কুই চৌ প্রদেশের সবুজ পরিবর্তন
2023-07-21 10:57:22

সম্প্রতি ২০২৩ সালের ‘প্রাকৃতিক সভ্যতা আন্তর্জাতিক ফোরাম’ চীনের কুই ইয়াং শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কুই ইয়াং চীনের কুই চৌ প্রদেশের রাজধানী। শহরগুলো সবসময় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয় এবং শহরটি চীনের খুব জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানও বটে। আজ আপনাদের কুই ইয়াং শহরে নিয়ে যাবো, দেখি সেখানকার প্রকৃতি অবস্থা কেমন।

কুই চৌ প্রদেশ হল চীনের জাতীয় পর্যায়ের প্রথম দফার প্রাকৃতিক সভ্যতা পরীক্ষামূলক এলাকার অন্যতম। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রদেশটি ‘সবুজ পরিবেশ রক্ষার’ ব্যবস্থা দিন দিন সুসংহত হচ্ছে, ‘সবুজ পরিবেশকে আরো সবুজ করার’ ব্যবস্থা আরো জোরদার হচ্ছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ সমন্বিতভাবে উন্নতি হচ্ছে।

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছিলেন, সবুজ উন্নয়ন জোরদার করা এবং প্রাকৃতিক সভ্যতা স্থাপন করার মূল বিষয় হল নিয়ম স্থাপন করা, সবচেয়ে কঠোর নিয়ম এবং সবচেয়ে কঠোর আইন দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা ব্যবস্থা স্থাপন করতে হয়, প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ তত্ত্বাবধান জোরদার করতে হয়, প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হয়, পরিবেশ সংরক্ষণে জনগণের অংশগ্রহণ ব্যবস্থা সুসংহত করতে হয়।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের অনুপ্রেরণায়, কুই চৌ প্রদেশ দেশের জাতীয় পর্যায়ের প্রাকৃতিক সভ্যতা এলাকার নির্মাণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। যেমন, দেশের প্রধান প্রাকৃতিক এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া জেলার জিডিপি যাচাই না-করা, প্রাকৃতিক পরিবেশের ডাটা মঞ্চ স্থাপন করা ইত্যাদি। এসব ব্যবস্থা প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা পালন করে।

 

২০১৪ সালে কুই চৌ প্রদেশ দশটি জেলার জিডিপির পরীক্ষা বাতিল করেছে। বিশ্বের প্রাকৃতিক উত্তরাধিকার ফান চিং শান পাহাড়ের অবস্থিত চিয়াং খৌ জেলা এর অন্যতম। ২০২০ সালে কুই চৌ প্রদেশ আবারও সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে যে, চিয়াং খৌসহ পাঁচটি জেলায় প্রাকৃতিক পণ্যের মূল্য বাস্তবায়ন ব্যবস্থা চালু করে, প্রাকৃতিক ব্যবস্থার অবস্থাকে উচ্চ মানের উন্নয়নের যাচাই ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। চিয়াং খৌ জেলার মতো সুন্দর জেলার প্রাকৃতিক ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ, উন্নয়নের পূর্বশর্ত হল প্রকৃতিকে রক্ষা করা। তাই প্রকৃতি রক্ষাই আরো গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে চিয়াং খৌ জেলার বনের হার ৭৭ শতাংশ হয়। যা কুই চৌ প্রদেশের দশটি প্রাকৃতিক জেলার উচ্চ মানের উন্নয়ন যাচাইয়ে ‘শ্রেষ্ঠ’ মান লাভ করে।

সেই সঙ্গে কুই চৌ প্রদেশ সংস্কার বাড়ানো, পরীক্ষা আরো কঠোর করা, কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ‘সবুজ রক্ষার’ ব্যবস্থা জোরদার করেছে। পুরো প্রদেশের ৪৬৯৬টি নদীর জন্য নদীর প্রধানের পদ স্থাপন করে, প্রদেশে বন খামার রক্ষার জন্য ৪৬৯১৩জন বন প্রধান নিয়োগ করা হয়েছে।

২০০৭ সালে কুই ইয়াং প্রদেশের ছিং চেন শহরে, চীনের প্রথম প্রকৃতি সংরক্ষণ আদালত চালু হয়। নদনদীর পানির গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য আদালতটি দূষণ নির্গমনকারী রাসায়নিক কারখানাকে আইনানুসারে শাস্তি দিয়েছে।

 

এখন কুই চৌ প্রদেশে প্রকৃতি সংরক্ষণ আদালতের সংখ্যা প্রায় ৪০টি। বিভিন্ন স্তরের আদালত প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী, সবুজ পাহাড় ও পরিচ্ছন্ন নদী, ঐতিহ্যবাহী গ্রাম আইনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

এসব ব্যবস্থা ছাড়া কুই চৌ প্রদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ কাজ শুরু করেছে। এখন কুই চৌ প্রদেশের বনের হার ৬২.৮১ শতাংশ। গত দশ বছরে মরুকরণের হার ৪৩ শতাংশ কমেছে। ২০১৫ সাল থেকে কুই চৌ প্রদেশের বিভিন্ন স্তরের নেতা ও জনগণ টানা ৯ বছর ধরে বসন্ত উত্সবের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে বৃক্ষরোপণ করে। সবাই একটি রঙিন কুই চৌ নির্মাণে অংশ নিচ্ছেন।

 

কুই চৌ প্রদেশ অব্যাহতভাবে ‘কার্বন নির্গমন কমানোর’ পদ্ধতি অনুসন্ধান করে, যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে প্রদেশকে আরো সবুজ করা যায়। যেমন, স্থানীয় চিয়াং খৌ শহরে, ২০২২ সালে দু’টি বাস কোম্পানি বিদ্যুত্চালিত গাড়ি ব্যবহার শুরু করে, প্রতিবছর ৬৫০ টনেরও বেশি তেল সাশ্রয় করা যায়, কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমন কমেছে ৩০৮০ টন। প্রদেশটি যে সংস্থার প্রাকৃতিক অবদান বেশি, পুরস্কার ও সুবিধা দেয়। চিয়াং খৌ শহরের বাস কোম্পানি এমন প্রাকৃতিক অবদান দিয়ে ৬০ লাখ ইউয়ানের ঋণ পেতে পারে, ঋণের সুদ ৮.২ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়ায় ৫.৫ শতাংশে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিয়াং খৌ জেলা প্রাকৃতিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে এক ধরনের খাবার ‘ম্যাচা’ উত্পাদনের সুপার কারখানা স্থাপন করেছে। এখানে ম্যাচা উত্পাদনের লাইন ১৪টি, প্রতি বছর ৪০০০টন ম্যাচা উত্পাদন করা যায়। ১ লাখেরও বেশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করা যায়।

কুই চৌ প্রদেশ এভাবে বিভিন্ন কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে প্রকৃতি রক্ষায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে, এভাবে কুই চৌ প্রদেশ দেশ বিদেশের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে, সমৃদ্ধ পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে প্রদেশের জনগণও লাভবান হয়েছে।

(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)