আকাশ ছুঁতে চাই ২৬
2023-07-13 19:29:12

১. অপেরা শিল্পী ইউয়ান ইউয়ান

২. ফান চিনশির তারা

৩. ঐতিহ্যের ধারক কারুশিল্পী পালিদান মেমেত

 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

অপেরা শিল্পী ইউয়ান ইউয়ান

চীনের ট্র্যাডিশনাল হুয়াংমেই অপেরার শিল্পী ইউয়ান ইউয়ান। এ বছর তিনি ১৯২০ এর দশকের মহান কমিউনিস্ট কর্মী লিন ইয়ুফেই এর ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করে জিতে নিয়েছেন সম্মাননা। চলুন শোনা যাক এই গুণী অভিনয়শিল্পীর কথা

ইউয়ান ইউয়ান একজন সফল অপেরা শিল্পী। চীনের ট্র্যাডিশনাল হুয়াংমেই অপেরার একজন তারকা শিল্পী তিনি। এ বছর পেয়েছেন প্লাম পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড। এটি ঐতিহ্যবাহী চীনা থিয়েটার শিল্পের সর্বোচ্চ সম্মাননা।

এতদিন হুয়া্ংমেই অপেরা শুধু মাত্র ক্লাসিক কাহিনীগুলো মঞ্চে আনলেও এখন তাদের পরিবেশনায় যোগ হয়েছে নতুনমাত্রা। আর নতুন ধরনের এই পরিবেশনায় নতুন ধরনের অভিনয় শৈলী প্রদর্শন করে দারুণ খ্যাতি পেয়েছেন শিল্পী ইউয়ান ইউয়ান। এই নতুন নাটকগুলো তাকে এনে দিয়েছে প্লাম পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড।

প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডে তিনি অভিনয় করেন কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো শিরোনামের সাড়া জাগানো নাটকে। এখানে ১৯২০ এর দশকে একজন আত্মত্যাগী তরুণ কমিউনিস্ট কর্মী লিন ইয়ুফেই এর ভূমিকায় অভিনয় করেন।

এই রোল করতে গিয়ে তাকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। গায়কী বদলাতে হয়।  কস্টিউমও হয় ট্র্যাডিশনাল অপেরার চেয়ে একদম ভিন্ন রকম। ১৯২০ এর দশকের আবহ তৈরির জন্য তার অভিনয় স্টাইলও আমূল পালটে ফেলতে হয়। বিপ্লবী থিমের মিউজিক এবং ট্র্যাডিশনাল অপেরার স্টাইল দুটোর সমন্বয় ঘটান তিনি।

এই নাটকের সাফল্য তাকে সম্মাননা এবং খ্যাতি দুটোই এনে দেয়। এরপর তিনি আরেকটি নাটকে কমিউনিস্ট বিপ্লবী নারী হোং মেই চানের চরিত্রে অভিনয় করেন। হোং মেই চান শীর্ষক এই নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় ইউয়ানকে আরও বেশি সফলতা এনে দেয়।

এখন আনহুই হুয়াংমেই অপেরা সমসাময়িক বিষয়বস্তু নিয়ে নাটক তৈরি করছে। যেমন চীনের সামপ্রতিক গ্রাম পুনরুজ্জীবনের বিষয়টি মঞ্চে তুলে আনা হচ্ছে।

ইউয়ান শুধু থিয়েটারেই অভিনয় করেন না, তিনি কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় কর্মীও। ২০২২ সালে ২০তম সিপিসি ন্যাশনাল কংগ্রেসে একজন ডেলিগেট হিসেবেও অংশ নেন তিনি।

এই নারী এখন কাজ করছেন সমাজে গ্রামীণ পুনরুজ্জীবনের ধারণা এবং মূল্যবোধকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা : রহমান

 

ফান চিনশির তারা

সম্প্রতি একজন চীনা নারী প্রত্নতাত্ত্বিকের নামে নামকরণ করা হয়েছে একটি গ্রহাণুর।  চীনের বিজ্ঞান একাডেমির পার্পল মাউন্টেন মানমন্দির-আবিষ্কৃত এই  গ্রহাণু আগে পরিচিত ছিল ৩৮১৩২৩ নামে। এখন এর নাম দেয়া হয়েছে ’ফান চিনশির তারা।  চলুন বিস্তারিত জেনে আসি প্রতিবেদনে।

৩৮১৩২৩ নামের গ্রহাণুর নাম এখন ফান চিনশির তারা। এই নামকরণ করা হয়েছে দেশটির খ্যাতিমান প্রত্নতাত্ত্বিক ফান চিনশির নামানুসারে। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিদ্যা ইউনিয়নের নামকরণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে সম্প্রতি এই নতুন নামকরণ করা হয়।

পঁচাশি বছর বয়সী প্রত্নতাত্ত্বিক ফান চিনশি কানসু প্রদেশের তুনহুয়াং একাডেমির ইমেরিটাস পরিচালক । ‘তুনহুয়াং কন্যা’ নামে খ্যাতি অর্জন করেছেন এই নারী।

তুনহুয়াং একাডেমিতে আয়োজিত নামকরণের অনুষ্ঠানে লস অ্যাঞ্জেলেসের গেটি কনজারভেশন ইনস্টিটিউটের সাবেক বিশেষজ্ঞ নেভিল অ্যাগনিউ চীনের মোগাও গ্রোটেতে ফানের সঙ্গে তার ও তার সহকর্মীদের কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন,"মোগাওয়ে তার (ফানের) আন্তরিক সেবার বিষয়টি বেঁচে থাকবে। আমরা তাকে সর্বান্তকরণে অভিনন্দন জানাই এই অনন্য ও দুর্দান্ত পুরষ্কারের জন্য। সেখানে তার নাম রয়েছে এবং সর্বদা থাকবে।"

ফানের ৬০ বছরের কাজের স্মরণে আয়োজন করা হয় একটি সিম্পোজিয়াম । পাশাপাশি একই দিনে স্থাপন করা হয় ফাউন্ডেশন।

ফান ১৯৬৩    সালে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক শেষ করেন। এরপর তুনহুয়াংয়ে শুরু করেন কাজ। গবেষণায় পার করেছেন তার কর্মজীবন। কয়েক দশক ধরে অন্বেষণ করেছেন প্রতিটি গুহা , প্রতিটি ম্যুরাল এবং মূর্তি ।  পাশাপাশি ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিও প্রত্যক্ষ করেছেন এই নারী প্রত্নতাত্ত্বিক।

ফান বলেন,  "আমি আশা করি যে নতুন প্রজন্ম আরও সচেতনভাবে নতুন সাংস্কৃতিক মিশনের দায়িত্ব পালন করবে এবং নতুন যুগে  ঐতিহ্যবাহী চীনা সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী, প্রচারক এবং উদ্ভাবক হবে,"

একাডেমির পরিচালক সু বোমিন বলেছেন, "চায়না দুনহুয়াং গ্রোটোস কনজারভেশন রিসার্চ ফাউন্ডেশনে ফান চিনশি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা একাডেমির ভবিষ্যত উন্নয়নের জন্য ফ্যানের প্রবল প্রত্যাশা এবং শুভকামনাকে সম্পূর্ণরূপে প্রদর্শন করে।"

১৯৯০ এর দশকে থেকে ফ্যান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার প্রচার করেছে। তিনি শুধু তহবিল সংগ্রহ করেননি, প্রতি বছর তার আয়ের একটি অংশ ফাউন্ডেশনে দান করেছেন। পাশাপাশি নিজের সামাজিক উন্নয়নে ব্যয়ের কথাও বলেন এই নারী।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

ঐতিহ্যের ধারক কারুশিল্পী পালিদান মেমেত

চীনের উইগুর জাতির একটি বিশেষ ঐতিহ্য ব্লক কাজের কাপড় তৈরি করা। এই ঐতিহ্যের ধারক উইগুর নারী পালিদান মেমেত সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন শুনবেন এখন।

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে বিভিন্ন রকম ঐতিহ্য। এর মধ্যে একটি ঐতিহ্য হলো উইগুরদের বিশেষধরনের ব্লকের কাজ করা কাপড়। এই ঐতিহ্যের ধারক মুসলিম নারী পালিদান মেমেত।

এই ব্লক কাপড় তৈরি করতে বিশেষ পদ্ধতির প্রয়োজন। সিনচিয়াংয়ের উইগুরদের  ঐতিহ্যবাহী নকশা খোদাই করে তৈরি হয় কাঠের ব্লক। সেই ব্লকে ব্রাশ করে লাগানো হয় ভেজিটেবল কালার। আখরোটের খোসা এবং ডালিমের রস মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই রং।

উইগুর নারী পালিদান মেমেত জানান  এই রং যেমন পরিবেশ বান্ধব তেমনি টেকসই। এই ভেজিটেবল ডাই তৈরি করেন মেমেত নিজেই। ঘরে এই রং তৈরির কৌশলও অবৈষয়িক ঐতিহ্যের একটি অংশ। হামানদিস্তার মতো ছোট একটি পাত্রে আখরোটের খোসা গুঁড়া করে মিহি করা হয়। এরপর ডালিমের রস মিশানো হয়। সেটি মিশানোরও বিশেষ কৌশল আছে। তার সঙ্গে দেয়া হয় আরও কিছু উপাদান।

নীল একটি মিশ্রণ তৈরি হয়। এটি ব্রাশ দিয়ে লাগানো হয় ব্লকের উপর। মেমেত জানান, এই রং লাগানোর কৌশল আয়ত্ত্ব করতে হয় দীর্ঘ দিনের অনুশীলনে। কাপড়ের উপর চাপ দিয়ে ব্লক করারও কৌশল আলাদা। ঠিকমতো কাজটি না করতে পারলে নকশা ঝাপসা লাগবে এবং সূক্ষ্মকাজগুলো ফুটবে না।

ভেজিটেবল ডাইংয়ের বিশেষ নকশায় এই কাপড় তৈরি করে নিজের দোকানে বিক্রি করেন মেমেত। এই কাপড়ের তৈরি পোশাক, বেডকভার, হ্যাট, ব্যাগ ইত্যাদি নানা রকম সামগ্রী ক্রেতারা দারুণ পছন্দ করেন।

মেমেত শুধু নিজেই এই ঐতিহ্যবাহী উইগুর কারুশিল্পের ধারক নন। এটি তিনি শিখাচ্ছেন তার মেয়েকেও। তার মেয়ের বয়স ১২ বছর। সে এখন থেকেই এই শিল্পে দক্ষ হয়ে উঠছে। স্কুল থেকে ফিরে হোমওয়ার্ক শেষ করে সে মায়ের কাছে শিখছে এই শিল্প। মেমেত আশা করেন, তার মেয়েও একদিন হয়ে উঠবে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের ইনহেরিটর।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

কণ্ঠ: আবদুল্লাহ আল মামুন

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

 

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: নাজমুল হক রাইয়ান