‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. দক্ষ প্রতিভা অন্বেষণের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে চীন জুড়ে নানা পদক্ষেপ
চীনে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাকরির বাজারে কদর বাড়ছে ভোকেশনাল গ্র্যাজুয়েটদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দক্ষ প্রতিভার ঘাটতি থাকায় নেওয়া হচ্ছে নানা প্রশিক্ষণমূলক ব্যবস্থা। গোটা সেবাখাতেই আনা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন।
চীনে এক দিকে যেমন দেশটির সরকার নিয়োগ অভিযান পরিচালনা করছে অন্যদিকে চলছে দক্ষ প্রতিভা অন্বেষণ। ক্যাটারিং ও উৎপাদন শিল্পসহ কয়েকটি খাতে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী ছাংশাতে ৩ শ’ জনেরও বেশি রন্ধন কারিগর একটি রান্নার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ইভেন্টটি অর্ধশতাধিক ক্যাটারিং কোম্পানিকে আকৃষ্ট করে, যার প্রতিটিতে শতাধিক লোক নিয়োগের প্রয়োজন ছিল।
সাংহাই-ভিত্তিক একটি ক্যাটারিং কোম্পানির নিয়োগ প্রধান চেন ইউসি তাদের প্রয়োজনের কথা জানান, "আমাদের মূলত গরম ও ঠান্ডা খাবার রান্না করার জন্য শেফ দরকার। রান্নাঘরের জন্য আমাদের আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ জন কর্মী প্রয়োজন।"
এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর অনেক প্রতিযোগী চাকরির অফারও পাচ্ছেন বলে জানান প্রার্থীরা। ‘চাকরির নিয়ে আমার অনেক প্রত্যাশা আছে। চার-পাঁচটি কোম্পানি আমার কাজের আগ্রহ নিয়ে কথা বলেছে।‘
এদিকে, চিয়াংসু প্রদেশের থাইচৌ শহরে অর্ধশতাধিক স্থানীয় কোম্পানি সম্প্রতি কর্মী নিয়োগের জন্য বৃত্তিমূলক স্কুলের স্নাতকদের নিয়ে একটি দক্ষতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
চীনে এ বছর দক্ষ প্রতিভার ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। নিয়োগ প্ল্যাটফর্মের তথ্যে দেখা যায়, এ বছর ক্যাটারিং শিল্প, ওয়েল্ডিং, সাবগ্রুপ অ্যাসেম্বলিং ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রায় দু হাজার দক্ষ কর্মীর ঘাটতি রয়েছে।
তবে পুরো সেবা খাতকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। নিয়োগ প্ল্যাটফর্মের তথ্য বলছে, উৎপাদন খাতে অনেক কাজে দক্ষ এমন অলরাউন্ডার কর্মীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
কর্মসংস্থানের বাজারে দক্ষ প্রতিভার ঘাটতি মোকাবিলার প্রচেষ্টায়, অনেক চীনা বৃত্তিমূলক স্কুল নতুন পদ্ধতি অনুসন্ধান করছে। চাকরির বাজারের শূন্যস্থান সঠিকভাবে পূরণ করতে তারা শিক্ষাদান, চাকরি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান এবং বৃত্তিমূলক নানা প্রশিক্ষণ চালু করেছে।
"সিনো-জার্মান টেকনিশিয়ান ক্লাস" হলো ভোকেশনাল স্কুলে ছোট-গ্রুপের শিক্ষাদানের একটি পাইলট প্রকল্প, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে ফোকাসে রেখে অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ করে তোলে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চীনে ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি স্কুলে ১ হাজার ৩’শ ৮২টি বিষয়ে অর্থাৎ জাতীয় অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা দেওয়া হয়। ৩০ হাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে দেড় হাজারেরও বেশি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণগ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদকঃ শিহাবুর রহমান
২. তিন বছরে প্রথম তাইওয়ান সফরে চীনের মূল-ভূখণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয় বিনিময় গ্রুপ
চীনের মূল-ভূখণ্ডের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন শিক্ষক এবং ছাত্রের একটি দল সম্প্রতি তাইওয়ান সফর করেছেন।
তিন বছরের মধ্যে এটি মূল-ভূখন্ডের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি দলের প্রথম তাইওয়ান সফর। পিকিং ইউনিভার্সিটির পার্টি প্রধান হাও পিং দলটির নেতৃত্ব দেন।
তাইওয়ান-ভিত্তিক মা ইং-চিউ ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে, মূল ভূখণ্ডের দর্শনার্থীরা তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেংচি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দ্বীপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন।
হাও পিং বলেন, এ সফরটি তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পারের তরুণদের মধ্যে বন্ধুত্বকে গভীর করবে এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে আন্তঃপ্রণালী বিনিময়কে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এই বছরের শুরুর দিকে, মা ইং-চিউ তাইওয়ানের ছাত্রদের একটি দলকে মূল ভূখণ্ডে নিয়ে যান এবং তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই সময় মূল ভূখণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলের শিক্ষক এবং ছাত্ররাও তাইওয়ান পরিদর্শন করতে পারে বলে তিনি বার আশা ব্যক্ত করেন।
প্রতিবেদকঃ মাহমুদ হাশিম
সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩. এক অসাধারণ গ্রন্থ-প্রেমী তরুণের গল্প
চীনের ছিউনাথোং গ্রামের এক বইপ্রেমী তরুণ কান ওয়েনইয়ং। তিনি তার গ্রামের শিশুদের জন্য গড়ে তুলেছেন গ্রন্থাগার। বই পড়ার সুবিধা থেকে যেনো কোনো শিশু বঞ্চিত না হয় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এই তরুণ।
শৈশবে লেখাপড়ার কোন সুযোগ পাননি কান ওয়েনইয়ং। অথচ গ্রামের শিশুদের জন্য লাইব্রেরি স্থাপন করে তিনি সৃষ্টি করেছেন দৃষ্টান্ত। ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির কাছে ইয়ুননানের দুর্গম পাহাড়ি অরণ্য। নুচিয়াং নদীর তীরে এক পাহাড়ি উপত্যকায় কংশান কাউন্টিতে অবস্থিত ছিউনাথোং গ্রাম। এই গ্রামের তরুণ কান ওয়েনইয়ং গড়ে তুলেছেন বানশান হুয়াইয়ু নামে একটি লাইব্রেরি।
অতীতে গ্রামটি ছিল দারিদ্রপীড়িত। আর্থিক সংকটে ছোটবেলায় বই পড়তে পারেননি কান। তার শৈশব কাটে গরুর রাখালি, খামারে কাজ, পাহাড় থেকে লতা পাতা সংগ্রহ করার কাজে। ২০০৬ সালে যখন স্কুলের বেতন ফ্রি করে দেয়া হয় এবং সকলের জন্য বাধ্যতামূলক শিক্ষার সুযোগ তৈরি হয় তখন স্কুলে যাওয়া শুরু করেন কান। ১৪ বছর বয়সে তিনি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তেন। সরকারি সহায়তায় লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি। কাওখাও বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেন কান।
কাওখাও পরীক্ষা দিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন হাতভর্তি করে বই নিয়ে। তখনি তার মাথায় আসে গ্রামে লাইব্রেরি করার আইডিয়া।
তার মতো কোন শিশু যেনো বই থেকে বঞ্চিত না হয় এমন ইচ্ছা থেকেই লাইব্রেরির কাজ করছেন বলে জানান কান।
‘আমি ১৪ বছর বয়সের আগে বই পড়ার সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমার গ্রামের শিশুদের আমি বই পড়ার আনন্দটা পৌছে দিতে চাই।’
২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিতে বাড়ি এসে তিনি একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। পরিবারের দুটি গরু বিক্রি করে বই কেনেন তিনি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে এই কাউন্টিতে লিগ্যাল এইডের কাজ শুরু করেন কান। স্থানীয় সরকার থেকে ঋণ নিয়ে তিনি তার লাইব্রেরিটি বড় করেন। স্থানীয় সরকারের সহায়তায় বর্তমানে কানের লাইব্রেরিতে চল্লিশ হাজারের বেশি বই রয়েছে। শিশু ও কিশোরবয়সীরা এখানে তাদের পছন্দসই বই পড়তে পারে।
এই গ্রীষ্মের ছুটিতে শেনচেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে লাইব্রেরির একটি চুক্তি হয়েছে। গ্রীষ্মের ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিউনাথোং গ্রামে এসে শিশুদের জন্য একটি রিডিং ক্যাম্প করবে।
কান ওয়েনইয়ং এখন আরও বড় লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। তিনি চান গ্রামের প্রতিটি আবাসিক এলাকায় লাইব্রেরি স্থাপন করতে। নিজের গ্রামের তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে আরও পরিশ্রম করছেন এই গ্রন্থপ্রেমী যুবক।
প্রতিবেদকঃ শান্তা মারিয়া
সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী