জুলাই ২১: ২০ জুলাই, বেইজিং তিয়াওইউথাই রাষ্ট্রীয় অতিথিভবনের ৫ নম্বর ভবনে একজন বিশেষ অতিথি এসেছেন।
একই দিনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে এখানে সাক্ষাত করেন। প্রেসিডেন্ট সি শতবর্ষীকে ‘পুরানো বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি চীন-মার্কিন সম্পর্ক উন্নয়নে এবং চীনা ও আমেরিকান জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব বৃদ্ধিতে তাঁর ঐতিহাসিক অবদানের প্রশংসা করেছেন। কিসিঞ্জার বলেন, মার্কিন-চীন সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি মার্কিন ও চীনা জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক।
বাহান্ন বছর আগে, এই জুলাই মাসে, একই স্থানে, তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা-বিষয়ক সহকারী এবং বিশেষ দূত হিসেবে কিসিঞ্জার পুরনো প্রজন্মের চীনা নেতাদের সাথে দেখা করেন এবং চীন-মার্কিন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ার প্রত্যক্ষদর্শী হন। একে কিসিঞ্জারের কূটনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে মনে করা হয়েছিল। বর্তমানে, তিনি ১০০ বারেরও বেশি চীন সফর করেছেন এবং তিনি এখন ১০০ বছরেরও বেশি বয়েসে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যোগাযোগ ও সংলাপ প্রচারের প্রথম সারিতে সক্রিয় রয়েছেন। বিশ্বের সম্মান অর্জনের জন্য এই ‘দুইশত’ যথেষ্ট।
আমেরিকান রাজনৈতিক মহলে, কিসিঞ্জার একটি বাস্তববাদী শক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন যা চীনের সাথে সংলাপ এবং সম্পৃক্ততার সমর্থন করে এবং সঠিকভাবে মতভেদগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। এই শক্তি সত্যিকার অর্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার বাস্তবতার ভিত্তিতে একটি যুক্তিযুক্ত এবং গঠনমূলক চীন নীতি প্রণয়ন করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের দিকে তাকালে, এটি খুঁজে পাওয়া কঠিন নয় যে যখনই ওয়াশিংটনে চীনের সাথে সহযোগিতার কণ্ঠস্বর প্রাধান্য পাবে, তখনই চীন-মার্কিন সম্পর্কের সার্বিক বিকাশ মসৃণ হবে। বিপরীতে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাতাস এবং তরঙ্গের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
বর্তমানে চীন-মার্কিন সম্পর্ক আবারও এক সন্ধিক্ষণে এসেছে। আমরা গত পাঁচ বছরে চীনা নেতা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিসিঞ্জারের বৈঠকের প্রেস রিলিজগুলো সংগ্রহ করেছি। দেখা যাচ্ছে যে, তার বক্তৃতার মূল কথাগুলো ছিল খুবই ঘনীভূত বোঝাপড়া, সংলাপ, যোগাযোগ এবং মতভেদ নিয়ন্ত্রণ। কিসিঞ্জারের বাস্তববাদী এবং যুক্তিবাদী কূটনৈতিক চিন্তাভাবনা যদি মার্কিন সরকারের চীন নীতির সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে চীন-মার্কিন সম্পর্কের মূল সমস্যা আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।
মার্কিন কিছু রাজনীতিবিদ প্রায়শই বলেন যে চীনের উন্নয়নের পথ, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও মূল্যবোধগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং এগুলোকে চীনের শত্রুতা ও দমনের ভিত্তি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ পার্থক্যগুলো মাত্র তৈরি হয়েছে—এমন কিছু নয়। স্নায়ুযুদ্ধের শিখরের ঐতিহাসিক পটভূমিতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতার বরফ ভেঙেছে এবং "প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে মিল" অর্জন করেছে, যা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেন তা করা সম্ভব হয়েছিল? এটি শুধুমাত্র সময় ও ধারার সৃষ্টি করেনি, বরং আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল যে, চীন ও মার্কিন নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করা শুধু একে অপরের উপকারে আসে না, বরং বিশ্বের জন্যও কল্যাণকর। তাই, অসাধারণ কৌশলগত প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও সাহসিকতার সঙ্গে দুই পক্ষ আদর্শগত পার্থক্য অতিক্রম করে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আজ, ৫২ বছর পর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যও পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা থেকে লাভবান হবে এবং সংঘর্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে—এই যুক্তিটি পরিবর্তিত হয়নি। এর আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে ফোনালাপে বা এবার কিসিঞ্জারের সাথে বৈঠকে যাই হোক-না-কেন, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বহুবার উল্লেখ করেছেন যে, চীন-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিশীল বিকাশের মূল চাবিকাঠি হল পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং জয়-জয় সহযোগিতার তিনটি নীতি অনুসরণ করা। এটি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অতীতের বিনিময়ের অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ এবং নতুন যুগে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঠিকভাবে চলার পথ।
চীন-মার্কিন যোগাযোগ ও আলোচনার একজন সাক্ষী হিসাবে, মিস্টার কিসিঞ্জার বিশেষভাবে সচেতন যে, তাইওয়ান ইস্যুটি চীন-মার্কিন সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল সমস্যা। এবারের চীন সফরে তিনি প্রেসিডেন্ট সি’কে বলেছিলেন যে "সাংহাই ইস্তাহার"-এ নির্ধারিত নীতিগুলি মেনে চলা এবং চীনের জন্য এক-চীন নীতির চরম গুরুত্ব বোঝা উচিত। যে সব আমেরিকান রাজনীতিবিদরা ক্রমাগত তাইওয়ানের বিষয়ে "আগুন নিয়ে খেলছেন" তাদের এই বুদ্ধিমান বৃদ্ধের উপদেশ শোনা উচিত।
কিসিঞ্জার ব্যক্তিগতভাবে চীন সফর করার সাথে সাথে দু’দেশের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত একের পর এক চীন সফর করেছেন। অনেক বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন যে, চীন-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। যা প্রমাণ করে যে, চীন-মার্কিন সম্পর্ক ভাল করতে হবে কিনা তা যাচাই-বাছাইয়ের প্রশ্ন নয়, তবে কীভাবে ভাল করা যায়, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
চীনারা প্রায়শই বলে, "অতীত পর্যালোচনা করার পাশাপাশি নতুন করে শেখা যায়।" বিগত ৫২ বছরে, চীন-মার্কিন সহযোগিতা একের পর এক বড় ঘটনা অর্জন করেছে যা উভয় দেশ ও বিশ্বের জন্য কল্যাণকর। আজ, মার্কিন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের ইতিহাস থেকে উত্তর খুঁজে বের করতে হবে: চীনকে কীভাবে দেখলে বা কীভাবে চীনের সাথে আচরণ করলে, তা সত্যিই মার্কিন জাতীয় স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? এই মৌলিক বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে সংকট পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এগিয়ে যাবে। চীন-মার্কিন সম্পর্কের ভবিষ্যত আজকের পছন্দের উপর নির্ভর করে এবং তা ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার অংশ। চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর "অবশ্যই উত্তর দিতে হবে"। একটি ভাল কাজ করার জন্য কিসিঞ্জারের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন।
(ইয়াং/তৌহিদ/ছাই)