পুরানো কাপড়ের টুকরো দিয়ে বানানো হয়েছে একটি নতুন শার্ট, প্লাস্টিক বর্জ্য টুকরো টুকরো করে তৈরি করা হয়েছে ব্যাগ এবং ফসলের বর্জ্য ও ফলের অবশিষ্টাংশকে পরিণত করা হয়েছে পশমে। শাংহাই শহরে ‘পুনর্ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাংক ‘নামের একটি দোকানে এমন পোশাক পাওয়া যায়।
এখানে বিক্রির জন্য তোলা সব পোশাক পরিবেশবান্ধব পুনর্ব্যবহৃত কাপড় দিয়ে তৈরি। প্লাস্টিক বোতল, ফেলে দেওয়া মাছ ধরার জাল, পুরানো টেক্সটাইল জীবাণুমুক্তকরণ ও প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় পোশাকের উপাদান। ওই কাপড়ের দোকানের প্রতিষ্ঠাতা চাং না জানান, পুনর্ব্যবহৃত কাপড়ের স্বীকৃতি দিন দিন বাড়ছে এবং সবাই পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য এমন পণ্য কিনতে চায়, যা ভাল একটি ধারা।
আরও বেশি মানুষ ‘সবুজ ভোগের’ ধারণা গ্রহণ করছে এবং সবুজ ও নিম্ন-কার্বন পণ্য জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এসি ক্রয় করছেন ওয়াং নামে একজন মহিলা। তিনি জানান, আগে যখন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করতেন, তখন বিক্রেতার পরামর্শ শুনতেন। তবে এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লেবেল দেখেন এবং যেটি সবচেয়ে কম বিদ্যুতে চলে সেটি বাছাই করেন।
চলতি বছরের জুন মাসে চীনের অনলাইন কেনাকাটার প্ল্যাটফর্মে সর্বাধিক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এসির ব্যাপারে অনুসন্ধান গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৫ শতাংশ বেশি ছিল এবং ৯০ শতাংশ ক্রেতা সর্বাধিক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এসি ক্রয় করেন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ছুং ছিং শহরে নতুন জ্বালানি-চালিত গাড়ির উত্পাদন ও বিক্রির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮২ হাজার ও ৮০ হাজার। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২৬ শতাংশ বেশি। বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ির ব্যক্তিগত ও কোম্পানি ক্রেতার সংখ্যা যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৯ এবং ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি ছিল। ছুংছিং গাড়ি শিল্পে প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছে বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি।
ছুংছিং শহরে লাই ফুসি নামে একটি শপিং মল আছে। পাশাপাশি এটি শহরের সবুজ ফুসফুস এবং পরিবহন বন্টন কেন্দ্রও। শপি মলের ছাদে বাগান করা হয়েছে ৩০ হাজার বর্গমিটারেরও বেশি জায়গা নিয়ে। চারটি ভবন যুক্ত করে ৩০০ মিটার লম্বা একটি ক্রিস্টাল করিডোরও নির্মিত হয়েছে। এ করিডোরে রোপণ করা হয়েছে ১১০টি গাছ। ক্রেতা এখানে এসে যেন প্রকৃতিতে প্রবেশ করে। শপিং মলের প্রধান কার্যালয়ের প্রধান হুয়াং রুই চেং জানান, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে এবং বিদ্যুতের খরচ কমাতে সক্ষম হয়েছে। গত বছর এ শপিং মল মোট ৪ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে, যার মূল্য প্রায় ৪৫ লাখ ইউয়ান।
‘টেক অ্যা লাঞ্চ বক্স’ সংগ্রহ করে থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যেমে সেগুলোকে পেন হোল্ডার এবং স্টোরেজ বক্স তৈরি করা হয় কিংবা এসেন্সের জন্য প্রতিস্থাপিত কোরও তৈরি করা হয়। গত ১১-১৪ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম ‘শাংহাই আন্তর্জাতিক কার্বন-নিরপেক্ষ প্রযুক্তি, পণ্য ও ফলাফল প্রদর্শনী’তে দেশ-বিদেশের প্রায় ৬০০ কোম্পানি হাজারেরও বেশি সবুজ ও নিম্ন-কার্বন প্রযুক্তি, পণ্য ও সেবা নিয়ে আসে।
অনলাইন খাবার অর্ডার প্ল্যাটফর্ম ‘এল্যম্য’ ভোক্তার জন্য কাটলারির বিকল্প সরবরাহ করে। এছাড়া তারা খাবার দোকানগুলেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য টেকওয়ে খাবার বক্স ব্যবহার করতে এবং একজনের খাবার বা অল্প পরিমাণের খাবার সরবরাহকে উত্সাহ দেয়। যেসব ভোক্তা কাটলারিহীন অর্ডার দেয় কিংবা অল্প পরিমাণের খাবার অর্ডার করে তাদেরকে বোনাস পয়েন্ট দেওয়া হয়। ‘এল্যম্য’-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত মে মাসের শেষ নাগাদ তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১৪০ কোটি কাটলারিহীন খাবার বিক্রি হয়েছে। এতে করে ৬ হাজার টন কাঠ ও ৩ হাজার প্লাস্টিক সাশ্রয় হয়েছে।
চীনের হাইনান প্রদেশে প্রদর্শনী-কেন্দ্র থেকে সরকারি অফিস পর্যন্ত, কোম্পানি থেকে হাসপাতাল ও রাস্তার দোকান পর্যন্ত সবাই পচনশীল প্যাকেজিং ব্যবহার করছে। কেউ কেউ বাস্কেট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাইনান প্রদেশে অপচনশীল প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হয়। ২০২২ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয় প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা। এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন এবং সবুজ প্যাকেজিং জনপ্রিয় করে তোলাসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। হাইনান প্রদেশে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ কার্যক্রমে সবাই অংশগ্রহণ করছে। বর্তমানে হাইনান প্রদেশে পচনশীল প্লাস্টিকের ব্যবহারের হার ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ।
‘সবুজ ভোগ’কে উৎসাহিত করতে গেল কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে অঞ্চলিক সরকার পর্যন্ত সব কর্তৃপক্ষ ধারাবাহিক নীতি প্রয়োগ করেছে। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রণালয় এবং জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশন সম্প্রতি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে ‘বাণিজ্য ক্ষেত্রে ডিসপৌজাবল প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার ব্যবস্থা’। এতে গতানুগতিক প্লাস্টিক ব্যবহার হ্রাস করা এবং সবুজ ও নিম্ন-কার্বন জীবনযাপনের রীতিকে উত্সাহ দেওয়া হয়। ছুংছিং শহরে যারা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করে, তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ-চালিত গাড়ি কিনলে ট্যাক্স ও চলাচল ক্ষেত্রে সুবিধা দেয় সরকার।
ভোগ্যপণ্যের উন্নয়নে ‘সবুজ ভোগ্যপণ্য’ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ এবং সেটা শিল্পের ‘সবুজ উন্নয়ন’ এবং সারা অর্থনৈতিক সমাজের ‘সবুজ রূপান্তর’কে এগিয়ে নেবে।(শিশির/রহমান/রুবি)