সম্প্রতি চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি বছরের প্রথমার্ধের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান সময়টা চীনের জন্য চ্যালেঞ্জের; আন্তর্জাতিক পরিবেশ অনেক জটিল। রুশ-ইউক্রেন সংকটের নেতিবাচক প্রভাব, চীন-মার্কিন সম্পর্কের টানাপড়েন, ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বেইজিংকে। এসব ফ্যাক্টর চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে ও ভবিষ্যতেও ফেলবে। এ প্রেক্ষাপটেই চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের পার্ফমেন্স বিবেচনা করতে হবে।
প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানি স্থিতিশীল ছিল, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.১ শতাংশ বেশি। আর এর আকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে।
আসলে এমন অগ্রগতি অর্জন করা সহজ ব্যাপার ছিল না। বর্তমানে বিশ্বের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতি শ্লথ, বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগেও মন্দাভাব বিরাজ করছে; পাশাপাশি আছে একতরফাবাদ, সংরক্ষণবাদ ও ভৌগোলিক রাজনীতিসহ বিভিন্ন ঝুঁকি। তবে, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য চাপের মুখোমুখি হলেও, স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে।
বছরের প্রথম ছয় মাসে চীনের আমদানি-রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে এবং এর পরিমাণ ছিল ২০.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা ইতিহাসের নতুন রেকর্ড। প্রথম ছয় মাসে চীনের আমদানি-রপ্তানীর মোট পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ কোটি ইউয়ান বেশি ছিল, যা গেল বছর চীনের ৩০ লক্ষাধিক গাড়ি রপ্তানির মোট পরিমাণের সমান।
মূল্য ও পরিমাণ হল বাণিজ্যের আকারকে প্রভাবিত করা দু’টি প্রধান উপাদান। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের মোট পরিমাণ স্থিতিশীলতার সঙ্গে বেড়েছে। প্রথম প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ৯.৭৬ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১০.৩৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। উভয় প্রান্তিকেই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
বাণিজ্যের পরিমাণ অব্যাহতভাবে বাড়ার কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির ভিত্তি আরও মজবুত হয়েছে। বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্যের আকারের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, যার মানে, চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানির ভিত্তি খুব দৃঢ়।
আরেকটি বিষয় আমরা অর্থনৈতিক রিপোর্ট থেকে জানতে পারি। চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য আরও প্রাণচঞ্চল, কাঠামো আরও সুসংহত হচ্ছে; উন্নয়নের শক্তি আরও জোরদার হচ্ছে।
বছরের প্রথমার্ধে চীনে ৫ লাখ ৪০ হাজার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নমনীয়তা বেশি ও বাজারের সঙ্গে ভালোভাবে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতাসম্পন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধির প্রধান শক্তি।
বৈদেশিক বাণিজ্যের কাঠামো আগের চেয়ে সুসংহত হয়েছে। আন্তঃদেশীয় ই-কমার্সের সুবিধা ও সুপ্তশক্তি কাজ করছে। এই ক্ষেত্রের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ১.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।
এদিকে, বছরে প্রথমার্ধে, আসিয়ান, ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা এবং মধ্য-এশিয়ার সাথে চীনের আমদানি-রপ্তানি যথাক্রমে ৫.৪ শতাংশ, ৭ শতাংশ, ১০.৫ শতাংশ এবং ৩৫.৬ শতাংশ বেড়েছে।
তবে, এতসব অর্জনের মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জও দেখা যাচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্যে অস্থিতিশীল ও অনির্দিষ্ট উপাদানও এখনও কম নয়। তবে, চ্যালেঞ্জ যতই থাকুক, বৈশ্বিক পরিবেশ যতই অস্থিতিশীল হোক, চীনকে এর মধ্যেই এগিয়ে যেতে হবে। চলতি বছর থেকে চীন বৈদেশিক বাণিজ্যকে স্থিতিশীল করার আরও কিছু নীতিমালা গ্রহণ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বৈদেশিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। চীনের শুল্ক বিভাগ বাণিজ্যিক পরিবেশ সুসংহত করতে ১৬-দফা নতুন ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব ব্যবস্থা বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীন উন্মুক্তকরণে অবিচল আছে এবং সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নীতি কার্যকর হলে, আমরা বিশ্বাস করি, চীনের অর্থনীতি দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীল উন্নয়নের দিকেই এগিয়ে যাবে। (শুয়েই/আলিম)