‘চলতি বাণিজ্য’-২৭
2023-07-21 14:38:16

চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান

‘চলতি বাণিজ্য’

 

চলতি বাণিজ্যের ২৭তম পর্বে থাকছে:

১. সিনচিয়াং স্থলবন্দর: মধ্যএশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে চীনা সংযোগের কেন্দ্রস্থল 

২. মিশরে বাস তৈরির যৌথ প্ল্যান্ট নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি কিং লং

৩. চীনে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে ইতালীয় ওষুধ কোম্পানি

সিনচিয়াং স্থলবন্দর: মধ্যএশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে চীনা সংযোগের কেন্দ্রস্থল 

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের প্রস্তাব করা বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের কেন্দ্রভূমি হলো সিনচিয়াংয়ের রাজধানী উরুমচি। এখানকার স্থলবন্দরকে ঘিরে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও রাশিয়া হয়ে বিশ্বের প্রায় ২ ডজন দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে চীন। আর এই বন্দর দিয়েই বছরে আমদানি-রফতানি হচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের পণ্য। চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং ঘুরে এসে বিস্তারিত দেখুন আমার তৈরি করা প্রতিবেদনে।

ইরান, আজারবাইজান বা কাজাখস্তানের পাহাড়ি পথ বেয়ে কিংবা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলাশয় কাস্পিয়ান সাগর পারে হয়ে চীনের সঙ্গে যোগাযোগকে এক সময় ভাবা হতো চাঁদে মানুষ পাঠানোর চেয়েও কঠিন। তবে এই কঠিন কাজই এখন হরহামেশা হচ্ছে চীনের ইউগুর স্বায়ত্তশাসিত এলাকা সিনচিয়াংয়ে।

এখানকার বন্দরগুলো এখন রাত-দিন ২৪ঘণ্টা ব্যস্ত। সারি সারি ট্রাক আসছে, যাচ্ছে। মালামাল বোঝাই করে আমদানি ও রফতানি পণ্য নিয়ে ছুটে যাচ্ছে দূর-দূরান্তের গন্তব্যে। আবার রেলপথে মালবাহী ট্রেনের আসা যাওয়া কেবল যোগাযোগ সহজ করেনি, কমিয়েছে খরচ, বাড়িয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

সিনচিয়াংয়ের রাজধানী শহর উরুমচির নর্থ চিয়াংহু রোড ধরে কিছুদূর এগোলেই চোখে পড়বে এক বিশাল স্থাপনা। উরুমচি ইন্টারন্যাশনাল ল্যান্ডপোর্ট এরিয়া। এটাই মূলত সিনচিয়াং হয়ে চীনের সঙ্গে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের প্রধান কেন্দ্র।

২০১৩ সালে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এই বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ প্রস্তাব করার পরই ঘটতে শুরু করে এই পরিবর্তন। ৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ঘিরে তৈরি হয় এই পরিকল্পিত বন্দর এলাকা। আর সিনচিয়াং হয়ে ওঠে চীনা সিল্করোড়ের এক কৌশলগত এলাকা ।

এক্সিবিশন হলে স্থাপন করা নানারকম ম্যাপ, রেখাচিত্র ও ছবিতে দেখানো হয় সিনচিয়াং থেকে রাশিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের দিকে চলে যাওয়া ৩টি প্রধানে রুটের সিল্করোড।

সিল্ক রুটের ওয়েস্টার্ন রোড় সিনচিয়াংয়ের আলাশাঙ্কোউ বন্দর দিয়ে কাযাখস্তান হয়ে রাশিয়া ও বেলারুশ হয়ে পোল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দ্বিতীয়টি রুটটি আফগানিস্তান-বুলগেরিয়া হয়ে পৌঁছে গেছে ইতালি পর্যন্ত। অন্যদিকে তৃতীয় রুটটি আফগানিস্তান-উজবেকিস্তান হয়ে ইরান পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করেছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, উরুমচির স্থল বন্দর মূলত একটি কেন্দ্র ও ৫টি বিশেষ অঞ্চল নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে বিশেষভাবে আছে চায়না-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেস অ্যাসেম্বলি সেন্টার, ম্যানুফ্যাকচারিং এরিয়া, টেক্সাইল অ্যান্ড গার্মেন্ট ট্রেড এরিয়া, সার্ভিস এরিয়া এবং লজিস্টিক্স ও বন্ডেড এরিয়া। 

পরিসংখ্যান বলছে, গেল ২০২২ সালে এসব রুটে চলাচল করেছে ১৪৪০টি ট্রেন। এই রুটগুলো হয়ে মহাসড়ক ও রেলপথে নানা রকমের পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। প্রধান আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে পেলেট, আয়রন, অ্যালুমিনিয়াম ও কপার পাউডারসহ নানা রকম খনিজ পণ্য, রান্নার কয়লা, কাঠ, পাল্প, খাদ্যশষ্য ও তেল। 

অন্যদিকে চীন থেকে এসব দেশ ও অঞ্চলে রফতানি হয় স্টিল ও রাসায়নিকসহ নানা ধরনের শিল্পের কাঁচামাল, টমেটো পেস্ট ও শুকনো ফল। এর পাশাপাশি চীনের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক, বাড়ি তৈরির উপকরণ, ইলেক্ট্রনিক পণ্য ও অটো পার্টস।

সিনচিয়াংজুড়ে চীন সরকারে নানা উন্নয়ন কার্যক্রম ও সুবিধা বিবেচনা করে এখানে বিনিয়োগও আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। ফলে চীন সীমান্তের প্রান্তিক এলাকা হলেও এই স্থলবন্দরকে ঘিরে বৈশ্বিক সংযোগের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে সিনচিয়াং।

 

ভিনদেশে চীন:

মিশরে বাস তৈরির যৌথ প্ল্যান্ট নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি কিং লং

চীন আন্তর্জাতিক বেতার: নিজ দেশের বাইরে গিয়ে সম্প্রতি মিশরে বাস তৈরির যৌথ প্ল্যান্ট নির্মাণ করেছে চীনা কোম্পানি কিং লং। সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করছেন, আন্তর্জাতিক মানের বাস তৈরি করা সম্ভব হবে এখানে। আফ্রিকা, ইউরোপসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর বাজার ধরার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে কোম্পানিটি।

আফ্রিকার দেশ মিশরে যৌথভাবে বাস তৈরির যৌথ প্রকল্প হাতে নিয়েছে চীন ও সৌদির দুটি কোম্পানি। এতে প্রধান অংশীদার হিসেবে কাজ করছে চীনের বাস প্রস্তুতকারক কোম্পানি কিং লং।  

সম্প্রতি মিশরের নিউ সুয়েজ সিটিতে ১ লাখ ৬৪ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে ফ্যাক্টরিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্ল্যান্ট থেকে শিগগিরই আন্তর্জাতিক মানের বাস তৈরি করা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর মিশরের স্থানীয় অটো মোবাইল ইন্ড্রাস্টি চাঙ্গা রাখতে সেখান থেকে বাস তৈরির প্রায় ৬০ শতাংশ যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়।

এক অনুষ্ঠানে সৌদি কোম্পানি ‘এটিএম এমআইএসআর’ এর চেয়ারম্যান হামেদ আল মুতাবাগানি বলেন, কারখানাটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যেন বছরে ৫০০টি বাস তৈরি করা যায়। মিশনের এই প্ল্যান্টে এটিএম কোম্পানি প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেছে। 

সহযোগিতা চুক্তি অনুসারে, প্ল্যান্টটি সৌদি ভিত্তিক বাস ডিলার ন্যাশনাল ট্রেড কোম্পানিকে ৫১টি বাস সরবরাহ করবে।

হামেদ আল মুতাবাগানি জানান, পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর বাজার ধরার লক্ষ্য নিয়ে ভালো মানের বাস তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া আফ্রিকা ও ইউরোপের মার্কেটগুলোতে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে ইতালীয় ওষুধ কোম্পানি

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীন সরকারের নেওয়া উন্মুক্তকরণ নীতি ও নানাবিধ সুবিধা ঘোষণার ফলে চীনের বাজারে বিনিয়োগ করছে ইতালির কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করছে এখানে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ব্রাক্কো সিনে ফার্মাসিউটিক্যালস। কোম্পানিটি বলছে, চীনে উৎপন্ন কাঁচামাল ব্যবহার করেই চীনের বাজারে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চায় তারা। শুনুন আমার তৈরি করা আরও একটি প্রতিবেদন।

চীন সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের ফলে ক্রমেই বাড়ছে উন্মুক্তকরণ। উন্নয়ন হচ্ছে ব্যবসার পরিবেশের, চীনের বাজারে বিদেশি কোম্পানির ফলে আরও বেশি বিদেশি কোম্পানি আসছে চীনের বাজার ধরতে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশ ইতালির বেশ কিছু কোম্পানি মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ নিয় আসছে চীনে।

ওষুধ প্রস্তুতকারী এমনই একটি কোম্পানি ব্রাক্কো সিনে ফার্মাসিউটিক্যালস। চীনে এসে গঠন করা হয়েছে সাংহাই ব্রাক্কো সিনে ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক ভালতেরো ক্যানেপা জানান, চীনের কাঁচামাল দিয়েই ওষুধ তৈরি করে বাজার ধরতে চান তারা। 

ভালতেরো ক্যানেপা, ব্যবস্থাপক, সাংহাই ব্রাক্কো সিনে ফার্মাসিউটিক্যালস

“আমাদের এমন কিছু পণ্য আছে যা পুরোপুরি ইউরোপে তৈরি হয় এবং সেখান থেকেই আমদানি করতে হয়। সেসব পণ্য আমরা এখানে কেবল নতুন করে প্যাকেট করি। আমরা এই পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটাতে চাই। আমরা বরং এখানকার কাঁচামাল দিয়ে চীনেই কিছু পণ্য উৎপাদন ও স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করতে চাই।“

২০১৬ সালে চীন সরকার ‘হেলদি চায়না ২০৩০’ উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশী ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে চীনে বিনিয়োগে উৎসাহ পায়। এরই ধারাবাহিকতায় চীনের সাংহাইতে নতুন প্রকল্প হাতে নেয় সাংহাই ব্রাক্কো সিনে ফার্মাসিউটিক্যালস।

এশিয়ার দেশ হিসেবে ইতালির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। গেল ২০২২ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।