ফুল সাজানো শিল্পের মাধ্যমে প্রাণবন্ত পাই বি উপজেলার অর্থনীতি
2023-07-21 19:35:40


চীনের হ্য নান প্রদেশের আন ইয়াং জেলার পাই বি উপজেলার পাই বি গ্রামের বাসিন্দা ফাং সিন লিং সকালে তার নাতি-নাতনিকে স্কুলে পাঠানোর পর বাড়িতে ফুল সাজানো শুরু করেন। তিনি বলেন, “প্রতিদিন ফুল সাজানোর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার পাশাপাশি পরিবারের যত্ন নিতে পারছি।” ষাট বছর বয়সী ফাং সিন লিং ফুল-বিন্যাস কাজের সঙ্গে জড়িত ৩ বছর ধরে। প্রতি মাসে এ থেকে ১ হাজার ইউয়ান উপার্জন করা সম্ভব হয় হাজার জন্য। ফাং সিন লিং’র কাছে ফুল সাজানোর কাজ সময়ে সীমিত নয়। এ কাজ করলে কৃষিকাজের পাশাপাশি ঘরের কাজও করা যায়।

স্থানীয় অবস্থার সঙ্গে তাল রেখে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন ইয়ান জেলার পাই বি উপজেলায় ফুল-বিন্যাস শিল্প গড়ে উঠেছে। ‘কোম্পানি যোগ ঘাটি যোগ কৃষক-পরিবার’ - এই পদ্ধতিতে আঙ্গিনা অর্থনীতির উন্নয়ন হয়েছে, যার ফলে বাইরে না গিয়ে উপার্জন করার পথ খুলেছে।

ফুল সাজানো, প্যাকেজ করা এবং বাক্সে রাখাসহ নানা প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত রয়েছেন পাই বি উপজেলার ফুল-বিন্যাস শিল্প কেন্দ্রের কর্মীরা। এ কেন্দ্রে বছরে ৮০ লাখ ফুল উত্পাদিত হয়। এতে ২ হাজার ২শজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

এ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তি চাং ইয়ান ইং বলেন, “ফুল সাজানো শেখা সহজ এবং এ কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এ কাজ করতে চাইলে নিজের অবস্থা অনুযায়ী ফুল সাজানোর ধরন ও প্রক্রিয়া, কর্মস্থল এবং কাজের সময় বেছে নেওয়া যায়।” ফুলের সাজানোকে সাধারণ লোকজনের চাকরির পাশাপাশি পরিবারের দুর্বলদের উপার্জনের মুল উত্স হিসেবে গণ্য করা হয়। এটিই পাই বি উপজেলায় ফুল সাজানো শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্য।

২০১৭ সালে যখন দারিদ্র্য বিমোচনের কাজ একটা সন্ধিক্ষণে পৌঁছায়, তখন পাই বি উপজেলায় দুর্বল শ্রমশক্তি ছিল ২০০ জনেরও বেশি। তাছাড়া জমি চাষ এবং প্রবীণ ও ছোটদের যত্ন নেওয়ার জন্য অন্য স্থানে যেতে না পারেন না এমন অনেকে রয়েছেন ওই এলাকায়। তাদের কর্মসংস্থান ও উপার্জন কিভাবে নিশ্চিত করা যায়? এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল পাই বি উপজেলা। এ সময় চাং ইয়ান ইং দম্পতি গ্রামে ফেরেন। তারা দীর্ঘকাল ধরে আন ইয়ান শহরে ব্যবসা করতেন। এই দম্পতি গ্রামের শ্রমিকদের নিয়ে ফুল সাজানো শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। স্থানীয় সরকারের সহায়তায় চাং ইয়ান ইং দম্পতি নিজেদের আঙ্গিনায় ২০০ বর্গমিটার জায়গার ওপর একটি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় পাই বি উপজেলার প্রক্রিয়াকরণ শিল্প।

নিজেদের আঙ্গিনায় স্থাপিত কারখানাকে কেন্দ্র করে চাং ইয়ান ইং দম্পতি বর্তমানে ৩০ বর্গমিটার আয়তনের প্রদর্শনী হল, ৮শ বর্গমিটারের কারখানা এবং ৮ হাজার বর্গমিটারের ওয়্যারহাউজ স্থাপন করেছেন। এ কেন্দ্রে প্রথম দিকে প্রতি মাসে ৪ হাজার ফুল উত্পাদিত হতো। এখন তা দেড় হাজারে ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে অর্ডারের পরিমাণও অনেক বেড়েছে। দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য এ কারখানা কাঁচামাল পাঠায় এবং সাজানোর পর সেগুলো সংগ্রহ করে। এর ফলে গ্রামবাসীরা ঘরের সামনে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে।

কেন্দ্রের এ সক্রিয় ব্যবস্থার কারণে স্থানীয় দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ ও নারীদের উপার্জন স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তোং সিন থিয়ান গ্রামের অধিবাসী ওয়েই চিন হুয়া সর্বপ্রথম এ কেন্দ্রের ফুল-বিন্যাস শিল্পে যোগ দেন। ওয়েই চিন হুয়া একজন প্রতিবন্ধী। তিনি হুইলচেয়ারের সাহায্য যাতায়াত করেন। “আমার পায়ে অসুবিধা রয়েছে। তবে আমি হস্তশিল্পের মাধ্যমে কিছু উপার্জন করতে পারি।” প্রথম দিকে ওয়েই চিন হুয়া প্রতিদিন মাত্র ১০ ইউয়ান উপার্জন করতে পারতেন। এখন প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে তিনি প্রতিদিন ৩০ ইউয়ান পর্যন্ত উপার্জন করতে পারছেন।

ফুলের বিন্যাস শিল্পের কারণে গ্রামে দূর্বল শ্রমশক্তির কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান হয়েছে। বর্তমানে আন ইয়াং জেলায় মোট ৩৫০ জনেরও বেশি অধিবাসী এ শিল্প জড়িত রয়েছেন। তাদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ইউয়ান ছাড়িয়ে গেছে।

চাং ইয়ান ইং গর্বভরে বলেন, “স্থানীয় সরকারের মনোযোগ, সুষ্ঠু পরিবেশ এবং ফুলের বিন্যাসের গুণগত মানসহ নানা কারণে বর্তমানে কুয়াং তোং প্রদেশের শান থৌ শহরের প্রধান কারখানা আমাদের কেন্দ্রকে ফুল প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্ব দিয়েছে।”

বর্তমানে পাই বি উপজেলায় সাজানো ফুল কেবল চীনের বিভিন্ন শহর নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, চিলি ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আঙ্গিনা-অর্থনীতি চাঙ্গা করার নতুন চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে এ শিল্প।