শেকড়ের গল্প | পর্ব ২৮
2023-07-26 21:31:57

এবারের পর্বে রয়েছে

১. চীনের হাইব্রিড ধানের থিওরি কাজে লাগাচ্ছে ফিলিপিন্স

২. বাংলাদেশের মতো চীনেও জনপ্রিয় আম 

৩. গোলাপ চাষ ভাগ্য বদলেছে চাষীদের

েেে

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ। 

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে। 


১. চীনের হাইব্রিড ধানের থিওরি কাজে লাগাচ্ছে ফিলিপিন্সের গবেষকরা 

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসলের উৎপাদন। বিশেষ করে বন্যা ও খরায় ফলন কয়েকগুণ কমে যায়। সম্প্রতি ফিলিপিন্সের গবেষকরা এমন এক জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন, যা যেকোন কঠিন সময়ে টিকে থাকবে। দেশটির কৃষি জমিতে এরই মধ্যে লাগানো হয়েছে এই জাতের ধান। আর ফিলিপিন্সের এতসব কার্যক্রম উৎসাহিত করেছে চীনের হাইব্রিড ধানের তত্ত্ব। 

 

পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষের প্রধান খাবার ভাত। কিন্তু তীব্র তাপদাহ ও খরার কারণে অনেক সময় ধানের উৎপাদন কমে যায়। আবার প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের কারণেও হেক্টরের পর হেক্টর জমির ফসল ডুবে যায়। 

ফিলিপিন্সের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট’র গবেষক ড. জওহর আলী বলেন, পরবর্তী দশকে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি হবে ভয়াবহ; হুমকির মুখে পড়বে বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা। 

 

ড. জওহর আলী, ফিলিপিন্সের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট, ফিলিপিন্স

“বড় চ্যালেঞ্জের মুখে এখানে ধান উৎপাদন করতে হয়। ফসল উৎপাদনের জন্য সময় কম পাওয়া যায়। এতসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পরবর্তী দশকে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে।“ 

প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা এমন ধানের চারা তৈরি করছেন, যা খরা ও বন্যার মতো চরম পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে।

 

এক লাখ ৩২ হাজার নমুনাসহ বিশ্বের বৃহত্তম বীজের ভাণ্ডার রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের। এখান থেকে বাছাই করে বিভিন্ন জাতের ধান রূপান্তর করা হয়, যেগুলো যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিকে থাকবে।  

 

চীনের হাইব্রিড ধানের জনক হিসেবে পরিচিত প্রসিদ্ধ কৃষিবিদ ইউয়ান লংপিংয়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন গবেষক ড. জওহর আলী। তার গবেষণার মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে ইউয়ান লংপিংয়ের হাইব্রিড ধানের প্রযুক্তি থিওরি। 

 

গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গ্রীন সুপার রাইস প্রজেক্টে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. জওহর আলী। এই গবেষণা টিম সফলতার সঙ্গে ৩৫টি জাতের হাইব্রিড ধান উদ্ভাবন করেছে। যেকোন ধরনের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে এই জাতের ধান। এই ৩৫ জাতের মধ্যে ফিলিপিন্সের কৃষিজমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ২৬ জাতের ধান।  

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধান উৎপাদন খাতের উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা কমাতেও সাহায্য করছে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান। 


প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা:  শিহাবুর রহমান


 ২. বাংলাদেশের মতো চীনেও জনপ্রিয় আম

চীনের স্থানীয় বাজারে গেলে দেখা যায় নানা জাতের আম । দেশটির বৃহত্তম আম উৎপাদনকারী অঞ্চল কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মাঠ থেকে আম সংগ্রহ করছেন চাষীরা। আর মাঠ থেকেই সতেজ ফল পৌছে যাচ্ছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।  

 

দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের থিয়ানতং কাউন্টির পাইস্যু শহর । এটি চীনের বৃহত্তম আম উৎপাদনকারী এলাকা। দেশের মোট আম উৎপাদনের প্রায় ২৫ শতাংশই আসে এ অঞ্চল থেকে।  

চলতি বছর এ অঞ্চলের প্রায় ৯৩ হাজার হেক্টর জুড়ে লাগানো হয়ছে আম গাছ। প্রতিটি গাছ থেকে এবার সংগ্রহ করা হচ্ছে অসংখ্য আম। 

ফসল কাটার মৌসুম পুরোদমে শুরু হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া এবং পোকামাকড় ও রোগের প্রাদুর্ভাবের ঘটনা কম হওয়ায় এ বছর ফলন ও ফলের গুণমান উভয়ই ভালো হয়েছে। এবার গেল কয়েক বছরের চেয়ে ভালো দাম পাওয়ারও প্রত্যাশা করছেন তারা। 

  

মাঠ থেকে আম সংগ্রহ করে এখন চলছে বাজারজাতের ব্যবস্থা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি আম প্রসেস করছেন শ্রমিকরা। সংরক্ষিত এ আম দ্রুত পৌছে যাবে চীনের বিভিন্ন প্রান্তে। 

 

চলতি বছর পাইস্যুতে মোট আমের ফলন ১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন টন হবে বলে প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্টরা। যেখান থেকে কৃষকের আয় হবে ১০ বিলিয়ন ইউয়ান। 


প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- মাহমুদ হাশিম


৩. গোলাপ চাষ করে ভাগ্য বদলেছে চাষীদের

পৃথিবীজুড়ে মানুষের পছন্দের ফুল গোলাপ। তবে শুধু সৌন্দর্য বিতরণ নয় নানা রকম পণ্য তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় আকর্ষণীয় এই ফুল। বিশেষ করে চীনে গোলাপ থেকে দারুণ সব পণ্য তৈরী করা হয়। দেশটির উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে গোলাপ বাগান এবং গোলাপজাত পণ্যের শিল্প বদলে দিয়েছে এলাকার চাষীদের 

 

চীনের সবচেয়ে বড় মরুভূমি তাকলামাকান। এই মরুভূমির বুকে ফুটছে গোলাপ ফুল। উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের হোথান প্রিফেচারের ইয়ুথিয়ান কাউন্টিতে গড়ে উঠেছে গোলাপ বাগান। মরুভূমির রয়েছে এক বিশেষ সম্পদ। সূর্যের আলো ও উত্তাপ। এ দুটি সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এখানে গোলাপ চাষ এগিয়ে চলছে। ৪৫০ হেকটর এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে গোলাপের খামার।  

গরম ও শুকনো আবহাওয়া থেকে বাঁচিয়ে তাজা রাখতে গোলাপ পাপড়িগুলো কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হয়। কোল্ড স্টোরেজ থেকে এগুলো পাঠানো হয় প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায়। সেখানে গোলাপ জল, গোলাপ তেল, রোসজ্যামসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হয়। 

হোথানের গোলাপ হলো প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দামাস্ক গোলাপের জাত। সিনচিয়াংয়ের  সুপ্রাচীন রেশমপথ অঞ্চলে এর ঐতিহ্য ও সুনাম  রয়েছে। গোলাপ বাগানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যটন শিল্পও চাঙা হয়ে উঠেছে। সাংস্কৃতিক পর্যটনকে জাগিয়ে তুলতেও ভূমিকা রাখছে হোথানের গোলাপ চাষ।


প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া 

সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান






 


এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি। 

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে। 

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প। 


পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল  

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী