জুলাই ১৭: রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত এক বছর ধরে চলছে। কিন্তু, সে সংঘাতের অবসান চাওয়া তো দূরের কথা, সংঘাত যাতে জিইয়ে থাকে, তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রশ্ন হচ্ছে: কেন?
যুক্তরাষ্ট্রের ও'কিফ মিডিয়া গ্রুপ সম্প্রতি একটি অঘোষিত সাক্ষাত্কারের ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে ইউএস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট জায়ান্ট ব্ল্যাকরকের একজন কর্মচারী বলেছেন, "টাকার রাজনীতি" যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেয় এবং রাজনীতি আসলে ব্ল্যাকরকের মতো পুঁজি গোষ্ঠীর হাতে নিয়ন্ত্রিত হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত তাদের ব্যবসার জন্য ভালো এবং তারা এর অবসান চায় না।
ব্ল্যাকরক কর্মচারী সার্জ ভালি বলেন: প্রেসিডেন্টকে নয়, বরং প্রেসিডেন্টের ‘ওয়ালেট’-কে নিয়ন্ত্রণ করাই লক্ষ্য। হেজ ফান্ড, ব্ল্যাকরক, ব্যাঙ্ক, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে; এরা রাজনীতিবিদদের অর্থ দেয়। আপনার অনেক টাকা আছে, আপনি রাজনীতিবিদদের অর্থ দেওয়া শুরু করতে পারেন। স্পষ্টতই, আমাদের সিস্টেমটি এরকম। আপনার যদি ১০ হাজার মার্কিন ডলার থাকে, তাহলে আপনি একজন সিনেটরের সমর্থন কিনতে পারেন। নির্বাচনে কে জিতলো তাতে কিছু যায় আসে না, বিজয়ী আমরাই।
ইউএস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট জায়ান্টের একজন কর্মীও জানিয়েছেন যে, যুদ্ধ ব্যবসার জন্য ভালো, যুদ্ধের অবসান তারা চান না।
রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত ‘সমর্থন’-এর পিছনে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে। ভালি বলেছেন, তারা রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের অবসান চান না, কারণ এই সংঘাত তাদের প্রচুর অর্থোপার্জনের সুযোগ এনে দিয়েছে।
সার্জ ভালি আরও বলেন: আন্তর্জাতিক শস্যবাজার ইউক্রেনের অর্থনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এর সাথে শুধু রুটির দামের ওঠানামা নির্ভর করে না, বরং সবকিছুর দামের ওপর এর প্রভাব পড়ে। আর পণ্যের দামে এই পরিবর্তন লাভের সুযোগ তৈরি করে। ইউক্রেনের সঙ্কট ব্যবসার জন্য ভালো এবং আমরা চাই না সংঘাতের অবসান ঘটুক। জাতি হিসেবে আমরা চাই না সংঘাতের অবসান হোক। সংঘাত যত দীর্ঘ হবে, রাশিয়া তত দুর্বল হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রয় ইউনিভার্সিটির ম্যানুয়েল জনসন সেন্টার ফর পলিটিক্যাল ইকোনমি-এর নির্বাহী পরিচালক অ্যালান মেন্ডেনহল বলেন, ব্ল্যাকরকের কিছু প্রাক্তন কর্মচারী কোম্পানি ছেড়ে সরকারি দপ্তরে যোগ দেন এবং সেখান থেকে ফেরার পর কোম্পানিতে পুনরায় নিয়োগ পান। এইভাবে ব্ল্যাকরক মার্কিন সরকারের ওপর প্রভাব ফেলে।
মিডিয়া এক্সপোজারের ব্যাপারে ব্ল্যাকরকের কোনো আগ্রহ নেই। কিছু আমেরিকান রাজনীতিবিদরা বিশ্বাস করেন যে, ভালি যা বলেছেন তা সত্য, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এমনই। রাশিয়াকে ক্রমাগত দুর্বল করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য। যতদিন যুদ্ধের শিখা জ্বলতে থাকবে, রাশিয়াকে তার নিজের নিরাপত্তার প্রয়োজনে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রচুর সম্পদ বিনিয়োগ করতে হবে। এইভাবে, এটি কেবল রাশিয়ার জাতীয় শক্তিকেই দুর্বল করবে না, বরং রাশিয়ায় রাজনৈতিক সংকটও সৃষ্টি করতে পারে।
একই সময়ে, যতদিন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে থাকবে, শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপীয় নিরাপত্তাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রিত ভারসাম্য বজায় রাখা যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে সহজে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে।
যতক্ষণ যুদ্ধ চলতে থাকবে, যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানিসম্পদের চ্যানেলগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং ইউরোপকে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন থেকে দূরে রাখতে পারবে। নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে হামলা এ কারণেই হয়েছে।
শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর সামরিকীকরণকেও উন্নত করেছে, ইউরোপকে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষের একটি ক্ষেত্রে পরিণত করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, উপরে উল্লিখিত কারণগুলো ওপেন সিক্রেট। রাশিয়া এবং ইউরোপীয় দেশগুলো ইতোমধ্যেই এ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে। ইনভেন্টরি পরিষ্কার করার সময়, পুরানো অস্ত্র ও সরঞ্জামগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য পাঠানো হয় এবং অন্যদিকে, তারা নতুন উন্নত অস্ত্র উত্পাদন করতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রকৃতপক্ষে ব্যাপক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উত্পাদনের জন্য ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। (জিনিয়া/আলিম/শুয়েই)