শহর ও স্মার্ট পরিবহন
2023-07-26 09:38:23

চীনা বৈশিষ্ট্যের আনুধিকায়নের একটি দিক স্মার্ট পরিবহন। এ খাতটি দ্রুত উন্নয়নের সময়ে প্রবেশ করেছে। চীনের রাস্তায় এখন দেখা যায় চালকবিহীন যানবাহন। এর মধ্য দিয়ে শহরের পরিবহন ব্যবস্থা স্মার্ট হয়ে গেছে। সাই-ফাই সিনেমার দৃশ্য এখন আমাদের জীবনেই দেখা যায়।

যদি একটি চালকবিহীন ট্যাক্সি আপনার সামনে এসে থামে, তাতে উঠার সাহস হবে আপনার? শাং হাই শহরের চিন ছিয়াংয়ের কয়েকটি সড়কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি-চালিত গাড়ি পরীক্ষা অঞ্চলে চালকবিহীন ট্যাক্সি টেস্টের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

যাত্রী এমন ট্যাক্সিতে বসে ইলেকট্রনিক স্ক্রীনে লাগানো ডিভাইসে মুখে নির্দেশনা দিতে পারেন। আপনার কথা শুনে গাড়িটা এগিয়ে যাবে। রাস্তায় যদি বেশি গাড়ি বা অন্য কোনও সমস্যা থাকে, তাহলে এ গাড়িটি সক্রিয়ভাবে গতি কমাবে। এ গাড়ি ট্রাফিক লাইটের অর্থ বোঝে। এমনই এক চালকবিহীন ট্যাক্সি বৃষ্টির মধ্যে ১১ মিনিটে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার যাত্রা শেষ করে। এটা অনুমিত সময়ের তুলনায় ৪ মিনিট কম।

ট্যাক্সিতে চালক থাকে না, নিরপত্তাকর্মীও থাকে না। পুরোপুরি মানবহীন এ গাড়ি আনুষ্ঠানিকভাবে শাংহাইয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে চলছে। এর মানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি-চালিত গাড়ির উন্নয়ন নতুন একটি পর্যায়ে প্রবেশে করেছে।

শাংহাই শহরের সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুযায়ী, চালকবিহীন গাড়ি কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নির্দিষ্ট ২৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে পরিক্ষামূলক ড্রাইভিং করতে পারবে।

আন থু স্মার্ট ড্রাইভিং কোম্পানির ভাইস-প্রেসিডেন্ট লিন থাই লাই বলেন, কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পথচারী ও গাড়ির সংখ্যা বেশি এবং রাস্তার অবস্থাও জটিল। এমন জায়গায় পরীক্ষা চালানো চালকবিহীন ড্রাইভিং প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য অর্থবহ।

নিয়ম অনুযায়ী, একটি কোম্পানিকে সড়কে পরীক্ষা থেকে বাণিজ্যিক অপারেশন পর্যন্ত চারটি ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একটি চালকবিহীন গাড়ি সড়কে দেড় হাজার কিলোমিটার টেস্ট ড্রাইভ শেষ করার পর যাত্রী বহন পরীক্ষা শুরু করতে পারে এবং ৫ হাজার কিলোমিটার যাত্রী বহন পরীক্ষায় যদি কোনও দুর্ঘটনায় না পড়ে, তাহলে পরীক্ষামূলক অপারেশনের জন্য আবেদন করতে পারে।

বন্ধ রাস্তা থেকে উন্মুক্ত রাস্তায় পরীক্ষা চালু, নিরাপত্তা কর্মী থাকা থেকে বাদ দেওয়া পর্যন্ত - চালকবিহীন ড্রাইভিংয়ের নবায়ন ও উন্নয়ন এগিয়ে যাচ্ছে এবং এ শিল্পে নতুন সম্ভবনা বয়ে আনে।

চীনের মেগা শহর শাংহাইয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে যে এমন চালকবিহীন ড্রাইভিংয়ের পরীক্ষা চালানো যায়, তা আইনগত নিশ্চয়তার ফসল। পরীক্ষার সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাই পরিবহন বিমা, দুর্ঘটনার দায়িত্ব সনাক্তকরণসহ নানা ক্ষেত্রে আগে আইন প্রণয়ন করতে হয়। সেজন্য শাংহাইয়ের ফু তুং এলাকা এ পরীক্ষার জন্য ধারাবাহিক আইন প্রণয়ন করেছে। জানা গেছে, শাংহাইতে আরও বেশি জায়গা এমন পরীক্ষার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে, চীনের বড় বড় শহরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি-চালিত গাড়ি শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে। স্ব-চালিত ট্যাক্সি আর কোনও নতুন ব্যাপার নয়। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাই তু কোম্পানির স্ব-চালিত ট্যাক্সি মোট ৬ কোটি কিলোমিটার টেস্ট ড্রাইভ করেছে এবং এ ট্যাক্সির সেবা নিতে মোট ২০ লাখ মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছে। ফোন অ্যাপের মাধ্যমে আপনার বর্তমান অবস্থান এবং গন্তব্যের ঠিকানা দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে একটি স্ব-চালিত ট্যাক্সি। এখানে কোন চালক থাকে না। চলতি বছরের মার্চ মাসে বেইজিংয়ে চালু হয় মানবহীন ড্রাইভিংয়ের নমুনা অ্যাপ্লিকেশন। এ পর্যন্ত বেইজিংয়ে রয়েছে ১১৬টি মানবহীন ড্রাইভিং পরীক্ষা গাড়ি এবং ২০ লাখ কিলোমিটারের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। পনের লাখ মানুষ স্ব-চালিত ট্যাক্সিতে চড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষ ইতিবাচক রিভিউ দিয়েছে।

বেইজিংয়ে বাণিজ্যিকভাবে স্ব-চালিত ট্যাক্সি পরিচালনার জন্য ৭ জুলাই থেকে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট মান উৎরানোর পর সাধারণ মানুষের জন্য স্ব-চালিত ট্যাক্সি সেবা প্রদান করতে পারবে।

শুধু বেইজিং শাংহাই নয়, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে চীনের ছুংছিং ও উহান শহরেও জারি হয় চালকবিহীন ড্রাইভিংয়ের বাণিজ্যিক পরীক্ষার নীতিমালা। লকবিহীন ড্রাইভিং স্মার্ট পরিবহন পদ্ধতির অন্যতম একটি উপাদান। ‘ভবিষ্যতের শহর’ সিয়োং আনে অবকাঠামো নির্মাণ থেকে শুরু করে সড়কের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও চালকবিহীন বাস পর্যন্ত - আমরা ‘ভবিষ্যতের শহরে’ স্মার্ট পরিবহনের রূপ পাই।

যখন জেব্রা ক্রসিংয়ের লাইট জ্বলে, তখন পথচারীরা রাস্তা পার হয়। সিয়োং আন শহরে চালু হয়েছে প্রথম স্মার্ট জেব্রা ক্রসিং। এ লাইট শুধু পথচারীকে নয়, সেখান দিয়ে চলাচলকারী গাড়িকেও সিগনাল দিতে পারে। বিশেষ করে অন্ধকার বা কুয়াশার সময়ে এমন লাইট থাকলে সড়ক আরও নিরাপদ হয়। স্মার্ট সড়কে চলে স্মার্ট গাড়ি, সিয়োং আনে চালু হচ্ছে চালকহীন বাস। এ বাস সিগন্যাল লাইট ও সাইন চিনতে পারে এবং জরুরি অবস্থায় ৩ মিটারের মধ্যে থামতে পারে। পরিবহন ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশ নির্মাণের পরীক্ষামূলক শহর হিসেবে সিয়োং আন শহরে স্ব-চালিত ড্রাইভিং, বুদ্ধিমান আইওটি, যানবাহন-সড়ক সমন্বয়সহ নানা ক্ষেত্রে নমুনা প্রকল্প চলছে এবং ভবিষ্যতেও স্মার্ট পরিবহন ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত শহর হিসেবে কাজ করবে সিয়োং আন। (শিশির/রহমান/রুবি)