‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ২৮
2023-07-26 21:44:44

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।       

১. চীনে ৩০ লাখের বেশি চাকরিপ্রার্থী উপকৃত হয়েছেন সরকারি প্রণোদনা থেকে

 

তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে গত বছরের জুলাই মাস থেকে স্কিম চালুর পর থেকে ৯ লাখ ২০ হাজার কোম্পানিকে চাকরি সৃষ্টিতে প্রায় ১’শ কোটি মার্কিন ডলার ভর্তুকি দিয়েছে চীন সরকার। 


সম্প্রতি দেশটির মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এ তথ্য প্রকাশ করেছে।  বেইজিংয়ে দপ্তরটির উপ-পরিচালক লিউ ফেং এক সংবাদ সম্মেলনে জানান,  সরকারের এই উদ্যোগের ফলে এখন পর্যন্ত ৩০ লাখের বেশি তরুণ চাকরিপ্রার্থী উপকৃত হয়েছেন।  

 

এসময় তিনি আরও জানান, তরুণদের জন্য আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে এই পরিকল্পনা নীতির মেয়াদ এই বছরের শেষ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। 


কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং অন্যান্য যুবকদের জন্য চাকরি নিশ্চিত করতে অসুবিধায় থাকা সংস্থাগুলোকে নিয়োগের জন্য এই প্রণোদনা দেওয়া হয়।  নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে যেসব প্রণোদনা দেওয়া হয়, তার মধ্যে এটি একটি।  


 


কলেজের স্নাতকদের মতো আরও তরুণদের নিয়োগে উৎসাহ দিতে কোম্পানিগুলোর শ্রম চুক্তিতে স্বাক্ষর করা উচিত বলে জানান মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক লিউ ফেং। 


‘প্রণোদনা পাওয়ার আগে অন্তত এক মাসের জন্য বেকারত্ব বিমা, কাজের সাথে সম্পর্কিত দুর্ঘটনাজনিত বিমা এবং কর্মচারীদের জন্য পেনশন বিমার জন্য প্রিমিয়াম প্রদান করা উচিত, যা বেকারত্ব বিমা তহবিলের মাধ্যমে প্রদান করা হবে কোম্পানিগুলোকে।’   

 

  

উপযুক্ত সংস্থাগুলো নিজেরাই প্রণোদনার জন্য আবেদন করতে পারে – একথা জানিয়ে তিনি বলেন, বেকারত্ব বিমা সংস্থাগুলো উপাত্ত তুলনা এবং তথ্য যাচাই শেষ করার পর তাদের কর্পোরেট অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করার জন্য অপেক্ষা  করে। 

 

এর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি জোরদার করার ফলে বছরের প্রথমার্ধে নতুন করে ৬৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যা সারা বছরের নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে ৫৭ শতাংশ বেশি। 


প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান 


২. চলতি বছরের প্রথমার্ধে বাৎসরিক চাকরি তৈরির লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে 

২০২৩ সালের প্রথম ৬ মাসে ৬৭ লাখের বেশি শহুরে চাকরি তৈরি করেছে চীন, যা দেশটির বাৎসরিক শহুরে চাকরি তৈরির লক্ষ্যমাত্রার ৫৭ ভাগ। সম্প্রতি চীনের মানবসম্পদ এবং সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রনালয় এই তথ্য জানায়। মন্ত্রনালয়ের সূত্র অনুযায়ী, জুন মাসে দেশটির শহরগুলোতে বেকারত্বের হার কমে দাঁড়ায় ৫দশমিক ৩ শতাংশে। 

 

চলতি বছরের শুরু থেকেই শহুরে চাকরি তৈরির একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগুচ্ছে চীন সরকার।   বছর শেষ হতে এখনো ৬ মাস বাকি। তবে এর মধ্যেই সেই লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও বেশি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।  

 

সম্প্রতি চীনের মানবসম্পদ ও সামাজিক মন্ত্রণালয় জানায়, প্রথম ছয় মাসে কর্মসংস্থান নীতি অপ্টিমাইজ করে সামঞ্জস্যতা আনা হয়েছে এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে চাকরিদাতাদের প্রণোদনা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রনালয়ের প্রত্যাশা এতে  ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আরো কর্মী নিয়োগ দিতে উৎসাহী হবে। 


কর্মসংস্থানের উপর প্রণোদনায় জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৫২.৮ বিলিয়ন ইউয়ান খরচ করেছে মন্ত্রনালয়। যুব কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা কর্মসূচির মাধ্যমে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রচেষ্টা করছে চীন সরকার। জুন মাসের শেষে মোট ৬ লাখ ৮৩ হাজার শিক্ষানবিশ পদ তৈরি হয়েছে চীনে। এরইমধ্যে ৫ লাখ ১৯ হাজার মানুষের শিক্ষানবিশ হিসেবে নিয়োগ হয়েছে। 

 

সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল থেকে ৩৪ হাজার স্নাতক ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত সময়ে সংগঠিত শ্রম সেবা রপ্তানি, অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প ও দারিদ্র্যতা থেকে সদ্য উঠে আশা মানুষদের জন্য জনকল্যানমূলক চাকরি প্রোগ্রাম সহ বেশকিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রনালয়ের সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছর জুন মাস শেষে ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি দারিদ্র্যতা থেকে সদ্য উঠে আসা মানুষ নতুন চাকরি পেয়েছে।  

 

গত ৬ মাসে চীনের মানবসম্পদ এবং সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সেবাও দিয়েছে,  যা ৪৭ হাজার প্রধান ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখের বেশি কর্মীকে নিয়োগ দিতে সহায়তা করে। তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ৯ হাজার ৩০০ কোম্পানি ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে চাকরি দিয়েছে। 


প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন 

সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

৩. আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশটির প্রথম ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতা। 


 


আর সেখানে নিজেদের তৈরি নতুন ইলেকট্রিক ফর্মুলা ভেহিকেল সিপি-ই২৩ নিয়ে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'টিম ক্র্যাক প্লাটুন'। 


যারা ২০১৯ সালে দেশের প্রথম ইলেকট্রিক ফর্মুলা ভেহিকেল নিয়ে ফর্মুলা স্টুডেন্ট জাপানে অংশগ্রহণ করে।


৪. সাহসী তরুণ ডাক্তার উও ছাও 

বেইজিংয়ের একজন তরুণ ডাক্তার উও ছাও।  ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উহান শহরকে সাহায্য করতে যিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। এমন একজন সাহসী তরুণের গল্প থাকছে আমাদের এবারের তারুণ্যের অগ্রযাত্রায়। 

 

তরুণ চিকিৎসক উও ছাও।উহানে ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের সময় চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত কয়েক হাজার চিকিৎসকের মধ্যে উও ছাও অন্যতম চিকিৎসক ছিলেন। তিনি পিকিং ইউনিভার্সিটি থার্ড হাসপাতালের কনিষ্ঠতম নিউরোসার্জনদের একজন। 


মানুষের জীবন বাঁচানোর বৃহত্তর দায়িত্ব কাঁধে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন এই তরুণ চিকিৎসক।  সেই সময়, তিনি যে রোগীদের পেয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই ছিলেন গুরুতর অসুস্থ। 

 


"প্রথম দিকে, একজন তরুণ ডাক্তার হিসেবে, আমি এই কাজের জন্য যথেষ্ট যোগ্য কিনা সে সম্পর্কে আমি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু আমরা কাজ শুরু করার সাথে সাথে আমি দেখতে পেলাম যে আমি দায়িত্ব নিতে পারি এবং শেষ পর্যন্ত আমি ভালো কাজ করতে পেরেছি। 


২০২০ সালের মার্চের ১০ তারিখ, উও ছাও এবং তার সহকর্মী ওয়াং পেন ৩৪ তরুণ চিকিৎসকের পক্ষে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের কাছে চিঠি লেখেন। যাদের প্রত্যেকের জন্ম ১৯৯০ সালের পরে।    

দেশের এই বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে তরুণদের এই চিকিৎসক দল দৃঢ়ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং জাতির পাশে দাঁড়াবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তারা।


তাদের ত্যাগের প্রশংসা করে, রাষ্ট্রপতি সি চিঠির উত্তরে চীনের তরুণদের বড় চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন।   


চিঠির উত্তরে সি আরো উল্লেখ করেন, একটি জাতি তখনই আশ্বস্ত হতে পারে এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত পেতে পারে যখন তার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আদর্শ, ক্ষমতা এবং দৃঢ় দায়িত্ববোধ তৈরি হয়।  

 

প্রতিটি প্রজন্মের নিজস্ব মিশন আছে। দ্রুত উন্নয়নশীল চীনে বেড়ে ওঠা, তরুণরা আরও বেশি সুযোগ গ্রহণ করতে পারছে বলেই আরও বেশি দায়িত্ব কাঁধে নিতে পারছে বলে মনে করেন চীনের অন্যতম সেরা হাসপাতালে কাজ করা এই তরুণ চিকিৎসক।

  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যায়, চীনা তরুণরা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করা থেকে শুরু করে হাই-টেক শিল্প এবং উন্নয়নে অবদান রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পরিসংখ্যান বলছে,  তিন বছর আগে কোভিড মহামারীর প্রাদুর্ভাবের প্রতিক্রিয়া হিসেবে হুবেই প্রদেশে আসা ৪২ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর এক চতুর্থাংশেরও বেশির বয়স ৩০ এর নিচে। 


প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম 


আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য। 


পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী 

অডিও সম্পাদনা:  রফিক বিপুল 

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী