বিজ্ঞানবিশ্ব ২৮তম পর্ব
2023-07-24 20:34:15

 

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

২৮তম পর্বে যা থাকছে: 

* বাংলাদেশে ২৫ বছরের গৌরবময় পথচলা হুয়াওয়ের

* বিশ্বে প্রথমবারের মতো মিথালক্সচালিত রকেট উৎক্ষেপণ করেছে চীন 



বাংলাদেশে ২৫ বছরের গৌরবময় পথচলা হুয়াওয়ের


বাংলাদেশে এক এক করে ২৫টি বছর গৌরবের সাথে কাটিয়ে দিলো চীনা বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। স্বল্পমূল্যে আকর্ষণীয় ফিচারের মোবাইলের জন্য সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হুয়াওয়ে ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন। 

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়ে গেলো হুয়াওয়ে বাংলাদেশের ২৫ বছর পূর্তি। এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন হুয়াওয়ে বাংলাদেশের সিইও ও হুয়াওয়ে সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্যান জুনফেং। প্রতিষ্ঠানটির স্মরণীয় এই মুহূর্ত উদযাপন করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের   পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, এবং টেলিকম অপারেটরগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য খাতের  স্টেকহোল্ডার ও সহযোগীগণ। 

অনুষ্ঠানে প্যান জুনফেং বলেন, বহু বছর আগে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে যাত্রা শুরু করে হুয়াওয়ে। 

তিনি বলেন, “উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে বিকাশের পথে আমরা সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিলাম। কর্মসংস্থান তৈরি, লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা ও আইসিটি ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেমের উন্নয়ন ছাড়াও আমরা গত ২৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছি। সামনের দিনগুলোতেও এই ধারা অব্যহত থাকবে। আমাদের ওপর অটুট আস্থা রাখায় বাংলাদেশ এবং এই দেশের মানুষের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। অবিশ্বাস্য এই যাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়ন এবং ডিজিটাল রূপান্তরে অবদান রাখতে নিরলস কাজ করে যাবো।” 

চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বিগত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে সাথী হয়েছে হয়ে পাশে থেকেছে হুয়াওয়ে।  

তিনি বলেন, “বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবছর দশম বছরে পা দিয়েছে। উভয় পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় চীন ও বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করেছে। চীন বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু এবং রূপকল্প ২০৪১-এর অংশ হিসেবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর চূড়া ন্ত রূপ চীন ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়। চীনও এতে অংশ নিতে ইচ্ছুক।”

অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংযুক্তি। সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অঞ্চল ফোরজি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে যে রূপান্তর হয়েছে এর পেছনে হুয়াওয়ের অবদান নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। 

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ফাইভজি চালু করেছে হুয়াওয়ের সহযোগিতায়। তিনি এটা বিশ্বাস করেন যে, আগামীতে বাংলাদেশে স্মার্ট রূপান্তরের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।  

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান হুয়াওয়ের সাফল্য কামনা করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার সকল কার্যক্রমের জন্য ঢাকাকে সদর দপ্তর হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য হুয়াওয়েকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, টেলিকম খাতের জন্য টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি প্রযুক্তি সহজলভ্য করতে ও ফাইভজি প্রযুক্তির অধিগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হুয়াওয়ে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ যখন মাত্র ফোরজি যুগে প্রবেশ করেছে, তখন প্রতিষ্ঠানটি ফাইভজি ট্রায়াল সম্পন্ন করে।   

‘ইন বাংলাদেশ, ফর বাংলাদেশ’ এই মূলমন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে হুয়াওয়ে ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ডিজিটাল রূপান্তরে যথাসম্ভব অবদান রেখে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত ২৫ বছর ধরে আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ খাতে বিভিন্ন সেবা ও উদ্ভাবনী সমাধান, আইসিটি দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ইকোসিস্টেম বিকাশ এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। 


|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান


বিশ্বে প্রথমবারের মতো মিথালক্সচালিত রকেট উৎক্ষেপণ করেছে চীন


সম্প্রতি চীনের চিউকুয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে মহাকাশের উদ্দেশ্যে ছুটে যায় ক্যারিয়ার রকেট চুছিয়ে-টু। বেইজিং সময় সকাল ৯টায় সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যখন মহাকাশের পরিকল্পিত কক্ষপথে প্রবেশ করে এই রকেটটি, তখন রেকর্ডের খাতায় লেখা হয়ে গেছে এক দুর্দান্ত অর্জন।  

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে, কী সেই অর্জন? চীনের উদ্ভাবিত জেড-কিউ-টু ওয়াই-টু মডলের এই রকেটটি বিশ্বে প্রথম মিথালক্সচালিত রকেট। মিথালক্স এমন একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি জ্বালানী যাতে ব্যবহার করা হয়েছে তরল অক্সিজেন ও তরল মিথেন। 

চুছিয়ে রকেট মিশনের উপ-প্রধান ডিজাইনার ও কমান্ডার তাই ছেং জানান, উৎক্ষেপণের আগে মোট ২৮শ’ সেকেন্ড সময় ধরে মোট ৭বার এর ইঞ্জিন পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি রকেটটি উৎক্ষেপণ ও কক্ষপথে প্রবেশের সময় এর নিরাপত্তা ও নির্ভরশীলতাও পরীক্ষা করা হয়। অন্যদিকে আরও কম জ্বালানী ব্যবহার করে,  কম খরচে কীভাবে আরও উন্নত ফলাফল পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করা হবে। এই জ্বালানী বারবার ব্যবহারযোগ্য রকেটের জন্য খুবই উপযোগী বলে মনে করেন তিনি।  

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে প্রয়োগের জন্য তরল অক্সিজেন ও মিথেন ব্যবহারের সুবিধা অনেক। খুব কম খরচের এই জ্বালানীবাহী ক্যারিয়ার রকেট বারবার ব্যবহার করা যাবে। চীনের মহাকাশ শিল্পে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।“ 

উৎক্ষেপণ করা রকেটটি এই সিরিজের দ্বিতীয় রকেট এবং এটি বারবার ব্যবহার উপযোগী। রকেটটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও চীনের বেসরকারকারি সংস্থা ল্যান্ডস্পেস জানিয়েছে, মিথালক্স এমন একটি জ্বালানী যা বারবার ব্যবহার করা যায়, শক্তিশালী ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।  

এই ক্যারিয়ার রকেটটির ব্যাস ৩.৩৫ মিটার, উচ্চতায় ৪৯ দশমিক ৫ মিটার এবং সর্বোচ্চ ২১৯ টন ওজন বহন করতে পারে। এই ক্যারিয়ার রকেট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে উন্নত ও অত্যাধুনিক জ্বালানী প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করলো চীন। এর  আগে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে মার্কিন সংস্থা স্পেস এক্স ও ব্লু অরিজিন মিথালক্স জ্বালানী ব্যবহার করে। 

গেল ডিসেম্বরে প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হওয়ার পর এবার এটি সফলভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করলো। সংস্থাটি বলছে, এবার রকেটটির উন্নয়নে আরও গবেষণা করবে তারা। 

|| প্রতিবেদন: সাজিদ রাজু


অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla। 


পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন


অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল


স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান


সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী