চলতি বাণিজ্যের ২৬তম পর্বে থাকছে:
১. চীনে তাপদাহ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে রমরমা পর্যটন ও ব্যবসা
২. বতসোয়ানায় ড্রেজিং প্রকল্প হস্তান্তর করল চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
৩. চীনে সুস্বাদু খাবারের জমজমাট ব্যবসা করছে ফরাসী কোম্পানি লেসাফ্রি
চীনে তাপদাহ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে রমরমা পর্যটন ও ব্যবসা
সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের বিভিন্ন প্রদেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। এরইমধ্যে আবার শুরু হয়েছে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। বন্ধু স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে একটু আরামের খোজে আর অবসর যাপন করতে মানুষ ছুটছে পার্ক, রেস্টুরেন্ট, রিসোর্টে। ছুটি পেয়ে দল বেধে অনেকে ছুটছেন বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। কেউ কেউ আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিংমলে ঢু মেরে সেরে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা। ফলে এই গরম আর ছুটিই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে চীনের অর্থনীতিতে।
খাঁ খাঁ রোদে পুড়ছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর আর আশপাশের পরিবেশ। তীব্র গরমে মানুষের যেন নাভিশ্বাস। ফুটপাত, পার্ক কিংবা পাড়ার গলি, কোথায় স্বস্তি মিলছে না।
চীনের বিভিন্ন প্রদেশে শুরু হওয়া তাপদাহে মানুষের এমন অস্বস্তি। বিশেষ করে পূর্ব ও উত্তর চীনের শানতোং, আনহুই প্রদেশে তাপমাত্রা রেকর্ড ছুঁয়েছে। বাদ যায়নি রাজধানী বেইজিংও। এসব এলাকায় তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ফলে ব্যহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কোন কোন এলাকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জারি করেছে সতর্কতামূলক অরেঞ্জ অ্যালার্ট।
তবে এই গরমে হা হুতাশ করার অবস্থায় নেই চীনের সাধারণ মানুষ। বরং স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে গ্রীষ্মকালীন ছুটি উপভোগে নতুন নতুন পথ বের করেছেন তারা।
ছুটিতে চীনারা ছুটছেন বিভিন্ন জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোতে। এমনই একটি আকাঙ্ক্ষিত পর্যটন স্পট হয়ে উঠেছে মধ্যচীনের হুনান প্রদেশ। স্থানীয় দুই পর্যটক বলছিলেন এখানকার প্রাণ-প্রকৃতি, সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত আর সেখানকার শীতল-আরামদায়ক পরিবেশ নিজ এলাকার তীব্র গরম থেকে মুক্তির পথ বাতলে দিয়েছে।
“থিয়ানমেন পর্বতের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এই পর্বত দেখার পর আর কোন পর্বত দেখার মূলত প্রয়োজনই নেই। বিশেষ করে এই পর্বতের শীর্ষে যে ঠাণ্ডা তাপমাত্রা তা সত্যিই অসাধারণ ও ভীষণ আরামদায়ক।“
“এখানে এসে আমার সত্যিই দারুণ লাগছে। জায়গা অসাধারণ। বিশেষ করে সকাল বেলার আবহাওয়া আপনাকে কবি বানিয়ে দেবে। আমার কাছে এক স্বপ্নালোকের মতো মনে হয়।“
এখানকার পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীনের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গরমের কারণে গেল বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এমন পাহাড়ি এলাকায় আসছে। পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই মাসের শুরু থেকে প্রথম ১০ দিনে এখানকার ছ্যাংচিয়াচিয়ে ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্কে পর্যটকের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। থিয়ানমেন মাউন্টেইন পর্যটন এলাকার উপ-ব্যবস্থাপক তিং ইয়ুনচুয়ান জানান, অতিরিক্ত সংখ্যক পর্যটকের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।
“এই গ্রীষ্মে প্রতিদিনের গড় পর্যটকের সংখ্যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় বলা যায় ১৭৫ শতাংশ বেশি। আমরা পাহাড়ের উপর দিয়ে ৩টি কেবলওয়ে লাইন নির্মাণ করেছি। ব্যবস্থাপনা সুন্দর করার জন্য কাগজবিহীন স্মার্ট এন্ট্রির ব্যবস্থা করেছি। আবার অগ্রীম টিকিট কাটার সুযোগও আছে। এসব পদক্ষেপ পর্যটকদেরও স্বস্তি দিচ্ছে।“
এদিকে গরম থেকে বাঁচতে দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের মানুষ দলে দলে ছুটছে শপিংমলে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় কিছুটা আরাম করা আবার একইসঙ্গে মিলছে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নেওয়ার সুযোগ। ফলে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের দেখা পাচ্ছে এখানকার বিপতিবিতানগুলো। কোন কোন শপিংমলে আয়োজন করা হয়েছে নানা বিনোদনের। কুয়াংতোং শপিংমলের সহকারী ব্যবস্থাপন হিসেবে দায়িত্বপালন করা তেং লু জানান, এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে চাঙ্গা হয়েছে এখানকার অর্থনীতি।
“যেহেতু গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয়েছে তাই সিনেমা দেখা ও রেস্টুরেন্টে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমাদের এখানে শপিংয়ে আসলে আমরা একটি করে কুপন দিচ্ছি আর বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতানুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছি।“
শপিং মলের বাইরেও মানুষ সময় কাটানোর জন্য বেছে নিচ্ছে কফিশপ, বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করারা মতো বিষয়। কুয়াংতোং প্রদেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে বর্তমান সময়ে শপিংমল, রেস্টুরেন্ট কিংবা কফিশপের মতো জায়গাগুলোতে গ্রাহের ভিড় স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়েছে।
ভিনদেশে চীন:
বতসোয়ানায় ড্রেজিং প্রকল্প হস্তান্তর করল চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
চীন আন্তর্জাতিক বেতার: আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানা।এখানকার রাজধানীতে বর্ষাকাল আসলেই বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ঘাট ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থায় দেখা যায় বেহাল দশা। তবে এই বেহাল দশা থেকে এবার মুক্তি মেলবে দেশটির।
সম্প্রতি চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হস্তান্তর করা ড্রেজিং প্রকল্পের কল্যাণে এই সুবিধা পাবে রাজধানীবাসী। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী শুরু হয় এই ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ। আর গেল সপ্তাহেই বতসোয়ানাযর গ্যাবোরোন সিটি কাউন্সিলের কাছে সেগোডিটশেন ড্রেজিং প্রকল্প হস্তান্তর করে চীনা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবেই কাজটি পরিচালিত হয় বলে জানান গ্যাবোরোনের মেয়র অস্টিন আব্রাহাম।
তিনি বলেন "চীনা ঠিকাদারদের দ্বারা এই ভাল কাজটি গ্রহণ করা সত্যিই আনন্দ এবং সম্মানের বিষয়," ।
এক মিটার গভীর এই সেগোডিটশেন সেতু চ্যানেলটির বর্জ্য এবং পলি অপসারণের ফলে পরের দুই বছর স্বাভাবিক হবে পানি প্রবাহ।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা - সাজিদ রাজু
কোম্পানি প্রোফাইল:
চীনে সুস্বাদু খাবারের জমজমাট ব্যবসা করছে ফরাসী কোম্পানি লেসাফ্রি
চীন আন্তর্জাতিক বেতার: সুস্বাদু খাবার তৈরির জন্য বিশ্বব্যাপী বেশ ভালো কদর রয়েছে ফরাসী কোম্পানি লেসাফ্রির। প্রতিষ্ঠানটি চীনের সঙ্গে যৌথভাবে খাবার তৈরি করছে, যার মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে বিনিময় হচ্ছে খাদ্য সংস্কৃতি। চীনে ব্যবসার জন্য অনুকূল পরিবেশ পেয়ে নিজের মুগ্ধতার কথাও জানিয়েছেন লেসাফ্রির কর্মকর্তারা।
খাবারের প্রতি চীনের মানুষের বিশেষ আকর্ষণ থাকায় দেশটিতে বেশ ভালো ব্যবসা করছে ফরাসি কোম্পানী লেসাফ্রি। ব্যাপক চাহিদা থাকায় পর্যায়ক্রমে তাদের বিনিয়োগও বাড়িয়েছে।
১৯৯৯ সাল থেকে চীনে কাজ করে যাচ্ছে এই কোম্পানি। বর্তমানে খাবার বেক করার জন্য ছয়টি কারখানা রয়েছে চীনে এবং পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে শাখা উদ্বোধন করা হচ্ছে।
চীনে ব্যবসা পরিচালনায় এখন আগের চেয়ে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী লেসাফ্রির গ্রেটার চায়নার প্রেসিডেন্ট জেরোম ভ্যানচার।
তিনি বলেন, "চীনে উন্নতমানের গাঁজন প্রযুক্তি প্রবর্তন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে চীনের খাদ্য সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া চীনের বেকিং পদ্ধতি সম্পর্কেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জানতে পারছেন।“
বিদেশী বিনিয়োগের জন্য চীন দারুণ এক জায়গা উল্লেখ করে ভ্যানচার বলেন, “লেসাফ্রি কোম্পানি তাদের কারখানা সম্প্রসারণ, উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রকল্পগুলো বিকাশের জন্য আন্তর্জাতিক আমদানি এক্সপোতে চীন সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ব্যবসার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে চীন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়।“
বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্যাক্স নীতিসহ অন্যান্য নিয়ম-কানুন আরো সহজ করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে চীন সরকার, যা বিনিয়োগ বাড়াতে সহযোগিতার করবে। সরকারের এই আন্তরিক মনোভাব দেখে মুগ্ধ ভ্যানচার।
চায়না ডিজিটাল ইকো-সিস্টেম হলো অনলাইন ব্যবসার বিকাশে দারুণ একটি সুযোগ যা কোম্পানিকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেয়া ও ব্যবসার প্রসারে ভালো কাজ করে। লেসাফ্রি চীনের সুপরিচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে লাইভস্ট্রিম ও বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
ভ্যানচার বলেন, চীনের মানুষের জন্য ব্যক্তিক্রমী কিছু রেসিপি তৈরি করা হয়, যা প্রায় সময় পছন্দ করেন তারা। এ ধরনের খাবার তৈরিতে উপদানগুলো স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়।
শেফ তৈরি করতেও কাজ করছে ফরাসী প্রতিষ্ঠান লেসাফ্রি। আগ্রহী চীনা মানুষদের রান্নার উপর ভকেশনাল ট্রেনিং দেয়া হয়। দক্ষ হওয়ার পর বেশ ভালো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয় তাদের।
প্রতিবেদন: হাবিবুর রহমান অভি
সম্পাদনা: সাজিদ রাজু