‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ২৮
2023-07-25 21:17:37

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। সাংস্কৃতিক পর্যটন শহর ইউইয়াং  

২। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর ‘ড্রাইং ক্লোথস ফেস্টিভ্যাল’ 

৩। প্রাচীন শহর কুয়ানতু


বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"। 

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।   

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ২৮তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।   


১। সাংস্কৃতিক পর্যটন শহর ইউইয়াং  


সংস্কৃতি ও পর্যটনের জন্য সুপরিচিত ইউইয়াং শহর। চীনের হুনান প্রদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এই শহর। এই শহরের দক্ষিণে প্রতিবেশী চাংশা শহর, পূর্বে চিয়াংসি প্রদেশ এবং উত্তরে হুবেই প্রদেশ অবস্থিত। আর এটি ইয়াংজি নদীর মাঝখানে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর।

 

তিন রাজার সময়কালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই সাংস্কৃতিক শহর।  প্রাচীনকালে এই শহর পরিচিত ছিল বালিং এবং ইউয়েচৌ নামে। এই শহরের রয়েছে ১৮০০ বছরের ইতিহাস।  

এই শহরে রয়েছে  তংথিং হ্রদ, বিখ্যাত ইউইয়াং টাওয়ার এবং রূপকথার মতো চুনশান দ্বীপ। তংথিং লেককে বলা হয় ইয়াংজি নদীর কিডনি।যেখানে নৌকা বা স্পীডবোটে চড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা। আর তংথিং লেকের তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে  বিশ্বমানের প্যাভিলিয়ন বা ইউইয়াং টাওয়ার।  

  

চীনের ঐতিহ্যবাহী ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যালের জন্যও বিখ্যাত এই শহর। ১৯৮৭ সাল থেকে ইউইয়াং শহরেও খুব জাকজমকপূর্ন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই উৎসব। এই উৎসবটি কমপক্ষে ৩দিন স্থায়ী হয়, যা আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। ইউইয়াং-এ উৎসব চলাকালীন, পর্যটকরা ড্রাগন বোট রেস উপভোগ করা, ঐতিহ্যবাহী নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড দেখা, ঐতিহ্যবাহী চীনা চাল-পুডিং খাওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারে। 

 

বছরের যেকোন সময় আপনি ঘুরতে যেতে পারেন এই শহরে। এই শহরটি গ্রীষ্মে খুব বেশি গরম বা শীতকালে খুব ঠান্ডা নয়। তবে পর্যটকরা মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত  ইউয়েয়াং দেখার সেরা সময় মনে করেন। কারণ বছরের বাকি মাসগু্লোত তংথিং হ্রদের শুষ্ক মৌসুম, যা হ্রদের সেরা দৃশ্য দেখার নিশ্চয়তা দেয় না।

  

একইসাথে এই সময়ে লেক পরিপূর্ণ থাকে পরিযায়ী পাখিতে। প্রতি শীতে, হাজার হাজার পাখি আসে এই হ্রদে।  প্রতি ডিসেম্বরে, একটি আন্তর্জাতিক পাখি-পর্যবেক্ষন উৎসবও অনুষ্ঠিত হয়।  

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া 

২। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর ‘ড্রাইং ক্লোথস ফেস্টিভ্যাল’ 

৫৬ জাতিগোষ্ঠীর দেশ চীন। প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উৎসব। এই যেমন রেড ইয়াও জাতি খুব ঘটা করে উদযাপন করে ‘ড্রাইং ক্লোথস ফেস্টিভ্যাল’ বা কাপড় শুকানো উৎসব।

 

দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি ছুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লংশেং কাউন্টির বাসিন্দারা এই উৎসবের সময় রঙিন কাপড় জানালার বাইরে শুকাতে দেন। সাধারণ বাঁশের তৈরি চাটাইয়ের উপর কাপড়গুলো শুকানো হয়। সূর্যের আলো এসে কাপড়গুলো জীবাণুমুক্ত করে। তারা মনে করেন, কাপড়গুলোকে পোকামাকড় ও ব্যকটেরিয়া মুক্ত করতে এটি একটি প্রাকৃতিক উপায়। এর মাধ্যমে তারা সুস্থতা ও সৌভাগ্য লাভের প্রত্যাশা করেন।

  

চন্দ্র পঞ্জিকার ৬ষ্ঠ মাসের ৬ষ্ঠ দিনে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। এবং রেড ইয়াও জাতিগোষ্ঠী এই উৎসবকে মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন করে। কুইলিন সিটির চমৎকার এই জায়গায় বসবাস করা রেড ইয়াও জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস ও প্রানবন্ত সংস্কৃতি। 

ঐতিহ্যবাহী লাল রঙের পোশাক এই জাতির অনন্য এক বৈশিষ্ট্য। এই উৎসব চলাকালীন স্থানীয় মেয়েরা লাল রঙের পোশাক পরে গোল হয়ে বসে এবং বুনন নৈপুন্যতা প্রদর্শন করে। এতসব আয়োজনের মাধ্যমে জীবনে ভালো কিছু প্রত্যাশা করেন তারা। নব্য বিবাহিত দম্পতিরা এ দিনটিকে বিশেষ গুরত্বের সঙ্গে দেখেন এবং জীবন সাজাতে সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

 

রেড ইয়াও জাতিগোষ্ঠীর দারুণ এই পরিবেশনা দেখতে আসেন পর্যটকরা। পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয়র বাসিন্দাদের উৎসবে যোগ দেন তারা। পুরুষরা যখন বাদ্যযন্ত্র বাজায়, মহিলারা ছন্দ মিলিয়ে ঐতিহ্যবাহী নাঁচ করে। উৎসবটি একদিনের হলেও বেশ কিছু সময় ধরে এর রেশ রয়ে যায়।

প্রতিবেদন- হাবিবুর রহমান অভি 

সম্পাদনা- আফরিন মিম 

৩। প্রাচীন শহর কুয়ানতু

কুনমিং শহরের একটি দুর্দান্ত পর্যটন স্পট হলো কুয়ানতু ওল্ড টাউন। এখানে অল্প জায়গার মধ্যে রয়েছে অনেক কিছু। 

কুনমিং সিটির দক্ষিণ পূর্ব উপকণ্ঠে তিয়ানশি লেকের তীরভূমিতে বাওসিং নদীর তীরে প্রাচীন একটি ছোট শহর হলো কুয়ানতু। লুয়োফং গ্রামে এটি অবস্থিত। তবে এখন এটি শহরের মধ্যেই বলা চলে। ব্যস্ত মহাসড়কের পাশেই এই স্থান। এখানে বাস যায়। সাবওয়ে স্টেশনও খুব কাছে। 

 

১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে স্থানটি। দেড় থেকে দুহাজার বছরের ইতিহাস আছে এই গ্রামের।  বিখ্যাত দালি রাজত্বের সময়  একহাজার বছর আগেই এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে এবং এলাকাটি বাজার ও মন্দিরের সমন্বয়ে একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়। 

 

এখন এটি পর্যটন বিভাগ সংরক্ষণ করে রেখেছে। এখানে মাত্র দেড় কিলোমিটার এলাকার ভিতর থাং, সং, ইয়ুয়ান, মিং ও ছিং রাজবংশের সময়ে গড়ে ওঠা আটটি মন্দির রয়েছে। বিখ্যাত শাওলিন টেম্পলের শাখাও আছে এখানে। এই টেম্পলে ঐতিহ্যবাহী মার্শাল আর্ট শেখার ব্যবস্থা আছে। 

 

বাস স্টপেজ থেকে নেমে প্রথমেই চোখে পড়ে বিশাল খোলা চত্বর। সামনে কারুকার্যকরা চীনা স্টাইলের তোরণ। ভিতরে হাঁটা পথ। দুই দিকে দোকান । আরও একটু এগুনোর পর মন্দির চত্বরে পৌছানো যায়। মিয়াও চান মন্দির, থু চু মন্দির, ফা তিং মন্দির, ওয়েন মিং অ্যাটিক , খুই সিং অ্যাটিক, কুয়ান ইন টেম্পল, লিং ইয়ুন অ্যাটিক, সান শ্যং প্রাসাদ, রান তং টেম্পল এবং উকু টেম্পল দেখা যাবে। বিশাল খোলা চত্বরে আছে চিনকাং প্যাগোডা। ১৪৫৮ সালে এই প্যাগোডা নির্মিত হয়। এটি চীনের প্রথম হীরক-সিংহাসন প্যাগোডা। এটি বজ্রসিংহাসন স্টাইলে নির্মিত প্যাগোডা। এখন সারা বিশ্বে মাত্র ছয়টি বজ্র প্যাগোডা আছে। এর পাঁচটিই চীনে অবস্থিত। 

 

তিব্বতি বৌদ্ধ  ধর্ম কুনমিংয়ে প্রথম কুয়ানতু টাউনেই প্রচারিত হয়। এখানে মিয়াওচান টেম্পল ১৩২৫ সালে নির্মিত হয়।  

কুয়ানতু প্রাচীন শহরে মন্দিরের পাশাপাশি আরও অনেক দেখার বিষয় আছে। এখানে কারুশিল্প সামগ্রীর অনেক দোকান আছে যেখান থেকে চমৎকার সব কারুশিল্প কেনা যায়। আরও আছে রেস্টুরেন্ট পাড়া। এখানে ইয়ুননানের বিখ্যাত সব খাদ্য পাওয়া যায়। হালাল রেস্টুরেন্টও রয়েছে। খোলা চত্বর থেকে পাহাড়ের অপূর্ব সুন্দর দৃশ্যও দেখা যায়। নদীর উপর আছে পাথরের প্রাচীন সেতু। 

ছোট ছোট কয়েকটি জলাশয় আছে কুয়ানতু স্পটে। এখানে মাছ ধরা ও পিকনিক করার মতো সুন্দর স্থান রয়েছে। 

জায়গাটি শপিংয়ের জন্যও দারুণ সুবিধাজনক। এখানে ব্র্যান্ড পোশাক থেকে শুরু করে নানা রকম পোশাক, জুতা, অলংকারের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে এখানে নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তিব্বতি হস্তশিল্পের দোকানে পাওয়া যায় বেশ কিছু ভেষজ ওষুধ ও প্রসাধনী সামগ্রী। 

 

প্রতিদিন নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় এখানে। কাছেই বাওসিং নদীর তীরে একটি পার্কে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিদিনস গানের ও নাচের আসর বসায়। পর্যটকরা চাইলে সেখানে যোগ দিতে পারেন। 

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া 

সম্পাদনা- আফরিন মিম 


ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী