বিজ্ঞানবিশ্ব ২৭তম পর্ব
2023-07-17 17:01:54

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

২৭তম পর্বে যা থাকছে:

* অঙ্গহীন মানুষকে নতুন জীবন দিচ্ছে ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস

* বেইজিংয়ের রাস্তায় নামতে যাচ্ছে ভাড়ায় চালিত চালকবিহীন গাড়ি

* দর্শকের পছন্দ বুঝতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার   

 

অঙ্গহীন মানুষকে নতুন জীবন দিচ্ছে ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস

 

আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন অঙ্গপ্রত্যঙ্গহীন মানুষও আবার ফিরে আসছে স্বাভাবিক জীবনে। আমেরিকা-ভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি ব্রেইনকো ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস নামক এক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আধুনিক বুদ্ধিমান কৃত্রিম হাত বানাতে সফল হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রযুক্তিকে ২০১৯ সালের শীর্ষ ১০০টি আবিষ্কারের একটি বলে আখ্যায়িত করে টাইম ম্যাগাজিন।

ব্রেইনকো কোম্পানির একজন কর্মী হলেন চৌ চিয়ান। তার একটি হাত নেই। তবে ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেসচালিত বুদ্ধিমান হাত ব্যবহার করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমার যখন ১২ বছর বয়স তখন আমি আঘাতপ্রাপ্ত হই এবং আমার হাতটা কেটে ফেলতে হয়। গত বছর আমার হাতে এই আধুনিক প্রস্থেটিক হাটটা লাগানো হয়।”

ব্রেইনকো কোম্পানির জ্যেষ্ঠ ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিস হে বলেন, ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি আসলে কারও হাত না থাকলেও সেই হাতের প্রতি মস্তিষ্কের সিগনাল ধরতে পারে এবং তা কাজে লাগিয়ে প্রস্থেটিক হাতকে নির্দেশনা দিতে পারে।

তিনি বলেন, “ডিভাইসটি ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে কাজ করে। এই ডিভাইসটি পেশির নড়াচড়া থেকে উৎপন্ন বৈদ্যুতিক সিগনাল ধরতে সক্ষম। সেই সিগনাল কাজে লাগিয়েই প্রস্থেটিক হাতটি চালিত হয়। ২০১৯ সালে টাইম ম্যাগাজিন এটিকে বছরের শীর্ষ ১০০টি আবিষ্কারের একটি বলে আখ্যায়িত করেছিলো।”

স্বাভাবিক মানুষদের ব্যবহারের জন্য এই বুদ্ধিমান প্রস্থেটিক হাতের আরেকটি প্রোটোটাইপ রয়েছে। এটি ব্যবহার করতে ব্যবহারকারীকে হাতে শুধুমাত্র একটি ডিজিটাল ব্যান্ড পরতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে ব্যবহারকারী হাত নড়ানোর কথা চিন্তা করলেই সেই অনুযায়ী হাত নাড়াতে পারে বুদ্ধিমান প্রস্থেটিক হাত।

নিস হে আরও বলেন, পরবর্তী-প্রজন্মের কৃত্রিম হাতে সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়ার অনুভূতিও অন্তর্ভুক্ত হবে।

“অঙ্গপ্রত্যঙ্গহীন মানুষদের সত্যিকার হাতের অনুভূতি দিতে নতুন প্রজন্মের প্রস্থেটিক হাতগুলোতে সংবেদনশীলতাও যুক্ত হবে বলে আমার বিশ্বাস। নতুন প্রজন্মের হাতগুলো যা স্পর্শ করবে তার টেক্সচার বুঝতে পারবে। পাশাপাশি তাপমাত্রার অনুভূতিও থাকবে, যাতে করে ব্যবহারকারীর মনে হয় এটিই তার সত্যিকার হাত,” বলেন নিস।   

ব্রেইনকো কোম্পানি ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস-ভিত্তিক পরিধানযোগ্য ডিভাইসও তৈরি করেছে। এই ডিভাইস মানবশরীরের জৈব সংকেত ধরতে পারে এবং সেটিকে মেশিন কমান্ডে রূপান্তরিত করতে পারে।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

বেইজিংয়ের রাস্তায় নামতে যাচ্ছে ভাড়ায় চালিত চালকবিহীন গাড়ি

 

চীনে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে চালকবিহীন গাড়ি। এতদিন ব্যক্তিগত পর্যায়ে গাড়িগুলো সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। অনলাইনে গাড়ি ডেকে নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে চীনের পরিবহন খাতে বড় পরিবর্তন আসবে।

প্রযুক্তিখাতে অন্যতম বড় আবিষ্কার চালকবিহীন গাড়ি। অর্থাৎ গাড়ি চলবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। কোন জায়গায় যেতে চান তার নির্দেশনা দিলে গাড়ি নিজে থেকেই গন্তব্যে পৌঁছে দেবে আপনাকে।

ড্রাইভার ছাড়া গাড়ির চলাচলের বিষয়টি নিয়ে শুরুতে সংশয় থাকলেও কয়েকদিন চলার পর তা সবার মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন প্রযুক্তির এই নতুন আবিষ্কারে।

সম্প্রতি বেইজিংয়ের উচ্চ পর্যায়ের ড্রাইভিং ডেমোনেস্ট্রেশন জোন চালকহীন গাড়ি ভাড়ায় চলাচলের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগিরই শুরু হবে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম। গাড়িগুলো রাস্তায় নামানোর জন্য বিভিন্ন কোম্পানিকে প্রস্তাবনা জমা দিতে বলেছে ড্রাইভিং ডেমোনেস্ট্রেশন জোন। এজন্য যাত্রীর নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এতদিন চালকহীন গাড়িগুলো রাস্তায় চলেছে একরকম পরীক্ষামূলকভাবে। সব ধরনের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল পাওয়ায় সবার জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে গাড়িগুলো। চীনের প্রযুক্তি খাতের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান পাইতু ও স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান পনি.এআই চালকহীন গাড়ি পরিচালনা করার জন্য এরই মধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। তবে আপাতত ৬০ বর্গ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে এই সেবা দিতে পারবে প্রতিষ্ঠানগুলো।

বেইজিংয়ের উচ্চ পর্যায়ের ড্রাইভিং ডেমোনেস্ট্রেশন জোন ৫০০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে গাড়িগুলোকে পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে।

প্রকল্পের নির্বাহী উপ-পরিচালক সু হংওয়েই বলেন, “সব ধরনের প্রাথমিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট এসেছে। এর মাধ্যমে চালকহীন যানবাহনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে।”

চীনের শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের উপমন্ত্রী সিন কুওপিন একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ট্যাক্সি ও বাসসহ বুদ্ধিমান যানবাহন পরীক্ষার ১৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।

সরকারি হিসাব বলছে, বেইজিংয়ে গেল চার মাসে ১১৬টি চালকহীন গাড়ি পরীক্ষামূলক চলাচল করেছে; সম্পন্ন করেছে প্রায় দেড় মিলিয়ন ট্রিপ। সব মিলিয়ে ২ মিলিয়ন কিলোমিটার চলাচল করেছে এই চালকহীন গাড়িগুলো। এসব গাড়িতে যারা চলাচল করেছেন তাদের ৯৫ ভাগেরও বেশি অনলাইন রেটিংয়ে ভালো মার্কস দিয়েছেন।

 

|| প্রতিবেদন: এইচ আর এস অভি

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

দর্শকের পছন্দ বুঝতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার  

 

বিনোদন জগতেও এখন মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে কাজ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় আয়োজন করা হচ্ছে একের পর এক কনসার্ট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসছে সংগীতেও। শ্রোতারা কি ধরনের সংগীত পছন্দ করেন এ সম্পর্কে মিউজিশিয়ানদের ধারণা দিচ্ছে  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত বিষয়গুলোর অন্যতম একটি হলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিশ্বের সামগ্রিক গতিপ্রকৃতি ও মানুষের চিন্তাভাবনায় আমূল পরিবর্তন এনেছে অত্যাধুনিক এ প্রযুক্তি। আইটি কোম্পানিগুলো আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করলেও বর্তমানে বড় পরিসরে বিভিন্ন খাতে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।

আর এ প্রযুক্তি খাতে নিত্যনতুন আবিষ্কার নিয়ে হাজির হয় চীন। এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি কনসার্ট আয়োজন করে চীনের "সেন্ট্রাল কনজারভেটরি অব মিউজিক"- যেখানে দর্শকের চাহিদা বুঝে সংগীত পরিবেশনা করে শিল্পীরা। আর এ চাহিদা বোঝার জন্য ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। শিল্পীদের এমন পরিবেশনা মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন মঞ্চের সামনে থাকা শ্রোতারা।

কনসার্টটিতে ডিজিটাল মিউজিক এবং ভিজ্যুয়াল কনসেপ্ট একত্রিত করা হয়, যা ঐতিহ্যবাহী কনসার্টের অভিজ্ঞতাকে অন্যমাত্রায় নিয়ে গেছে।

সেন্ট্রাল কনজারভেটরি অব মিউজিকের নির্বাহী পরিচালক লি সিয়াওপিং বলেন সেন্ট্রাল কনজারভেটরি অব মিউজিকের জগতে ইলেকট্রনিক মিউজিকের ত্রিশ বছরের ইতিহাস রয়েছে।

এআই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে ইলেকট্রনিক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। আমরা এখন নতুন শব্দ তৈরি করতে পারি এবং উদ্ভাবনী কৌশলের মাধ্যমে আমাদের আবেগ প্রকাশ করতে পারি।

সংগীত নির্মাতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে রিয়েল-টাইমের ডেটা বিশ্লেষণ করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এতে করে সেই সময়ে দর্শকদের মনোভাব বোঝা যায় এবং সেই অনুযায়ী সংগীতশিল্পীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

ওভার দ্য রেনবোর সুরকার ছ্যং ইউয়ান বলেন, “মঞ্চে, পারফর্মাররা যখন গিটার বাজায়, আমি শ্রোতাদের ব্রেনওয়েভ সনাক্ত করতে পারে এমন একটি ডিভাইস নিয়ে বসে থাকি। শ্রোতারা কীভাবে সংগীত শুনছে সেটি লক্ষ্য করি। ডিভাইস থেকে পা্ওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা পরে কোন গানটি বাজাবো সেই সিদ্ধান্ত নেই।”

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমন্বয় করে সংগীতশিল্পীদের আয়োজন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনেন দর্শকরা। ভবিষ্যতের আয়োজনগুলো আরো বেশি মানুষকে আকর্ষণ করবে বলে প্রত্যাশা করেন কনসার্ট আয়োজকরা।

 

|| প্রতিবেদন: নাজমুল হক রাইয়ান

|| সম্পাদনা: শিয়াবুর রহমান

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা- শিয়াবুর রহমান

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী