বিশ্বের ছাদে "তারাভরা সিনেমা হল"
2023-07-21 16:45:26

অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের প্রজেকশনিস্টরা, "পৃথিবীর ছাদ" নামে পরিচিত তিব্বতের পাহাড়-নদী অতিক্রম করে, কখনও গাড়িতে বা কখনও পায়ে হেঁটে, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার ধকল কাটিয়ে, তুষারাবৃত মালভূমিতে স্থানীয়দের সেবা দিয়ে আসছেন। তিব্বতে ৪৭৮টি জেলায় (টাউন) ভ্রাম্যমান ডিজিটাল মুভি প্রজেকশন টিম রয়েছে; চিয়াছা জেলার ফিল্ম প্রজেকশন টিম তাদের একটি।

চিয়াছা জেলার ফিল্ম প্রজেকশন টিমকে প্রতিবছর ৮৮৮টি শো দেখানোর দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু ২০২১ সালে তারা ১৯ হাজার দর্শককে ৯০০টিরও বেশি মুভি দেখিয়েছে। প্রজেকশন টিমের জন্য, সিনেমা প্রদর্শনের সংখ্যা শুধু একটি সংখ্যা নয়, একটি দায়িত্বও বটে।

তিব্বতের শাননান শহরে গ্রীষ্মের শুরুতে, পাহাড়ের চূড়া তুষারে ঢাকা থাকে; তবে তুষারাবৃত শৃঙ্গগুলো থাকে সবুজে ভরপুর। উত্তাল উপত্যকার উভয় পাশে ৫০০টিরও বেশি তাঁবু খাটানো হয়েছে এবং হাজার হাজার গ্রামবাসী এখানে অস্থায়ীভাবে "শিবির স্থাপন" করেছে।

সন্ধ্যা যখন ধীরে ধীরে উপত্যকায় প্রবেশ করে, ৪২ বছর বয়সী সেদান ডলমা এবং তার স্বামী পাশাপাশি একসাথে মুভি পর্দার দিকে অগ্রসর হন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫০০ মিটার উচ্চতায় "তারাভরা সিনেমা হল" ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চালু আছে। চিয়াছা জেলার প্রজেকশন দল গ্রামবাসীদের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করে।

পায়ে চালিত জেনারেটর ও ফিল্ম প্রজেক্টর থেকে পাওয়ার গ্রিড, ডিজিটাল মেমরি কার্ড ও স্টেরিও—সময় বদলেছে, প্রযুক্তিতেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন; কিন্তু যা অপরিবর্তিত রয়েছে তা হল প্রজেকশনিস্টদের চলচ্চিত্র এবং এই ভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা। এখানে, চলচ্চিত্র শুধুমাত্র বিনোদন নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক জীবনধারাও বটে। এটি একটি জানালার মতো, যার মাধ্যমে পৃথিবীর আলো এখানে প্রবেশ করে এবং পর্দার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে।

পর্দার পিছনে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য। পর্দা মৃদু বাতাসে নড়াচড়া করে। রাত ৯টায়, উপত্যকা সম্পূর্ণরূপে গোধূলিতে ডুবে যায় এবং "অপারেশন মেকং" চলচ্চিত্রের তিব্বতি সংস্করণের প্রদর্শনী শুরু হয়। এটিকে একটি "তারাভরা সিনেমা হল" বলা হয়, তবে এটি শহরের সিনেমা হল থেকে আলাদা, এবং এটি গ্রামীণ সাংস্কৃতিক স্টেশনগুলোর স্ক্রিনিং হলগুলোর সাথেও তুলনীয় নয়। তারাভরা আকাশের নিচে মুভি দেখার অনুভূতি নিশ্চয় অন্য রকম।

এটি শানান শহরের চিয়াছা জেলার কর্ডিসেপসের খননস্থান। কৃষক ও পশুপালকরা সাধারণত এপ্রিল মাসে এখানে আসেন এবং জুনের শেষ পর্যন্ত থাকেন। সিনেমা তাদের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করে। কিছু কিছু জায়গায়, মোবাইল ফোনের সিগন্যাল খুব একটা ভালো নয়, এবং মানুষ একসঙ্গে সিনেমা দেখতে পছন্দ করে। প্রজেকশন টিমের নেতা চিয়ান শেন ছবিটি দেখতে আসা লোকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান, যেন পুরনো বন্ধুকে দেখছেন।

সিডান ডলমা যে তাঁবুতে থাকেন সেটি সিনেমার স্ক্রিনিং স্থল থেকে অনেক দূরে, কিন্তু তিনি সময়মতো আসেন, কারণ তিনি সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। অতীতের সাথে তুলনা করে, কৃষিকাজ ও পশুপালন এলাকায় বিনোদনের পদ্ধতি সমৃদ্ধ হয়েছে, তবে তিনি এখনও খোলা আকাশের নিচে চলচ্চিত্র দেখার প্রতি দুর্বল। এই ফর্মটি তাকে তার রঙিন শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়।

পশুপালক নিমার মনে হয়, কর্ডিসেপস সংগ্রহের মৌসুমে ১০ বছর ধরে সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে। ছোটবেলায় তিনি যে গ্রামে থাকতেন তা তুলনামূলকভাবে প্রত্যন্ত ছিল। সিনেমা দেখার জন্য তার বাবা-মা নিমাকে নিয়ে এক ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করতেন। খোলা আকাশের নিচে  চলচ্চিত্র দেখে, তারা বাইরের বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারতেন।

চিয়ান শেন বাশিয়াং-এর কর্ডিসেপস খননস্থলে টানা পাঁচ বছর সিনেমা দেখিয়েছেন। তিনি দর্শকদের হৃদয় পড়তে পারেন। চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ থেকে, যখন কর্ডিসেপস সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়, তিনি এবং তার দলের সদস্যরা ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে ৪টি কর্ডিসেপ সংগ্রহস্থলে অবস্থান করেন। তারা তাঁবু, রান্নার পাত্র এনেছেন এবং গ্রামবাসীদের প্রতিরাতে সিনেমা দেখিয়ে যাচ্ছেন। এবার তারা বিশেষভাবে "উলফ ওয়ারিয়ার-২" এবং "অপারেশন রেড সি"-এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলো যুক্ত করেন।

"যেখানে দর্শক আছে, সেখানেই সিনেমা দেখানো হবে।" যতক্ষণ দর্শক থাকবে, চিয়ান শেন প্রতিদিন রাতে সময়মতো আউটডোর স্ক্রিন সেট-আপ করেন। "আগে, সরঞ্জামগুলো এক ঘন্টা আগে সেট-আপ করা লাগতো, কিন্তু এখন একটি মেশিন বিদ্যুতের সাথে সংযুক্ত হলেই শুরু করা যায়।" ৪০ বছরেরও বেশি কাজের মধ্যে, ফিল্ম প্রজেক্টর ৮.৭৫ মিলিমিটার থেকে পরিবর্তিত হয়েছে ১৬ মিলিমিটার থেকে ৩৫ মিলিমিটারে, এবং অবশেষে ডিজিটাল ফিল্ম প্রজেক্টর এসেছে। তিনি চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের একজন  প্রত্যক্ষদর্শী।

চিয়ান শেন যা শুনতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন তা হল দর্শক-শ্রোতাদের চিত্কার, "আরো একটি দেখাও! আরো একটি দেখাও!" তিনি জেলার ফিল্ম প্রজেকশন টিমকে প্রতিবছর ৮৮৮ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু প্রজেকশন দল প্রতিবছর এই লক্ষ্য ছাড়িয়ে যায়। প্রজেকশন টিমের জন্য, সিনেমা প্রদর্শনের সংখ্যা শুধু একটি সংখ্যা নয়, একটি দায়িত্বও বটে।

আজ, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ধীরে ধীরে মালভূমিতে প্রবেশ করেছে। "তথ্য চ্যানেলগুলো আরও বিস্তৃত হচ্ছে, এবং আমরা এমন কিছু গ্রাম বেছে নেব যেখানে সিনেমা দেখার মতো মানুষের সংখ্যা বেশি।" ফিচার ফিল্ম বা বৈজ্ঞানিক বা শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র যাই হোক না কেন, এখানকার লোকেরা সেগুলো দেখতে পছন্দ করে এবং তিব্বতি থিমসহ ফিচার ফিল্মগুলো হল দর্শকদের সাথে দূরত্ব কমানোর সহজ উপায়। চিয়ান শেন একটি মেমরি কার্ড বের করেন: "এতে যুদ্ধের চলচ্চিত্র, রোমান্স চলচ্চিত্র এবং বিজ্ঞান কল্পকাহিনী সহ ২০টি চলচ্চিত্র সংরক্ষিত আছে। অতীতে এটি অকল্পনীয় ছিল।"

এখন প্রত্যেকেরই সিনেমা দেখার আরও চ্যানেল রয়েছে। বর্তমানে, চিয়াছা জেলার ডিজিটাল থিয়েটারটিতে অনেক উন্নত হার্ডওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, যা বড় শহরগুলোর থিয়েটারগুলোর চেয়ে কম নয়। ২০১০ সাল থেকে, স্ক্রিনিং টিমে লোকের সংখ্যা কমেছে। গত বছর, দুজন সদস্য অবসর নিয়েছেন। তবে, এখনও চার সদস্য রয়েছেন। চিয়ান শেন এবং তার সতীর্থদের যা খুশি করে তা হল প্রজেকশন টিমের নিজস্ব দর্শক আছে: "যতক্ষণ দর্শক থাকবে, সিনেমা ততক্ষণ চলবে।" (ইয়াং/আলিম/ছাই)