‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ২৭
2023-07-18 15:43:00

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। ইন্টারনেটে ভাইরাল চীনের শস্যক্ষেতে ক্যাফে

২। ই জাতির গ্রাম থুয়ানশান

৩। সংস্কৃতির লীলাভূমি সিনচিয়াংয়ের তুরপান

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’ 

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ২৭তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।  

 

১। ইন্টারনেটে ভাইরাল চীনের শস্যক্ষেতে ক্যাফে

 

বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠের মাঝে ছোট ছোট ছাউনি করা বসার জায়গা। নীল আকাশের নীচে এই ছোট ছাউনিতে বসে কেউ খাচ্ছে কফি কেউবা জুস।

 

 

 

বলছি পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের চাংচৌ শহরের চিয়াংকু গ্রামের এই ভিন্নধর্মী কফি শপের কথা।

সম্প্রতি শস্যের মাঠে গড়ে তোলা হয়েছে ক্যাফে। যেখানে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে উপভোগ করা যায় গ্রামীন সৌন্দর্য। শহর থেকে দূরে প্রকৃতির কাছকাছি কিছুটা সময় কাটাতে দূর-দূরান্ত থেকে ক্যাফেতে ভিড় করছে পর্যটকরা ।

 

 

ঘুরতে আসা একজন পর্যটক জানান, " এখানে এসে কফি খেতে খেতে পাহাড় ,গাছপালা বিশেষ করে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পারি। আমি উপভোগ করি প্রকৃতি সৌন্দর্য। একটা অভ্যন্তরীন শান্তি পাই।"

 

 

গ্রামীন পর্যটনশিল্পকে বাড়ানোর পাশপাশি স্থানীয় পর্যটনখাতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এ ধরনের উদ্যোগ ফলপ্রসূ ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

ক্যাফেতে কর্মরত একজন কর্মী জানান, "ক্যাফেটি একটি আবাসিক বিল্ডিং থেকে সংস্কার করা হয়েছিল, তাই এটি বর্তমান বাস্তুশাস্ত্রে খুব বেশি বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। আমি মনে করি ধীরে ধীরে গ্রামাঞ্চলে শহুরে উপাদানগুলিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া অর্থবহ এবং আনন্দদায়ক," ।

 

 

 

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এই ক্যাফে।

শস্যক্ষেতের এই বিশেষ ক্যাফে একসময়ের অজানা গ্রামটিকে ইন্টারনেট দুনিয়ায় করে তুলেছে জনপ্রিয়। যা স্থানীয় গ্রামবাসীদের জীবনেও নিয়ে এসেছে বিশেষ পরিবর্তন।

 

 

স্থানীয় গ্রামবাসীর পাশাপাশি শহুরে পর্যটকরা আসছে এখানে। স্থানীয় পর্যটনশিল্পকে বাড়াতে এবং পর্যটনখাতকে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা করতে এই ক্যাফে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- সাজিদ রাজু

 

২। ই জাতির গ্রাম থুয়ানশান

থুয়ানশান গ্রামে গেলে পর্যটকদের কাছে মনে হয় তারা যেন দুশো বছর আগের একটি স্থানে চলে এসেছেন। অষ্টাদশ ও  ঊনবিংশ শতকের রীতিতে তৈরি বাড়িঘর, দেয়ালের কারুকার্য পর্যটকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় অতীতের স্নিগ্ধ সময়ে। চীনের ইয়ুননান প্রদেশে বাস করেন অনেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। ই জাতির রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য।

দক্ষিণ ইয়ুননানের  চিয়ানশুই কাউন্টির থুয়ানশান গ্রামে ই জাতির মানুষ বাস করছেন আবহমান কাল ধরে। থুয়ানশান গ্রামের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এখানে দুই তিনশ বছরের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এখানকার বাড়িঘরগুলো ঠিক বিগত যুগের মতো করে রেখে দেয়া হয়েছে যেন পর্যটকরা এখানে এসে অতীতের ঐতিহ্য উপভোগ করতে পারেন। এই গ্রামের ভবনগুলো তিনধরনের।

হান জাতির মানুষের কারো ইটের তৈরি বাড়ি, ই জাতির মানুষের বাড়ি যার আরেক নাম থুচাংফাং, আরেকটি হলো হান ও ই জাতির স্থাপত্য স্টাইলের সংমিশ্রণে তৈরি ভবন। ই জাতির মানুষের ঘরগুলোতে দারুণ সুন্দর ছবি আঁকা রয়েছে। এই গ্রামের ভবনগুলো কাঠের খোদাই কাজের জন্য বিখ্যাত। দরজা, জানালা, থোম, ছাদ ইত্যাদিতে কাঠের কাজ অসাধারণ সুন্দর।

গ্রামে প্রাচীন জমিদার বাড়িটির অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী ও কাঠের কাজ, আসবাবপত্র, বাগানের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। বিভিন্ন বাড়ির দরজায় শোভা পাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কবিতা লেখা লাল কাগজ বা কপলেট। সিলিং ও দেয়ালে রয়েছে চিত্রকর্ম। ইয়ুননানের বিশেষ গৃহনির্মাণ রীতি এখানে দেখা যায়।

চারদিকে দেয়াল ও একদিকে উঠান যুক্ত বাড়ি এবং তিনদিকে বাড়ি ও একদিকে  কারুকার্য করা দেয়াল, বাইরের প্রাঙ্গণ ও অন্দরমহলের উঠান ইত্যাদি স্টাইল ইয়ুননানের বিশেষ রীতি। ২০০৬ সাল থেকে গ্রামটি ঊনবিংশ শতকের স্থাপত্য রীতি সংরক্ষণের জন্য বিশ্বে খ্যাতি পেয়েছে।

এই গ্রামের বিপ্লবী ঐতিহ্যও রয়েছে। এখানে কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম যুগের অনেক বিপ্লবী মিটিং হয়েছে। পর্যটকরা এই ইতিহাস বিষয়েও জানতে পারেন। পার্বত্য এই গ্রামটির পাহাড়ি পথের দুপাশে রয়েছে ফুলের সারি। আলাদাভাবে ফুলের ও ফলের বাগানও আছে। প্রাচীন গাছ রয়েছে গ্রামে।

এখানে রেস্টুরেন্টে ঐতিহ্যবাহী খাবার খাওয়া যাবে। আর সুভ্যেনিরের দোকান তো আছেই। কাঠের কাজের নিদর্শন, ইটের কাজ, দেয়ালচিত্রগুলো অসাধারণ সৌন্দর্যমন্ডিত। ইয়ুননানের একটি বিখ্যাত পর্যটনস্থান হলো এই গ্রাম। এখানে ফিরে পাওয়া যায় অতীত দিনের জীবনযাপনের শান্ত আমেজ।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। সংস্কৃতির লীলাভূমি সিনচিয়াংয়ের তুরপান

 

মরুভূমির মাঝখানে একটি সবুজ মরুদ্যান। অনন্য এ শহরের নাম তুরপান। এটি চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের তুরপান অববাহিকায় অবস্থিত। মরুভূমি, পাহাড় ও প্রাচীন বসতবাড়ির ধ্বংসাবশেষ দ্বারা বেষ্টিত তুরপান। এই শহরটি যে অঞ্চলে অবস্থিত তাকে বলা হয় ভ্যালি অফ উইন্ডস।

 

দুই হাজার বছর ধরে ক্লান্ত পথিকদের চোখের সামনে তুরপান শহর গড়ে উঠেছে। এটি শুধুমাত্র গ্রেট সিল্ক রোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল না, তবে প্রাচীন কাফেলা রুটের উত্তর শাখার একটি কৌশলগত জায়গাও ছিল।

সুস্বাদু ফলের জন্য বিখ্যাত তুরপান শহর। ফলের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক নিদর্শনসমূহের জন্য  সমাদৃত এই শহর। এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে শহরটি এগিয়ে যাচ্ছে পর্যটন শিল্পেও।

 

এ শহরেরই সুপরিচিত থুইয়ুকোও গ্রাম। এখানকার ফ্লেম মাউনটেন বা আগুন পাহাড় বিশেষভাবে বিখ্যাত। চীনা চিরায়ত সাহিত্য ‘পশ্চিমের দিকে যাত্রা’ (জার্নি টু দ্য ওয়েস্ট) লেখায় উল্লেখ আছে এই আগুন পাহাড়ের ।

 

আগুন পাহাড়ের খুব কাছেই কাছেই রয়েছে থাউজেন্ড বুদ্ধ কেভ বা হাজার বুদ্ধের গুহা। চীনের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় আছে ১৭০০ বছর আগে নির্মিত গুহা ভাস্কর্য। এখানে অবস্থান করছে মুসলিম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতি পাশাপাশি। তুরপানের সংগীত, শিল্পকলা, কারুশিল্পের রয়েছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য।

 

 

স্থানীয়দের কাছে"ফায়ার ল্যান্ড" নামেই পরিচিত এই শহর।  এটি চীনের সবচেয়ে উষ্ণতম শহর বিশ্বের অন্যতম শুষ্কতম স্থান। গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা থাকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  তাই এই এলাকায় ভোরের দিকে ঘুরতে আসেন পর্যটকরা। 

এই সাংস্কৃতিক সম্পদের আকর্ষণে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসেন এখানে। থুইয়ুকোও গ্রামের একজন বাসিন্দা আদালত সাফরি বলেন, এখানকার দর্শনীয় স্থান দেখতে ও ফল কিনতে অনেক পর্যটক আসেন।

 

 

এই শহরে তাজা ফলের পাশাপাশি আছে  নানা শুকনো ফল।  বিভিন্ন রকম বাদাম, কিসমিস, খুবানি, আখরোট প্রভৃতি কিনতে আসেন পর্যটকরা। পাশাপাশি এখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আকর্ষণেও আসেন তারা। তুরপান তাদের ঐতিহাসিক   নিদর্শনগুলোকে রক্ষার মাধ্যমে পর্‍্যটন শিল্পকে জাগিয়ে তুলেছে।

 

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী