প্রতিবেশী দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে চীনের অবদান | শেকড়ের গল্প | পর্ব ২৭
এবারের পর্বে রয়েছে
১. নেপালের স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে চীন
২. তরমুজ ও লিচুর ভালো ফলনে খুশি চীনের কৃষকরা
৩. আধুনিক প্রযুক্তি সহজ করেছ গমের উৎপাদন
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
১. নেপালের স্থানীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে চীন
নিজ দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের গ্রাম পর্যায়ের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নত করতে কাজ করছে চীন সরকার।
সম্প্রতি নেপালের একটি পৌরসভায় উন্নয়নের উপর নজর দিয়েছে দেশটি। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহসহ মানুষের নিত্য দিনের ভোগান্তি দূর করতে কাজ করছে কয়েকটি টিম। কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজনও করে চীনের অভিজ্ঞ দল। সব মিলিয়ে চীন সরকারের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন নেপালের স্থানীয় মানুষজন।
নেপালের তারাকেশ্বর পৌরসভার মানুষজন দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। গেল ২০১৫ সালে চায়না ফাউন্ডেশন ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট’র কার্যালয় খোলা হয় নেপালের এ পৌরসভায়। এরপর থেকে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় এখানে। মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শুরুতেই বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয় পুরো গ্রামবাসীর জন্য। নির্মাণ করা হয় তিনটি ওয়াটার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক।
এক গ্রামবাসী বলেন, “আমাদের গ্রামবাসীদের জন্য চীনের এই অবদান সত্যিই প্রশংসনীয়। এখানে প্রায় ৪০০ ঘর বাড়ি রয়েছে এবং সবাই এখন বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছে”।
অঞ্চলটি কৃষি নির্ভর হলেও দক্ষতা না থাকায় কৃষি কাজ করে খুব একটা লাভ হয় না কৃষকদের। এ দিকটি বিবেচনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নেপালের কৃষি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের এনে নানা বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
শুধু প্রশিক্ষণ নয়, পণ্য সঠিক সময়ে বাজারে পৌঁছে দেওয়া এবং অনলাইনে এর প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থাও করেছে চীনের অভিজ্ঞ দল।
কল্পনা নামের এই গ্রামবাসী জানিয়েছেন কিভাবে চীনের প্রকল্প জীবন পাল্টে দিয়েছে তাদের।
"প্রশিক্ষণ নেয়ার পর আমরা এখন আগের চেয়ে ভালো মানের ফসল উৎপাদন করতে পারি। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আমরা এখন বিদেশেও সবজি রপ্তানি করি। সব মিলিয়ে আমাদের জীবন-যাপন এখন আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। আমি সত্যি ভীষণ খুশি।
এই ফাউন্ডেশন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে যার নাম ‘স্মাইলিং চিলড্রেন প্রজেক্ট’।
এক শিক্ষার্থী বলেন,"আগে স্কুল থেকে কোন খাবার দেয়া হতো না। বাসা থেকে লাঞ্চ বক্সে খাবার আনতে হতো। খাওয়ার সময় খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে যেতো, একদম মজা লাগত না। এখন আমরা গরম গরম খাবার খেতে পারি।"
নেপালের এই পৌরসভার বাসিন্দাদের জীবনমান পাল্টে দিয়েছে চীনের সহযোগিতা প্রকল্প। ভবিষ্যতে অন্য এলাকাতেও প্রকল্প চালু হবে বলে প্রত্যাশা করছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
২. তরমুজ ও লিচুর ভালো ফলনে খুশি চীনের কৃষকরা
বাংলাদেশের মতো চীনের মানুষের কাছেও ভীষণ প্রিয় তরমুজ ও লিচু। চীনে বড় পরিসরে চাষ করা হয় এই ফল। মাঠ থেকে এই দুই ফল সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন চীনের ফল চাষীরা। গেল কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে দেশটির প্রায় সব প্রদেশেই তরমুজ উৎপাদনে দারুণভাবে সফল হয়েছে চাষিরা। এখন ভালো দামের প্রত্যাশা করছে চাষীরা।
হাসিমুখে সাত হেক্টরের গ্রিনহাউজে চাষ করা তরমুজ সংগ্রহে ব্যস্ত ফলচাষী। এটি উত্তর চীনের দশানসি প্রদেশের চিঞ্চৌ শহরের চিনফু জেলায়।
তরমুজ সংগ্রহের পরেই বিক্রি হয়ে যায় ।শুধু সকাল বেলাতেই প্রায় ১হাজার কিলো ফল বিক্রি করে এখানকার ফল চাষীরা ।
চলতি বছর এই জেলায় ১ হাজার ৭০০ হেক্টরের বেশি জায়গা জুড়ে তরমুজ রোপণ করা হয়। যা কৃষকদের আয় বাড়িয়েছে প্রায় ৪৬৮ মিলিয়ন ইউয়ান।
শুধু চীনের শানসি প্রদেশ নয়, ,কুয়াংতং এবং হেনান প্রদেশজুড়েই চলছে ফল তোলার মৌসুম। কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে এবার ফলের আবাদ যেমন বেড়েছে তেমনি লাভের মুখ দেখছে চাষীরা।
মধ্য চীনের হেনান প্রদেশের চিয়াংচেং কাউন্টিতেও তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই কাউন্টি থেকে প্রতিদিন ৩০০ টনের বেশি তরমুজ চীনের বিভিন্ন প্রদেশে পাঠানো হয় এবং এখন পর্যন্ত ৮০০ টনেরও বেশি তরমুজ বিক্রি হয়েছে এরইমধ্যে।
কাউন্টির শাংচুয়াং গ্রামে, হেক্টর প্রতি তরমুজ ফলন ৪৫ হাজার থেকে ৬০ হাজার কিলোগ্রাম হবে বলে প্রত্যাশা চাষীদের। আর সমগ্র চিয়াংচেং কাউন্টির তরমুজ রোপণ এলাকা প্রায় ২৭০ হেক্টর, যার প্রতি হেক্টর আয় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ইউয়ান।
এদিকে দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের দক্ষিণ উপকূলীয় শহর চানচিয়াং-এর চানচুয়ান গ্রামে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে লিচুর । সেখানে বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে ট্রাকে লোড করার আগে বরফের পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় ।
বিশেষায়িত কৃষি সমবায় স্থাপনের মাধ্যমে, এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অফলাইন প্রচারণার মাধ্যমে অনলাইনে ভালো বিক্রি হচ্ছে লিচু। ফলে, গেল দুই বছরে গ্রামের লিচুর বিক্রি পরিমান বেড়েছে কয়েকগুণ।
চানচুয়ান গ্রামের প্রায় ৪০০’র বেশি পরিবারের সকলেই সুস্বাদু ফল চাষ করছে। তাই চলতি বছর স্থানীয় লিচুর মোট উৎপাদন মূল্য ১৫০ মিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিবেদন: আফরিন মিম
সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান
৩. আধুনিক প্রযুক্তি সহজ করেছেs গমের উৎপাদন
আধুনিক প্রযুক্তি সহজ করেছে চীনের কৃষকদের কৃষি কাজ। তারা এখন গম শুকাতেও কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার করছেন। একেকটি মেশিনের মাধ্যমে শুকানো যাচ্ছে কয়েক টন ধান। সব মিলিয়ে এ বছর ভালো মুনাফার প্রত্যাশা করছেন কৃষকরা।
পূর্ব চীনের আনহুই এবং শানতুং প্রদেশে শুরু হয়েছে গম কাটার কাজ। গমের সোনালী গাছে ছেয়ে গেছে চারিপাশ।
আনহুই প্রদেশের কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, এরইমধ্যে এই প্রদেশে গম কাটার কাজ শেষ হয়েছে। কাটা হয়েছে প্রায় ৩ মিলিয়ন হেক্টর গম। বাম্পার ফলন হওয়ার পেছনে কৃষি প্রযুক্তির অবদানের কথা তুলে ধরেন কৃষকরা।
হারভেস্টার মেশিন ব্যবহারের পাশাপাশি কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের শিখিয়েছেন কিভাবে বৃষ্টির দিনগুলোতে গমের গাছগুলো সুরক্ষিত রাখতে হয়। এজন্য ব্যবহার করতে হয় ইন্টেলিজেন্ট ড্রাইং মেশিনারিজ।
আনহুই প্রদেশের থিয়ানছাং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গম ঝরঝরে রাখার জন্য ৪২০ সেট আধুনিক মেশিন রেখেছে। এই মেশিনগুলো প্রতিদিন বিশ হাজার টন গম শুকাতে পারে।
এদিকে শানতুং প্রদেশের লিনই কাউন্টির কৃষকরাও গম কাটার কাজ প্রায় শেষ করেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমি থেকে গম তোলা হয়েছে। আর এত পরিমাণ গম তোলা সম্ভব হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির কারণে।
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী