদের শিক্ষাজীবনও এতে বেশ ব্যহত হতো। 

 বাহতের কিশোরী মেয়ে কুরসুনাক। তার শিক্ষাজীবন নিশ্চিত করতে কয়েক বছর ধরেই পশুপাল নিয়ে গ্রীষ্মে চারণভূমিতে যাচ্ছেন না বাহত। বরং হোমটাউনে  নিজের স্থায়ী বাড়িতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকেন তিনি। বর্তমানে বাহত একটি দোকান চালান এবং সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

অন্যদিকে বাহতের স্বামী হাবুডেলাশান নুসুপবেক পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে ছাগলের পাল নিয়ে দু মাসের জন্য চলে যান চারণভূমিতে। তাদের ৪০০টি  ছাগল রয়েছে। অবশ্য  নুসুপবেক চলে যাওয়ার সময় তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু গুছিয়ে দেন বাহত ও তার মেয়ে কুরসুনাক। 

 

 তবে পুরুষসদস্যরা চারণভূমিতে চলে গেলে যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তা নিশ্চয়ই নয়। 

এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। নিয়মিত ফোনে কথা বলেন নুসুপবেকের সঙ্গে। ছুটিছাটায় পুরো পরিবার চলে যান চারণভূমিতে।

তবে স্থায়ী বাসস্থান থাকায় এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছে বাহতের জীবনে। উন্নত হয়েছে জীবনমান। এমন অনেক যাযাবর নারীর জীবনেই এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তনের ছোঁয়া, জ্বলেছে সমৃদ্ধির আশার আলো।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান 


সং যুগের কন্যা 

ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌছে দিচ্ছেন এক নারী । নাম তার চেন সিইয়ুয়ে। তিনি একজন ভ্লগার। 

 

চীনের একটি ঝকঝকে আধুনিক শহর হাংচৌ । এই শহরের একটি ঐতিহাসিক পর্যটন স্থান ওয়েস্ট লেক। এই ওয়েস্ট লেকের তীরে হাঁটা পথ ধরে এগিয়ে যেতে দেখা যায় এক তরুণীকে। পরনে তার সং রাজবংশের (৯৬০-১২৭৯ সাল) যুগের পোশাক ঐতিহ্যবাহী হানফু। পিঠে একটি ফুলের ঝুড়ি। হাতে সৌখিন চীনা পাখা। কখনও হাতে থাকে কারুকাজ করা বাঁশের ছাতা। পথিকদের হাতে সে কখনও তুলে দেয় পদ্মফুলের কলি। কখনও শিশুদের শোনায় প্রাচীনযুগের চীনা কবিতা। 

তার কাছাকাছি চোখে পড়ে এক তরুণকে। তার পরনে থাং রাজবংশের( ৬১৮-৯০৭ খ্রিস্টাব্দ) সময়কার পোশাক। তার কাঁধে রয়েছে পদ্মফুলে বোঝাই ঝুড়ি। সে যেন প্রাচীন চীনের এক ফুল বিক্রেতা। 

 

পথচলতি অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে কারা এরা? তাদের সঙ্গে ছবি তুলতেও আগ্রহের কমতি নেই কারও। সং যুগের কন্যার গেটআপে যাকে দেখা যায় তিনি হলেন ২২ বছর বয়সী চেন সিইয়ুয়ে। পুরো পরিকল্পনাটা তারই। তিনি একজন ভ্লগার। সিনা ওয়েইবোতে তার অ্যাকাউন্ট থেকে বিনীতিভাবে তিনি ব্যাখ্যা করেন তার এমন সাজপোশাকের উদ্দেশ্য। 

 

চেন ইতিহাসের ভক্ত। তিনি প্রাচীন চীনের ঐতিহ্য ও চিরায়ত চীনা সাহিত্যকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করতে চান। তিনি একজন হানফু ভক্ত। চেনের জন্ম চিয়ানসু প্রদেশের চুরোং শহরে। ছোটবেলায় অ্যানিমেটেড মুভি সিরিজ ছিনশি মিংইয়ুয়ে বা দ্য লিজেন্ড অব ছিন দেখে চীনা ইতিহাসের প্রেমে পড়েন তিনি। তার ইচ্ছা হয় এমন কোন শিল্পকর্ম তৈরি করবেন যা ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। 

২০১৮ সালে চেন হাংচৌতে আসেন এবং চায়না একাডেমি অব আর্টস বিষয়ে লেখাপড়া করেন। সাংস্কৃতিক নিদর্শন সংরক্ষণ ও পুনর্গঠন বিষয়ে পড়েন তিনি। 

আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্টাডির সময়ে তিনি পোর্সেলিনের শিল্প মেরামত করতে শেখেন এবং বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে জানেন। 

হাংচৌতে তিনি লক্ষ্য করেন অনেক নারী হানফু পরেন। এটা তহার খুব ভালো লাগে। হানফু শুধু একটি সুন্দর পোশাক নয় বরং এর সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। 

গ্র্যাজুয়েশনের সময়ে তার বিশেষ প্রজেক্ট ছিল সং রাজবংশের সময় নারীদের পরিধেয় হানফুর বিবর্তন বিষয়ে ভিডিও । এটা করতে গিয়ে তার ছয়মাস সময় লাগে এবং এক লাখ ইউয়ানের মতো ব্যয় হয়। 

চেন বলেন, আমার কাছে মনে হয় সং রাজবংশের সময়ে যে হানফু পরা হতো সেটি বর্তমান কারের জন্যও বেশ উপযোগী।

গ্র্যাজুয়েশনের পর তিনি ফুলটাইম ভ্লগার হন। পার্টটাইম চাকরি হলো হানফু মডেল ও শিল্প নির্দেশক হিসেবে। 

বর্তমান প্রজন্মকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সচেতন করতে হানফু পরে হাংচৌর ঐতিহাসিক স্থানে ঘুরে বেড়ানোর চিন্তা করেন চেন। এই কাজে তিনি সঙ্গে নেন তার বন্ধু সাই চিয়ালে এবং আরও কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে। 

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান 


বাংলাদেশের হয়ে সেঞ্চুরি করলেন ফারজানা

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের দারুণ সাফল্য এখন মানুষের মুখে মুখে। ২২ জুলাই ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের হয়ে সেঞ্চুরি করে নারী দলের প্রথম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন কৃতী নারী ফারজানা হক। 

 

এরআগে ২০২১ সালে জিম্বাবুয়েতে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৪১ বলে ১৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন শারমিন আক্তার। তবে প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় সেটি লিস্ট ‘এ’র সেঞ্চুরি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। ঢাকার মিরপুরে ফারজানার সেঞ্চুরির দিনে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।৩০ বছর বয়সী ফারজানা প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির আগে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংস খেলার কীর্তিও গড়েন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। 

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।


সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া,  

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল