চীনা শ্রমিকদের নিয়ে ইসরায়েলের প্রথম চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার
2023-07-21 16:29:15

সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রথম চীনা শ্রমিক-থিমভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘শ্যাডো অব দ্য মাউন্টেন’-এর প্রিমিয়ার তেল আবিবে অনুষ্ঠিত হলো। এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রটিতে একজন চীনা নির্মাণ শ্রমিকের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরায়েলে কর্মরত চীনা শ্রমিকদের জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়। উষ্ণতার সঙ্গে স্থানীয় চীনা ও ইসরায়েলিরা চলচ্চিত্রটিকে গ্রহণ করেছে।

৩০ জুন ইসরায়েলে প্রবাসী চীনা, চীনা বংশোদ্ভূত ইসরায়েলি, অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থী এবং ইসরায়েলি দর্শকরা আনন্দের সঙ্গে ইসরায়েলি পরিচালক maya kessel মায়া কেসেল-পরিচালিত ‘শ্যাডো অব দ্য মাউন্টেন’ সিনেমাটি দেখতে তেল আবিবের সিনেমা হলে যান। ইসরায়েলের বড় পর্দায় এই প্রথমবারের মতো ওই দেশে কর্মরত চীনা শ্রমিকদের গল্প দেখানো হয়।

মুভিতে তুলে ধরা নিজের পরিবারের প্রতি বিদেশে কর্মরত চীনা শ্রমিকের আবেগ ও ভালোবাসা দর্শকদের মনে একই আবেদন সৃষ্টি করে।

অনেক দর্শক চলচ্চিত্রটিতে তুলে ধরা গৃহকাতরতায় গভীরভাবে মুগ্ধ হন। সাতষট্টি বছর বয়সী meira মেইরা ছবিটিতে প্রতিভাত আবেগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান।

তিনি বলেন,

“আমি এই চলচ্চিত্রটি খুব পছন্দ করেছি। এটি খুব আকর্ষণীয় ও চিত্তাকর্ষক। খুব ভাল শ্যুট করা হয়েছে। একজন শ্রমিক হিসেবে বিদেশে কাজ করা সহজ নয়। তাদের জন্য এটি একটি কঠিন সময়। মুভিটির প্রধান চরিত্রে একজন নারী আছেন, যার স্মৃতি খুব চিত্তাকর্ষক এবং এটি আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। প্রত্যেকেরই অন্যের জীবনের পরিস্থিতির বেদনা অনুভব করা উচিত এবং আমি মনে করি, আমাদের সহানুভূতি থাকা উচিত এবং যতটা সম্ভব অন্যকে সাহায্য করার চেষ্টা করা উচিত।”

ফাং ছিং নামে একজন চীনা বংশোদ্ভুত ইসরায়েলি সেখানকার নির্মাণ সাইটে স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করেছিলেন। চলচ্চিত্রটি দেখার পর তিনি বেশ আবেগতাড়িত হন। তিনি বলেন, এ মুভি চীনা শ্রমিকদের পিছনের অনেক গল্প তুলে ধরেছে। তিনি বলেন,

“ইসরায়েলিরা এখানে যে চীনা শ্রমিকদের দেখে তাদের অধিকাংশই নির্মাণ শ্রমিক। সাধারণভাবে বলতে গেলে এসব নির্মাণ শ্রমিক তুলনামূলকভাবে লাজুক এবং খুব বেশি কথা বলেন না। তবে এসব চীনা শ্রমিক ইসরায়েলের নির্মাণকে সহায়তা করেন। এসব শ্রমিকের পটভূমি বোঝা প্রয়োজন ইসরায়েলিদের। এবং এদের মাধ্যমে তারা চীনা সংস্কৃতির একটি অংশও বুঝতে পারবে।” 

চলচ্চিত্রের পরিচালক মায়া বলেন, তিনি তেল আবিবে থাকেন এবং প্রায়ই নির্মাণ সাইটে চীনা নির্মাণ শ্রমিকদের ব্যস্ততা দেখতে পান। তাই তিনি সত্যিই এমন একটি চলচ্চিত্র তৈরি করতে চান, যাতে চীনা শ্রমিকদের জীবন ও আবেগ প্রতিফলিত হবে।

তিনি বলেন,

“আমি তেল আবিবে থাকি এবং প্রতিদিন যে চীনা কর্মীদের সঙ্গে আমার দেখা হয়, তাদের মধ্যে আমি কিছু দেখি এবং আমার চারপাশের মানুষ এবং তাদের জীবন সম্পর্কে জানার বিষয়টি আমাকে টানে, তারা আমাকে তাদের জীবনে নিয়ে এসেছে। সিনেমাটি বেশিরভাগ অনুভূতিতে ভরা, গৃহকাতরতা আমাদের সবার আছে, এবং চীনা পুরুষদের পক্ষে তা প্রকাশ করা সহজ নয়।”

চলচ্চিত্রটির প্রধান চরিত্র অর্থাৎ চীনা নির্মাণ শ্রমিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন চাং মিং চে নামে তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একজন চীনা শিক্ষার্থী। তিনি জীববিজ্ঞানে পিএইচডি করেছেন এবং এটিই তার প্রথম অভিনয়। শুটিংয়ের আগে তিনি পরিচালক মায়ার সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগ করেন এবং চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাদের বোঝাপড়া বিনিময় করেন, ফলে শুটিংটি সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়।

তিনি বলেন,

“যখন আমি এই চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপিটি দেখি, তখন আমি সত্যিই এর বিষয়বস্তুকে পছন্দ করি। কারণ এটি ছোট কর্মে নিযুক্ত মানুষদের লক্ষ্য করে নির্মিত হচ্ছে। পরিচালক যা প্রকাশ করতে চান, তা হলো এক ধরনের গৃহকাতরতা, যাতে আমরা সকলেই ভুগি, বিশেষ করে বিদেশি অভিবাসী শ্রমিকেরা। বিদেশে থাকার সময় কী কী বিষয় আপনাদের গৃহকাতরাতকে উস্কে দেয়? আমি মনে করি, গৃহকাতরতা সকল মানুষের একটি অভিন্ন বিষয়।”

হুয়া চি নামে একজন চীনা বংশোদ্ভুত ইসরায়েলি চলচ্চিত্রের একটি নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি টানা ১৪ বছর ধরে ইসরায়েলে বাস করছেন। তিনি দেশে রেখে যাওয়া আত্মীয়স্বজনকে খুব মিস করেন। চীনা শ্রমিকদের জীবন প্রতিফলিত হয়েছে - প্রথমবারের মতো এমন কোনও চলচ্চিত্রের শুটিং অংশগ্রহণ নেন তিনি এবং বিষয়টিতে তিনি বেশ উত্তেজিত বোধ করেন। তিনি বলেন,

“অবশেষে ইসরায়েলে কিছু ইসরায়েলি শিল্পী আমাদের মতো একটি গোষ্ঠীর দিকে মনোযোগ দেন। তারা আমাদের চীনাদের দিকে দৃষ্টি রাখেন। আমরা ইসরায়েলে নিজেদের কণ্ঠ প্রকাশ করতে পারি। চীনা শ্রমিকেরা ইসরায়েলে অনেক অবদান রেখেছেন। তারা ইসরায়েলি সমাজে যে পরিবর্তন এনে দিয়েছেন, তা সত্যিই স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও যাতায়াতে অনেক সুবিধা বয়ে এনেছে।”

লিলি/রহমান