আফ্রিকান কৃষি প্রযুক্তিবিদের চোখে ইউয়ান লংপিং
2023-07-24 14:57:00

‘হাইব্রিড ধানের জনক’ ইউয়ান লংপিংয়ের সঙ্গে দু’বার সাক্ষাৎ মাদাগাস্কারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি প্রযুক্তিবিদ র‌্যাম্বো আসালামের (Rambo Asalama) জন্য ছিল স্বপ্ন জয়ের উৎসাহ।

 

খাদ্য স্বয়ংসম্পুর্ণ হওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০০৭ সাল থেকে মাদাগাস্কার চীনের সঙ্গে হাইব্রিড বা উচ্চফলনীল ধান নিয়ে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চালাতে শুরু করে। দু’দেশের প্রযুক্তিবিদরা রাজধানী আন্তানানারিভোর নিকতবর্তী মহিতসি (Mahitsy) শহরে একসঙ্গে হাইব্রিড ধান নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং সেগুলো জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

 

শুরুর দিকে হাইব্রিড ধানের নানাবিধ সুবিধার কথা শুনে র‌্যাম্বো আসালাম সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতেন না। ২০১৬ সালে তিনি মহিতসি শহরে গিয়ে বেশ কয়েক ধরনের পরিমাপ পদ্ধতি ও পরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করেন এবং আবিষ্কার করেন যে, হেক্টরপ্রতি হাইব্রিড ধানের ফলন ৯ থেকে ১০ টন। এটা ওই অঞ্চলে সাধারণ ধানের ফলনের প্রায় ৩ গুণ।

 

তখন থেকে তিনি পুরোপুরিভাবে চীনের হাইব্রিড ধানের প্রযুক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করেন। তিনি কেবল মাদাগাস্কারে কর্মরত চীনা কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রযুক্তিগত বিষয় পরামর্শ নেন তা নয়, বরং চীনে এসে প্রশিক্ষণ ও মতবিনিময়েও অংশ নেন।

 

২০১৭ সালে চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাংশায়ে অনুষ্ঠিত হাইব্রিড ধান-বিষয়ক সেমিনারে প্রথমবারের মতো ইউয়ান লংপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন র‌্যাম্বো আসালাম। অধ্যাপক ইউয়ান তাঁর বক্তব্যে অংশগ্রহণকারীদেরকে উত্সাহ দেন।

 

২০১৮ সালে র‌্যাম্বো আসালাম আবার হুনানে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে আসেন। সে অনুষ্ঠানে তিনি আবার অধ্যাপক ইউয়ানের সাক্ষাৎ পান। অধ্যাপকের সঙ্গে ছবি তোলার সময় তিনি বলেন, মাদাগাস্কার একটি সুন্দর দেশ। ২০০৭ সাল থেকে তাঁরা সেখানে হাইব্রিড ধান নিয়ে গবেষণা করছেন।

 

র‌্যাম্বো আসালাম তখন খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি নিজেকে নিজে বলেন, “ইউয়ান লংপিংয়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাওয়ার মানে সারা বিশ্বে হাইব্রিড ধান জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টায় আমার নিজের একটি জায়গা আছে।”

 

দেশে ফিরে যাবার পর র‌্যাম্বো আসালাম চীন থেকে অর্জিত জ্ঞান ও কৌশলগত সামর্থ্য স্থানীয় ধান চাষীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন। তাদের হাইব্রিড ধানের ফলন বেশ ভালো হয়। যদিও কৃষকেরা খুব কম রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন, তারপরও তাদের হাইব্রিড ধানের ফলন স্থানীয় ধানের ফলনের চেয়ে দু’গুণ বেশি হয়।

 

র‌্যাম্বো আসালামের মতে, অধ্যাপক ইউয়ানসহ চীনা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে হাইব্রিড ধানের প্রযুক্তি জানা তাঁর ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

 

হাইব্রিড ধান র‌্যাম্বো আসালামের মধ্যে বিশাল আস্থা তৈরি করে। ফলে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে হাইব্রিড ধানের ‘পাঁচশালা কৌশল’ উত্থাপনের সুযোগ ও উত্সাহ পান। এটা তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে নিজেদের স্বপ্ন জয়ের চেষ্টা চালাতে উত্সাহ দেয়। অধ্যাপক ইউয়ান বিশ্বের জন্য অনেক ধন রেখে গেছেন; শুধু চীনা মানুষদের জন্য নয়, বরং সবার জন্য এবং সকল ‘ইচ্ছা থাকলে, উপায় হয়’ প্রবাদে বিশ্বাসীদের জন্য। (প্রেমা/রহমান)