চীন-নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ে প্রাণশক্তি জাগিয়েছে কোট ডি'আইভরে
2023-07-24 14:55:02

“চীনের গতি আশ্চর্যজনক।” চীনা প্রতিষ্ঠান-নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ে কোট ডি'আইভরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করেছে। “চীনা গতি অসাধারণ। শুধু প্রকল্পের অগ্রগতি দ্রুত তা নয়, বরং এটা আমাদের জীবন আরও সুন্দর করেছে। এখানে কাজ করতে পেরে আমি খুবই গর্বিত।” কোট ডি’আইভরের তিয়েবিসু-বুয়াকে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে (Tiébissou- Bouaké Expressway Project) কাজ করা স্থানীয় গাড়িচালক সোরো এমনই বলছিলেন সিনহুয়া বার্তা সংস্থার সাংবাদিককে।

 

দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বুয়াকে থেকে এই সুবিশাল ও মসৃণ এক্সপ্রেসওয়ে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়ে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলীয় তিয়েবিসু শহরের দিকে চলে গেছে। মাঝেমাঝে গাড়ি ও মোটরসাইকেল ছুটে যায় এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে। জনগণ নতুন সড়কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

 

স্থানীয় অধিবাসী সেড্রিক সাংবাদিককে জানান, এখন সড়কটি আরও মসৃণ হয়েছে, কোথাও কোনও বাধা বা ফাঁপা নেই। রাস্তার অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। পরিবহন নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়েছে।

 

তিয়েবিসু-বুয়াকে এক্সপ্রেসওয়ে’র দৈর্ঘ্য ৯৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার। সম্প্রতি কাঠামোগত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি আংশিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকল্পটি কোট ডি’আইভরের এক্সপ্রেসওয়ের প্রধান লাইনের এক অংশ। চালু হবার পর এই এক্সপ্রেসওয়ে দেশটির রাজধানী আবিদজান, রাজনৈতিক রাজধানী ইয়ামাউসসুক্রো এবং বুয়াকেসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে সড়ক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করবে এবং আঞ্চলিক আন্তঃযোগাযোগ এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

 

বুয়াকে শহরের মেযর নিকোলাস জিবো বলেন, “আগে আবিদজান থেকে বুয়াকে যেতে চার-পাঁচ ঘন্টা লাগতো। এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবার পর ভোর ৫টায় রওয়ানা হলে ৮টার দিকে অফিসে পৌঁছে যাই।… এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে আমি চীনা গতি অনুভব করেছি।”

তিয়েবিসু-বুয়াকে এক্সপ্রেসওয়ে আফ্রিকা-চীন সহযোগিতার ফসল। চলতি বছর কোট ডি’আইভর-চীন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪০তম বার্ষিকী। মেয়র জিবো আশা করেন, এ ধরনের বাস্তব সহযোগিতা স্থায়ী হবে এবং এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে দেশটিতে আরও বেশি প্রকল্প নির্মিত হবে। কারণ প্রকল্পের গুণগতমানের প্রতি তিনি আস্থাবান।

 

প্রকল্পের পরিমাপক ড্যানিয়েল জানান, শুরুর দিকে চীনা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। পরে তিনি আবিষ্কার করেন, চীনা কর্মীরা ফরাসি ভাষা পাঠ করেছেন। দৈনন্দিন কথাবার্তায় কিছু স্থানীয় ভাষার শব্দও ব্যবহার করতে পারেন তারা। যোগাযোগে তাই অসুবিধা হয়নি। প্রকল্পের চীনা বন্ধুরা ইতিবাচকভাবে স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হয়ে অগ্রণী প্রযুক্তি নিয়ে এসেছেন।

 

আগে প্রকল্পের আশপাশের গ্রামে কেবল একটি ছোট পথ ছিল। জেলা শহরে যেতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দশ-বার কিলোমিটার পথ হাঁটতে হতো। চীনা নির্মাণ কোম্পানি পথ সম্প্রসারণের পাশাপাশি ক্লিনিক গড়ে তুলেছে এবং স্কুলে অনুদান হিসাবে টেবিল-চেয়ার ও বই দিয়েছে।

প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শু ইলি জানান, তিয়েবিসু-বুয়াকে এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পদল ভয়ানক প্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রযুক্তিগত মানের পার্থক্য, সরঞ্জামের অভাব এবং মহামারীর প্রভাবসহ বিভিন্ন নেতিবাচক উপাদান মোকাবিলা করে, সময়মতো প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে। স্থানীয়দের জন্য ২ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

 

অফিস করতে প্রতিদিন ড্যানিয়েল এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াত করেন। তিনি নিজের নির্মিত পথ দিয়ে যেতে পেরে গর্ববোধ করেন। গ্রামের অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে এই প্রকল্পে। এ প্রকল্প হওয়ার পর মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। নতুন ঘরবাড়িও আরও বেশি হচ্ছে। মোটরগাড়ির গর্জন এক্সপ্রেসওয়ের পাশের গ্রামগুলোতে যে প্রাণশক্তি জাগিয়ে তুলেছে, তা অনুভব করতে পারেন ড্যানিয়েল। (প্রেমা/রহমান)